আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ছিলেন অসম্ভব রকমের অসাম্প্রদায়িক মানুষ। তিনি গণতন্ত্রমনা সাহসী মানুষ ছিলেন। সত্যকথা নিজস্ব ভঙ্গীতে বলে দিতে দ্বিধা করতেন না। গাফ্ফার চৌধুরীর লেখনীতে বাঙালির জাগরণী শক্তি ছিল।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গীতিকার আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর প্রয়াণে স্মরণ সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। আজ রবিবার বিকালে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের অডিটোরিয়ামে এই স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, গাফ্ফার চৌধুরী একুশের অমর গানের পর যদি একটি অক্ষরও না লিখতেন, তাহলেও তাকে এমনভাবেই আমরা স্মরণ করতাম। যখন তিনি গানটি লিখেছেন তখন তিনি বয়সে খুবই তরুণ। একজন শহীদের খুলি উড়ে যাওয়া রক্তাক্ত শরীর দেখে তিনি গানটি লিখেছেন। কেউ যখন কোনো ভাষা বুঝে না সেও গানটি শুনলে তার আবেদন বোঝে, শুনে উদ্দীপ্ত হয়। যে গানটি শুধু বাংলা ভাষা নয়, সকল ভাষাভাষী মানুষের কাছে পরিচিত গান হয়ে উঠেছে। বাঙালির যতো স্বপ্ন, ত্যাগের ইতিহাস রয়েছে এবং ইতিহাসে যতোগুলো স্মারক রয়েছে এটি তার অন্যতম। এই গান শুনলেই স্বাধীকার আন্দোলন, ভাষা আন্দোলনের কথা চলে আসে। এই গানের মানে মাথা নত না করা।
গাফ্ফার চৌধুরী আমাদের সংগ্রামের অনুপ্রেরণার অন্যতম উৎস উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তাঁর অমর একুশের গানের সুরটা শুনলেই মানস পটে ভেসে আসে প্রভাত ফেরির কথা। এই গান বাংলা ভাষাভাষী সব মানুষকে এক মোহনায় এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। বাঙালির ভাষার জন্য যে আত্মত্যাগের ইতিহাস সেটি তুলে ধরে এই অমর গান। আমরা যারা দেশে থাকি তাদের চেয়েও বিদেশে থেকে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে আমরা একজন অভিভাবককে হারিয়েছি। যতোদিন বাঙালি থাকবে, বাংলা ভাষা থাকবে, আমাদের ইতিহাস থাকবে ততোদিন আমাদের একুশের অমর সংগীত হিসেবে বাঙালির অনুরেপ্ররণার অনন্য উৎস হিসেবে এই গান বেঁচে থাকবে। এই গানের রচয়িতাও বেঁচে থাকবেন।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, বাঙালি পরিবারে এমন কোনো সন্তান নেই যে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কী ভুলিতে পারি- এই লাইন বলেননি, ফুল হাতে প্রভাত ফেরিতে শহীদ মিনারে যাননি।
গাফ্ফার চৌধুরী স্মরণে উপাচার্য আরও বলেন, যখনই মৌলবাদীরা ছোবল মেরেছে তখনই তারা কলম ধরেছে। যখনই অপশক্তি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, সামরিক শাসনের যাঁতাকলে দেশ পড়েছে তখনই গাফ্ফার চৌধুরীরা কলম ধরেছে। সেই কলমের মধ্যে ভাইদের জাগিয়ে তোলার আহ্বান ছিল। আসুন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে সোনায় মুড়িয়ে গড়ে তুলি। সম্মানীত আলোচকের বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, বাঙালি জাতিসত্তার জাগানিয়া অমর একুশের গান রচনার মধ্যদিয়ে চির অমর হয়ে থাকবেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী।
স্মরণ সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার, অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন। স্মরণ সভায় বিশ্ববিদ্যালয় ডিনবৃন্দ, বিভিন্ন দপ্তরের বিভাগীয় প্রধান, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক