১৯৮১ সালের প্রথম দিকের কথা। আমি তখন গণচীনে বেইজিং দূতাবাসে সামরিক এটাশে। রাষ্ট্রপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান ইতিমধ্যে দু-দুবার গণচীন সফর করে গেছেন। বাংলাদেশ ও গণচীনের মৈত্রীর সেতু তার উদ্যোগে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। চীনের পূর্ণ ও অকুণ্ঠ সমর্থন তিনি অর্জন করতে পেরেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি চীন সরকার বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। জেনারেল জিয়াকে তারা একজন সাহসী, বলিষ্ঠ ও জাতীয়তাবাদী নেতা বলে মনে করে এবং সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। আমার মনে আছে, আমি বঙ্গভবন থেকে রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব জেনারেল সাদেকুর রহমানের টেলিফোন পাই। তিনি আমাকে জানালেন, রাষ্ট্রপতি কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার সঙ্গে কথা বলবেন, আমি যেন প্রস্তুত থাকি। এর আগে ডিজি, ডিজিএফআই জেনারেল মহব্বতজান চৌধুরীও আমাকে এমনই আভাস দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি আমাকে টেলিফোনে অল্প কথাই বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অতি দ্রুত শক্তিশালী করা প্রয়োজন বিধায় পিএলএ (People’s Liberation Army-এর উদার সহযোগিতার প্রত্যাশা করেন। আমাকে বলেছিলেন, আমি যেন পিএলএর উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। দেশের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার দিকটাও মনে রাখি।
আমি সে দিনই চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি জানিয়ে অতি উচ্চপর্যায়ের একজনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রার্থনা করি। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে আমাকে জানানো হয় আমি পরের দিন সকাল ৯টায় যেন মন্ত্রণালয়ে আসি। যথারীতি মন্ত্রণালয়ে পৌঁছলে ফরেন লিয়াজোঁ অফিসার কর্নেল শু চুইনফিং আমাকে পার্টি হেড কোয়ার্টারে নিয়ে যান। কর্নেল শু পথে আমাকে জানান, আমি পার্টি সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের চেয়ারম্যান দেং শিয়াওফিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছি। আমি বিস্মিত। এও কি সম্ভব? কি বিশাল এক ব্যক্তিত্ব! এতটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমার মনে আছে, ছোটখাটো মানুষটি মাও কোট পরা। স্নেহবৎসল ও অমায়িক। বাংলাদেশের ব্রিগেডিয়ার পদবির এক অফিসারকে উষ্ণতার সঙ্গে মংচিয়ালা উকুয়ান লায়ে লায়ে (বাংলাদেশের মিলিটারি এটাশি আস আস) বলে রিসিভ করলেন। আমি বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি এবং রাষ্ট্রপতির উদ্বেগের (concern) কারণ তুলে ধরি। চীনের উদার সাহায্য কামনায় রাষ্ট্রপতির আস্থা ও প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করি। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান দেং আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি শুধু সেনাবাহিনীর কথা বলছ, নৌবাহিনীর কথা বলছ না কেন? তোমাদের মানচিত্রের পুরো দক্ষিণজুড়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সমৃদ্ধ বিশাল সমুদ্র বে অব বেঙ্গলের অবস্থান। তোমাদের নৌবাহিনী শক্তিশালী করা প্রয়োজন আর এটা শুধু সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বটে। চেয়ারম্যান দেং আমাকে নৌ ও স্থলশক্তি অর্জনে পিএলএর পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস ঢাকায় রাষ্ট্রপতিকে জানাতে বললেন। আমরা চীনের সহযোগিতায় একটি আধুনিক নৌবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনী গড়তে সক্ষম হই। আজও সে সহযোগিতা অব্যাহত। চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ একটি ত্রৈমাত্রিক নৌবাহিনী। শীঘ্রই সাবমেরিনও সংযোজিত হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সেই সুপ্রাচীন কাল থেকে সমুদ্র ঐতিহ্যের দেশ। বাংলাদেশের এই জনপদ একটি বদ্বীপ। ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, মেঘনা, যমুনার সঙ্গে সাগরের মিলনের মধ্যেই এর উৎপত্তি, বিস্তার ও সভ্যতার বিকাশ। তাই তো বাংলাদেশ (বঙ্গ) বঙ্গোপসাগর কন্যা। চীনা ভাষায়ও বঙ্গোপসাগরকে মংচিয়ালা ওয়ান (বাংলার সাগর) বলে। কয়েক সহস্র বছর আগে সমুদ্রের দেশ বাংলার রাজপুত্র বিজয় সিংহ রণতরী সাজিয়ে সিংহলের উদ্দেশে সমুদ্র-যাত্রা করেন। সিংহলের রূপ ঐশ্বর্য আর ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে রাজকুমারীর সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। সেখানেই রয়ে যান, রাজবংশ বিস্তার করেন। বাংলার বার ভূঁইয়া, বাংলার ঈশা খাঁ, সুবা বাংলা, বাংলার সুলতানী আমলের ইতিহাস- বাংলার শক্তিশালী নৌশক্তির ইতিহাস। বাংলার সমুদ্র ঐতিহ্যের কথা লিখতে গিয়ে মনে পড়ছে, পঞ্চদশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ্ চীনের মহাপরাক্রান্ত মিং সম্রাট ইয়ং-ল-এর প্রেরিত শান্তির শুভেচ্ছা দূত, সে যুগের শ্রেষ্ঠ নৌ-পরিব্রাজক অ্যাডমিরাল চাং হ কে শতাধিক জাহাজের নৌবহর নিয়ে চট্টগ্রামে একাধিকবার আগমন করলে বাংলার রাজধানী সোনারগাঁওয়ে তার দরবারে অভ্যর্থনা জানান। পরিতাপের বিষয় বাংলা তার এ মহান সমুদ্র ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারেনি। বাংলার মানুষ সুদীর্ঘকাল তার অতীত ইতিহাস বিস্মৃত ছিল। রবার্ট ক্লাইভ বাণিজ্যের নাম করে সমুদ্রপথে বাংলাদেশে আসে। কলকাতার কৃষ্ণনগরে ঘাঁটি গাড়ে। ততদিনে বাংলার নৌশক্তি অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। পলাশীর প্রান্তরে স্থলযুদ্ধে বাংলার নবাব ষড়যন্ত্র আর বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়ে পরাজিত হন। নৌশক্তির অভাবে গোটা ভারতবর্ষে ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনের পথ তখনই সুপ্রশস্ত হয়।
১ মার্চ ২০১২ সমুদ্র সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল (ইটলস) জার্মানির হামবুর্গে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিয়ে এক ঐতিহাসিক রায় দেয়। বাংলাদেশের ন্যায়ভিত্তিক দাবির (Principles of Equity) প্রেক্ষিতে ২০০ নটিক্যাল মাইল একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল (Exclusive Economic Zone-EEZ) অর্জন করতে সক্ষম হয়। মহিসোপানের বর্ধিত অবস্থান (Extended Continental Shelf) এর ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। মিয়ানমার এ রায় মেনে নেয়। বাংলাদেশের এটি ছিল একটি নিশ্চিত বিজয়।
ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি ইটলসের পথ ধরে দ্য হেগে আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশন কাউন্সিলে উপস্থাপন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত ছিল। প্রতিবেশী ভারত অবশ্য দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির ইচ্ছা বার বার ব্যক্ত করে। আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশন কাউন্সিলের রায় সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। রায়ে বাংলাদেশের প্রাপ্তি নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। সরকার একচ্ছত্রভাবে এক বিশাল সমুদ্র জয়ের ঘোষণা দিচ্ছে। এ তথাকথিত জয় এককভাবে একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারই ছিনিয়ে এনেছে। তারা অভিযোগ আনছে অতীতে একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো সরকারই কখনো সমুদ্রসীমা নিয়ে কোনো উদ্বেগ দেখায়নি। বিষয়টি নিষ্পত্তিতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বিষয়টিকে পাশ কাটিয়েছে, চরমভাবে অবহেলা করে এসেছে। এমনও কথা আসছে, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তালপট্টি দ্বীপটি ভারতকে নিজ হাতে সমর্পণ করে দিয়েছিলেন। কথা আসছে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ যেহেতু আর দৃশ্যমান নেই পানিতে নিমজ্জিত, তাই তার আর কোনো অস্তিত্বই নেই। আদালতে তাই তার উল্লেখও অযৌক্তিক।
বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন সমুদ্র পৃষ্ঠের স্ফীতি ইত্যাদি কারণে ভাসমান দ্বীপটি এখন নিমজ্জিত। কিন্তু তা দ্বীপটির অস্তিত্বের বাস্তবতাকে কখনো বিলীন করতে পারে না। দ্বীপটি ছিল, এখনো আছে। আগে ভাসমান ছিল এখন নিমজ্জমান আছে। আমাদের সমুদ্র সীমারেখা দ্বীপটির অতীত অবস্থান অন্তর্ভুক্ত করেই হতে হবে। এটাই যৌক্তিক। এটাই ন্যায়সঙ্গত।
বিকৃতি থেকে ইতিহাসকে মুক্ত করে সঠিক অবস্থানে উপস্থাপন করতে আমার (লেখক) ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু ঘটনার উল্লেখ করার তাগিদ অনুভব করছি। ১৯৭৯ সালের দিকের কথা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মুরারজি দেশাই বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি। এক সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর আলোচনা সভায় সদ্য জেগে ওঠা দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের ওপর বাংলাদেশের দাবির বিষয়টি উঠে আসে। ল্যান্ড রিসোর্স স্যাটেলাইট পিকচারে দ্বীপটির অবস্থান প্রথম প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র নামকরণ করে নিউমুর আইল্যান্ড। খুলনার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে রায়মঙ্গল নদীর শাখা হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মূল স্রোতধারার (মিড চ্যানেল) পূর্বদিকে দ্বীপটির অবস্থান নির্দিষ্ট করে প্রমাণ করে সদ্য আবির্ভূত দ্বীপটির দাবিদার একমাত্র বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালের রেড ক্লিফ বাউন্ডারি অ্যাওয়ার্ড হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মধ্য স্রোত দু-দেশের সীমান্ত বিভাজক হিসেবে চিহ্নিত করে। দ্বীপটির আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গেই ভারত নৌঅভিযান চালিয়ে তা দখলে নিয়ে নেয় এবং ঘাঁটি স্থাপন করে। নাম দেয় পূর্বাশা দ্বীপ।
রাষ্ট্রপতি জিয়া প্রধানমন্ত্রী দেশাইয়ের সঙ্গে বিষয়টি স্যাটেলাইট গৃহীত ছবিগুলোসহ গুরুত্বসহকারে আলোচনা করেন। সেই আলোচনায় বিডিআরের (বর্তমান বিজিবি) ডাইরেক্টর অপারেশন হিসেবে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নদীসমূহের ম্যাপ ও দ্বীপের স্যাটেলাইট গৃহীত ছবিসহ তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আমার উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। দ্বীপটির ওপর বাংলাদেশের দাবিকে প্রধানমন্ত্রী দেশাই শ্রদ্ধা জানান। দুই দেশের যৌথ পর্যবেক্ষণ ও জরিপের ভিত্তিতে বিষয়টির নিষ্পত্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ভারত নৌ-স্থাপনা তুলে নেয়।
সাম্প্রতিক দ্য হেগে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশন কাউন্সিলে বাংলাদেশের পক্ষে তথ্য-উপাত্তের চরম অপ্রতুলতা, জোরালো যুক্তি উপস্থাপনে দুর্বলতা প্রকটভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে আরও অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন বিশারদ ও বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ ও সংশ্লিষ্টতা প্রয়োজন ছিল। শোনা যায়, এ বিষয়ে অনেক প্রথিতযশা বাংলাদেশি এঙ্পার্টরা আছেন। বিস্মিত হই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের মতো ব্যক্তিকেও এ বিষয়ে কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট করা হয়নি। রহস্যজনকভাবে অবহেলা করা হয়েছে। দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, সালিশি ট্রাইব্যুনালে পাঁচজন বিচারকের মধ্যে একজন ছিলেন খোদ ভারতীয় (প্রেমারাজু শ্রী নিবাসারাও)।
সরকার থেকে অভিযোগ আসছে, ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের আমলে আনক্লস (ইউনাইটেড নেশনস কমিশন ফর লজ অব সি) বাস্তবায়নে কখনো কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন অনুভব করছি, আমি অষ্টম জাতীয় সংসদের সদস্য থাকাকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করি। সমুদ্রসীমা নির্ধারণ ও আনক্লস বাস্তবায়নের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে ২৬ জানুয়ারি ২০০৬ অনুষ্ঠিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এজেন্ডাভুক্ত হয়ে আলোচিত হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় (পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, নৌপরিবহন) সচিব, যুগ্মসচিবসহ তিন বাহিনী প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। কমিটি দীর্ঘ আলোচনার পর ঐকমত্যে দৃঢ় সিদ্ধান্তে উপনীত হয় আনক্লস বাস্তবায়নে অতিসত্বর সর্বাত্দক উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করতে হবে। আরও সুপারিশ করা হয়, সমুদ্র সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা অর্জনে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে যুগোপযোগী, আধুনিক ও নীলজলের ত্রৈমাত্রিক নৌবাহিনীতে (three dimensional blue water navy) রূপান্তরিত করতে হবে।
দ্য হেগের সমুদ্রযুদ্ধ নিশ্চয়ই এক বড় নৌঅভিযানই বটে। বিষয়টি জাতীয় টপ ইস্যু। সমুদ্র সার্বভৌমত্বের ইস্যু। জাতীয় নিরাপত্তা, জাতীয় ভূকৌশলগত অবস্থানের ইস্যু। বিষয়টি অনাদিকালে বাংলাদেশের ভৌগোলিক মানচিত্রের ইস্যু। জাতীয় টপ প্রায়োরিটির বিষয়টির ওপর সরকার প্রয়োজনীয় গুরুত্বারোপ করতে শিথিলতা প্রদর্শন করে। হোমটাক্সে অলস থাকে। যুগ যুগ ধরে বিষয়টি বর্তমান ও আগামী প্রজন্মকে অধিকার হরণের গ্লানিতে আক্রান্ত করবে। বিষয়টি উত্তাপ ছড়াবে। পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহদের প্রতি অনাদিকালের প্রজন্ম সমুদ্র হস্তান্তরের কঠিন অভিযোগ ছুড়ে দেবে। আমাদের গৌরবের অনেক মহান অর্জনকে ম্লান করবে। আমাদের প্রতি ক্ষমাসুন্দর হতে কার্পণ্য করবে। সমুদ্রের এ যুদ্ধে আমাদের পূর্ণ বিজয় আসেনি। আমরা মিথ্যা আস্ফালন করে নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকতে চাচ্ছি, নিজেদেরই নিজেরা প্রতারণা করছি। এটি সম্পূর্ণ পরাজয় তাও বলব না। এটি খণ্ডিত জয় অথবা খণ্ডিত পরাজয়। প্রত্যাশা করি, ভবিষ্যতের প্রজন্ম বাংলাদেশকে তার ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায়, তার হৃত সমুদ্র পুনরুদ্ধারে সক্ষম হবে। জয় হোক সিন্ধু অভিযানের। জয় হোক সমুদ্রের। জয় হোক বাংলাদেশের।
লেখক : সাবেক সেনাপ্রধান