কখনও উড়ে আসছে চটুল বিশেষণ, কখনও বা শিস দিচ্ছে বখাটে ছেলের দল। আবার কখনও কাছাকাছি এসে কেউ শরীরে হাতে দেওয়ার চেষ্টাও করছে। এই ঘটনাগুলো কোনও সাধারণ নারীর বেলায় ঘটেনি, ভোটের প্রচারে গিয়ে এমন অবস্থায় পড়েছেন অভিনেত্রী তথা মিরাট লোকসভা আসনের কংগ্রেস প্রার্থী নাগমা।
কিছু জায়গায় বিশেষত বস্তি এলাকায় তিনি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাই তাকে অতিরিক্ত পুলিশি সুরক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
উত্তরপ্রদেশের ১০টি লোকসভা আসনে আগামী ১০ এপ্রিল ভোট নেওয়া হবে। 'গ্ল্যামার গার্ল' নাগমাকে তাই ভোটের প্রচারে কাজে লাগাচ্ছে কংগ্রেস। তিনি নিজেও ভোটে দাঁড়িয়েছেন বটে।
দলীয় নেতৃত্বের মতে, অল্পবয়সী যুবকদের কাছে নাগমা স্বপ্নসুন্দরী। তাই তিনি আবেদন করলে যুবকদের ভোট কংগ্রেসের দিকেই আসবে!
এ পর্যন্ত সবকিছু ঠিকই ছিল। কিন্তু গোল বাধে এরপর। রুপালি পর্দায় স্বল্পবসনা নাগমাকে দেখে চোখ অভ্যস্ত। অত সহজে কী মন মানে! তাই মিরাটে একটি প্রচারমঞ্চে নাগমা উঠতে শুরু হয়ে যায় হুড়োহুড়ি। তীক্ষ্ণ শিস উড়ে আসে। ছুটে আসে অশ্লীল শব্দ। হতচকিত হয়ে পড়েন কংগ্রেস কর্মীরা। তাকে গাড়িতে তুলে দেওয়ার সময় আর এক গণ্ডগোল। হাতে গোনা পুলিশকর্মীরা ভিড় ঠেকাতে পারেননি। সেই সুযোগ নাগমাকে স্পর্শ করার জন্য শুরু হয়ে যায় হুড়োহুড়ি। কোনও ক্রমে পালিয়ে বাঁচেন তিনি।
মিরাটের কয়েকটি এলাকায় পরপর এমন ঘটনা ঘটায় নড়েচড়ে বসে নির্বাচন কমিশন। শনিবার জরুরি বৈঠক করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়, অতিরিক্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে কেউ এমন অসভ্যতা করলে পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছে নির্বাচন কমিশন।
শুধু নাগমা নন, হেমামালিনীও এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন বলে অভিযোগ এসেছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। উত্তরপ্রদেশের মথুরা থেকে তিনি লড়ছেন বিজেপি টিকিটে। তাকে উদ্দেশ করেও কটূক্তি ভেসে এসেছে বলে অভিযোগ। ফলে তিনিও অতিরিক্ত নিরাপত্তা পাচ্ছেন।
এ ছাড়াও ঝাঁসি থেকে বিজেপি টিকিটে লড়ছেন যিনি, সেই উমা ভারতীকেও অতিরিক্ত সুরক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। উমার অবস্থা নাগমা বা হেমামালিমীর মতো না হলেও তার ওপর জঙ্গিরা হামলা করতে পারে বলে খবর। ফলে উমাকে অতিরিক্ত সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে মোরাদাবাদের কংগ্রেস প্রার্থী বেগম নুর বানুকে হিন্দু মৌলবাদীরা আক্রমণ করতে পারে, এই আশঙ্কায় তাকেও দেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা।
উত্তরপ্রদেশের মু্খ্য নির্বাচনী অফিসার উমেশ সিনহা জানান, নারী প্রার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণ আগে কখনও শোনা যায়নি। এটা দুর্ভাগ্যজনক। তবে তিনি বলেন, নারী প্রার্থীদের সঙ্গে অভব্যতা করার অভিযোগ উঠলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ভোট প্রক্রিয়ায় কোনও রকম অসভ্যতা বরদাস্ত করবে না নির্বাচন কমিশন।
প্রসঙ্গত, উত্তরপ্রদেশে প্রথম দফার ভোট ১০ এপ্রিল। ফলে প্রস্তুতি প্রায় শেষের পথে। রাজ্যের বাইরে থেকে আনা হচ্ছে অতিরিক্ত পুলিশ। তা ছাড়া সিআরপিএফ, বিএসএফ, সিআইএসএফ ইত্যাদি আধা সামরিকবাহিনী মোতায়েন থাকবে রাজ্যের স্পর্শকাতর বুথগুলোতে।