‘আমি ক্যামনে এই যন্ত্রণা সহ্য করব। আমার এই সন্তান ছাড়া তো আর কেউ নাই। কষ্ট কইরা মানুষ করলাম, এখন কী পাইলাম, মানুষের হাতে গুলি খাইয়া আমার মানিকের মরতে হইল, কী দোষ ছিল ওর। মারলো ক্যান? কার কাছে বিচার দিমু?’ এমনই বিলাপ করছিলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াপুর ইউনিয়নের চরগোবিন্দপুর উত্তরকান্দি গ্রামের নাজমা বেগম। তার ছেলে নাজমুল হাসান (২১) গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। নাজমুলের পরিবার ঢাকার আফতাবনগরে ভাড়া থাকতেন। ওর মা নাজমা বনশ্রী এলাকার ফরাজী হাসপাতাল নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করতেন। অভাবের সংসারে এক বছর আগে মায়ের সঙ্গে একই হাসপাতালে চাকরি নেন। অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ালেখার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজ করতেন হাসপাতালে। ১৯ জুলাই শুক্রবার বাসা থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে কোমরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান নাজমুল। নাজমুলের পরিবার সূত্র জানায়, ওই দিন খাবার খেয়ে নাজমুল আফতাবনগর থেকে বনশ্রী ফরাজি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। এই হাসপাতালে পার্ট টাইম ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে কাজ করতেন তিনি। সংঘর্ষ এড়াতে গুদারাঘাট এলাকা দিয়ে বনশ্রীর দিকে যাচ্ছিলেন। গুদারাঘাটের বাঁশের সাঁকোতে ওঠার পরই গুলিবিদ্ধ হন তিনি। কয়েক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী নাজমুলকে গুদারাঘাট এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওই দিন সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে ওই দিন রাতেই মাদারীপুরে আনা হয়।
জানাজা শেষে নানা আবদুর রহমান মাতুব্বরের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহত নাজমুল কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার চাপাতলি এলাকার সৈয়দ আবুল কায়েসের ছেলে। তবে তিনি তার মায়ের সঙ্গে নানাবাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার চরগোবিন্দপুর উত্তরকান্দি গ্রামের মাতুব্বরবাড়ি থাকতেন। মাদারীপুরই ছিল নাজমুলের স্থায়ী ঠিকানা। নাজমুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মাতুব্বরবাড়ি জামে মসজিদের পাশে কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে নাজমুলকে। মা নাজমা বলেন, ‘আমার চোখের সামনে বাপজাপরে গুলি করে মারছে। আমার বাবায় তো দেশের কোনো ক্ষতি করে নাই। তাহলে ওরে কেন গুলিতে জীবন দিতে হইলো?’ নাজমা বলেন, বাপজান আমারে কইতো, ‘মা তোমার আর কষ্ট করতে হইবে না। আমি টাকা জমিয়ে বিদাশ জামু, আপু চাকরি করবো, তোমার আর কষ্ট থাকবো না। সরকারের কাছে একটা জিনিসই চাই, আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি হয় না।’ নাজমুলের বড় বোন তানজিলা বলেন, ‘আমার ভাইকে কেন গুলি করে মারা হলো, এর বিচার আমি আল্লাহ ছাড়া কার কাছে দিবো?’ খালাতো ভাই সুমন কাজী বলেন, ‘নাজমুল গত বছর ঢাকা ইমপিরিয়াল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়তো। পাশাপাশি নাজমুল একটি বেসরকারি হাসপাতালে পার্ট টাইম কাজ করে মাসে ১২ হাজার টাকা পেত।’