নিউজিল্যান্ডের সুপরিচিত সাময়িকী দ্য ওয়েলিংটন ম্যাগাজিনে বাংলাদেশের পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) শামসুন্নাহারকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে শামসুন্নাহারকে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ও রুচিশীল পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
‘যেসব মানুষ জাতিকে আলোকিত করেছেন’ শিরোনামে দ্য ওয়েলিংটন ম্যাগাজিনের বিশেষ সংখ্যায় তাকে নিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। ওই সংখ্যায় নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলাদেশের পুলিশ কর্মকর্তা শেখ আবুল বাশারসহ বেশ কয়েকজনকে নিয়ে প্রতিবেদন লেখা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি বাংলাদেশে কোনো পুলিশ প্যারেডে নেতৃত্বদানকারী প্রথম নারী কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (এআইজি), বাংলাদেশ পদে কর্মরত।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ফরিদপুরে জন্মগ্রহণকারী শামসুন্নাহার ১৯৯৩ সালে ১৬ বছর বয়সে যশোরে বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে যান। সেই থেকে তাঁর স্বপ্ন, তিনি দেশমাতৃকার প্রতিরক্ষায় ভূমিকা রাখবেন। সে সময় তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট করপসের ক্যাডেট ছিলেন। কিন্তু শামসুন্নাহারের জন্য সামরিক বাহিনীর সদস্য হওয়া খুব একটা সহজ ছিল না। কারণ, তখনো সামরিক বাহিনীতে নারী সদস্য নিয়োগ সেভাবে শুরু হয়নি। একপর্যায়ে জাতিকে সেবা দিতে শামসুন্নাহার বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
শামসুন্নাহার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে সাতবার জাতিসংঘ শান্তি পদক অর্জন করেছেন। নিজ দেশে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম)। দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বাংলাদেশ পুলিশ মেডেলও (বিপিএম) অর্জন করেছেন। এছাড়া তিনি উইমেন পুলিশ মেডেল ফর ব্রেভ উইমেন পুলিশ অফিসার এবং দুটি আইজি ব্যাজও অর্জন করেছেন। তাঁর বাবা শামসুল হক ভোলা মাস্টার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবী। তাঁর মা আমিনা বেগম পেয়েছেন ‘রত্নগর্ভা’ পদক।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে শামসুন্নাহার ২০তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রথম চেষ্টায়ই তিনি বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তাঁর প্রথম পছন্দ হিসেবে নিয়োগ পান বাংলাদেশ পুলিশেই। এরপর দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকেন শামসুন্নাহার। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি ২০১৬ ও ২০১৭ সালে পরপর দুই বছর পুলিশের বার্ষিক প্যারেডে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রথম নারী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে তিনি সুপারিনটেনডেন্ট (এসপি) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এসপি হিসেবে তাঁর প্রথম পদায়ন হয়েছিল চাঁদপুর জেলায়।
গাজীপুরের এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় শামসুন্নাহার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সব শর্তই আমি পূরণ করেছি। আমার নিজের প্রতি আস্থা আছে এবং এ কারণেই আজ আমি এখানে।’
শামসুন্নাহারের পাশাপাশি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে আরেক পুলিশ কর্মকর্তা-ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের শাহবাগ থানার টহল পুলিশ পরিদর্শক শেখ আবুল বাশারের। দ্য ওয়েলিংটন ম্যাগাজিনে আবুল বাশার সম্পর্কে বলা হয়েছে, শেখ আবুল বাশার দায়িত্বশীলতা ও মানবিকতার প্রতীক।
পুলিশ পরিদর্শক শেখ আবুল বাশার সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিদিনই মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচিসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সবকিছুই পর্যপবেক্ষণের দায়িত্বে থাকেন পুলিশ পরিদর্শক শেখ আবুল বাশার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হিসেবে তাকে একদিকে যেমন শান্তি ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হয়, একইভাবে তাকে জনগণের অধিকারও নিশ্চিত করতে হয়, যাতে তারা শান্তি ও শৃঙ্খলার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত নিজেদের বক্তব্য পৌঁছাতে পারে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, শেখ আবুল বাশার ১৯৬৪ সালে গোপালগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শেখ আবুল কাশেমও পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৮৯ সালে স্নাতক সম্পন্ন করে শেখ আবুল বাশার পুলিশে সার্জেন্ট পদে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের শাহবাগ থানার টহল পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক