আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, ইতিহাসের মহানায়ককে সপরিবার হত্যা করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে বঙ্গবন্ধুর সাথে নারী, শিশু, নিকটাত্মীয়দেরও হত্যা করা হয়েছে। ক্ষমতা দখলের জন্য এ হত্যাকাণ্ড ছিল না। না হলে এতো নিষ্ঠুর হত্যা ঘটতো না। নির্বিচারে হত্যা করার লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। খুনিরা জানতো বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা করা গেলে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের ফেডারেল রাষ্ট্র করা সম্ভব হবে।
মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট হত্যাকাণ্ড একই যোগসূত্রে গাথা উল্লেখ করে হানিফ বলেন, সবকিছুর পেছেনে একটি সূত্র রয়েছে। একই কায়দায় দুইটি গণহত্যা করা হয়েছে। আর এসবের পেছনে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তার বংশধর তারেক রহমান জড়িত।
হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ এক এবং অবিচ্ছেদ শব্দ। স্বাধীনতার ইতিহাস লিখতে গেলে বঙ্গবন্ধুর নাম আসবে আবার বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে গেলে বঙ্গবন্ধুর নাম আসবে। বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে প্রতিটি ধাপে বঙ্গবন্ধু মূল ভূমিকায় ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছাড়া বাঙালির স্বাধীনতার সুযোগ ছিল না। পৃথিবীর অনেক দেশে ক্ষমতা দখলের জন্য রাষ্ট্রনায়ককে হত্যা করা হয়েছে কিন্তু তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করার নজির নেই।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপি নেতারা মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছেন। পলাতক খুনী তারেক রহমান বলছেন গ্রেনেড হামলার জন্য শেখ হাসিনা দায়ী। তার প্রশ্ন মুক্তাঙ্গনে আওয়ামী লীগের জনসভা ছিল, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কিভাবে গেল। তারেক এসব কোথায় পেল। খুনী, দুর্নীতিবাজ তারেকের মিথ্যাচার সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। আহম্মক ২১ আগস্টের পেপার পত্রিকা দেখেনি?
তিনি বলেন, বিএনপির খুনিরা মিথ্যাচার করে অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করছে। বিএনপির নির্লজ্জ, বেহায়া, আবাসিক নেতা রিজভী বলছে ২১ আগস্টের জন্য নাকি আওয়ামী লীগ দায়ী, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তো মারা যায়নি। তার মানে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মারা গেলে তারা খুশি হতো।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা খালেদা জিয়া, তারেক নেতৃত্বে হয়েছিল। তার প্রমাণ তারা রেখে গেছেন। তারা হামলার পর আলামত নষ্ট করে দিয়েছে। পুলিশ দিয়ে হামলাকারীদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল। হতাহতদের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হলে বিএনপির ডাক্তাররা বেরিয়ে গিয়েছিল। ওষুধের দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি দিয়ে পানি ছিটিয়ে মামলার আলামত ধ্বংস করে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, ২১ আগস্ট হামলার পর সংসদেও কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার মাইক বন্ধ করে দেয়া হয়ছিল। খালেদা জিয়া সংসদে দাঁড়িয়ে পিশাচিনীর মতো নিষ্ঠুর রসিকতা করে বক্তব্য দিতেও তার বিবেকে বাধেনি।
বিদেশিদের কাছে ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট হত্যাকারীদের দ্রুত ফিরিয়ে দেয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায় বিএনপি এড়াতে পারেনি। যেসব দেশে খুনীরা পলাতক কাছে তাদেরকে অনুরোধ খুনীদেরকে ফরিয়ে দিন। তাদের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে আমরা যাতে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করে পারি।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম এমপি বলেন, খুনি মোশতাকরা ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারলে মানুষের হৃদয় থেকে নাম মুছে ফেলতে পারবে। যে নেতার ডাকে ছাত্র, কৃষক-জনতা উজ্জ্বীবিত হয়ে তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল সে নেতার নাম মানুষের হৃদয় থেকে কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বীর কন্যা শেখ হাসিনা মেধা, যোগ্যতায় সারা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারেন। শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন বলে মানুষ উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আন্দোলন করতে শক্তি লাগে, বিএনপি সেই শক্তি নেই। আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। ষড়যন্ত্র মোলাবেলায় প্রয়োজনে দিনরাত রাজপথে থাকবো। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতে প্রধানমন্ত্রী হবেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে ঐক্যের জাতিকে বহুধা বিভক্ত করা হয়েছে। শেখ হাসিনা ফিরে আসার পর দেশ আলোকোজ্জ্বল ধারায় এসেছে, অন্ধকার দূরীভূত হয়েছে। তিনি সাহসের উপর ভর করে আমাদেরকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে মুক্ত করেছেন।
নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নিরন্তর যাত্রায় পাশে থাকলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমরা সমৃদ্ধির ধারায় এগিয়ে যাবো।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শ্রম ও জনশক্তি প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মাকসুদ কামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. স. ম. শামসুল আরেফিন, বাংলাদেশ বিমান লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত