সন্ত্রাস, নাশকতা করলে বিএনপিকে পাকিস্তানেই পালিয়ে যেতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ বিশ্বাস করে একাত্তরে যারা মানুষ হত্যা করেছিল তাদের দোসর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে দেশকে জঙ্গীবাদের চারণভূমি বানিয়ে দিবে। কিন্তু দেশের মানুষ তাদেরকে দেশ নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলতে দেবে না।’
৩০ অক্টোবর, রবিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত কৃষক সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি বাংলাদেশের মানুষকে বর্হিবিশ্বে ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে পরিচয় করিয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকতে বিএনপির কী অর্জন তা মানুষ জানে। ১৯৯৫ সালে কৃষকদের মূল দাবি ছিল সার। বিএনপি নেতাদের গোডাউন ভরা সার ছিল, কিন্তু কৃষক বাজারে সার পায়নি। কৃষকরা সারের দাবিতে গিয়েছিল আর আপনারা সারের বদলে তাদেরকে গুলি উপহার দিয়েছিলেন। ১৮ জন কৃষককে হত্যা করেছিলেন। কৃষি খাতকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর কৃষি খাতে বিপর্যয় দেশের মানুষ দেখেছে। ৪০ থেকে ৬০ লাখ মেট্রিকটন খাদ্য ঘাটতি ছিল। খাদ্য কেনা সম্ভব ছিল না, রিলিফ আনতে হতো। আপনাদের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে জাতির কপালে ‘ভিক্ষুকের জাতি’র কলঙ্ক লেগেছিল।’
হানিফ আরও বলেন, ‘২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ কোন অবস্থায় ছিল? বিএনপি নেতাদের স্মরণ করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, কোন কোন খাতে কি উন্নয়ন করেছেন? দয়া করে জানান, দেশবাসী জানুক। আমরা বহুবার জানতে চেয়েছি, বলতে পারেননি। আপনাদের সময়ে ৩১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ছিল। মানুষের ঘরে সংযোগ ছিল কিন্তু বিদ্যুৎ ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি সভা-সমাবেশ করে সরকারের বিরুদ্ধে বিষদগার করছে। দেশের সচেতন মানুষ অবাক হয়ে যায়। বিএনপি কী ধরনের মিথ্যাচারের লিপ্ত। দেশ নাকি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।’
বিএনপি সরকারের উন্নয়ন দেখে না উল্লেখ করে হানিফ বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বললেন- দেশের রিজার্ভ শেষ হয়ে যাচ্ছে, দেশ সংকটের মাঝে। দেশের রিজার্ভ বর্তমানে ৩৯ বিলিয়ন ডলার আছে। আমাদের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌছেছিল। আপনাদের সময়ে রিজার্ভ ৩ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার ছিল। তখন দেশ ধ্বংস হয়নি আর এখন ধ্বংস হচ্ছে। মিথ্যাচারের একটা সীমা থাকা দরকার। কিন্তু বিএনপির মাঝে সেই দেশপ্রেম নেই বলে মিথ্যাচার করে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।’
‘আওয়ামী লীগ নাকি এখন পুরনো অস্ত্র জঙ্গীবাদ নিয়ে কথা বলছে! যেটা ভোতা হয়ে গেছে কাজ করে না- বিএনপি নেতাদের এমন মন্তব্যের জবাবে হানিফ বলেন, আপনাদের সময়ে দেশের মানুষ জঙ্গীবাদের নমুনা দেখেছে- ৬৪টি ৫০০ স্থানে। দেশকে সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিলেন। বাংলা ভাই অস্ত্রসহ পুলিশ পাহারায় মিছিল করেছিল। সেই সময়ে বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে বলেছিল, দেশে ছোট-বড় ১২৫টি সংগঠন আছে। আর তারেক রহমান তাদের পৃষ্ঠপোষক। দেশের মানুষ কি এসব ভুলে গেছে?’
বিএনপি জঙ্গীসংগঠনগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘উগ্র জঙ্গীবাদী গোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদসহ অজস্র জঙ্গী সংগঠন আপনাদের ছত্রছায়ায় ছিল। পেটুয়া বাহিনী দিয়ে বারবার আক্রমণ করে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে পারেননি। পরে হাওয়া ভবনে জঙ্গীদের সাথে বসে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করেছিলেন। ১০ ট্রাক অস্ত্র চট্টগ্রামে ধরা পড়েছিল। এর বাইরে কত ট্রাক জঙ্গীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন, তা দেশের মানুষের কাছে অজানা রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গীবাদ দমন করে, নিক্রিয় করেছে। যার কারণে দেশের মানুষ শান্তিতে আছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির মূল মেরুদণ্ড ছিল কৃষি খাত। দেশের যতো রিসার্চ ইনস্টিটিউট, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে তার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দেশে যখন ৭ কোটি মানুষ ছিল তখনও খাদ্য সংকট ছিল। আজ দেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষ তিন বেলা ভাত খায়। সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের কারণে। কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভাবনীয় সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।’
কৃষক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার শাসনামলে বাংলার কৃষকরা সার চাইতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরেছিল। বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত করেছিল। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন। শেখ হাসিনার ম্যাজিকটা কী? ম্যাজিক হলো দেশের মানুষ, জনগণের প্রতি ভালোবাসা ও কৃষকের জন্য দরদ। যাদের জন্য বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা তাদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছেন।’
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি ও গাজীপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন মোল্লা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কৃষকলীগ সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল