সরকার যে সম্প্রচার নীতি গ্রহণ করেছে, যার আলোকে আইন করা হবে এবং একটি স্বাধীন(?) সম্প্রচার কমিশন গঠন করা হবে। সম্প্রচার কমিশন ও আইন না হওয়া পর্যন্ত সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রচার সম্পর্কিত সব সিদ্ধান্ত নেবে। এ নীতিমালা যে মিডিয়ার স্বাধীনতাকেই ক্ষুণ্ন, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করবে, সে সম্পর্কে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। সরকারের মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী কোনো অসতর্ক মুহূর্তে সরকারের আসল অভিসন্ধি ফাঁস করে দিয়েছেন। সিলেটের এক সভায় সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়ে এক চোট নেওয়ার সময় তিনি হুমকি দিয়েছিলেন- সম্প্রচার নীতি কার্যকরী হোক, তিনি সাংবাদিকদের দেখে নেবেন। পরে যদিও তিনি ক্ষমা চেয়েছেন, তবু অস্বাভাবিক মুডে রাগত অবস্থায় মুখ ফসকে যে কথা বেরিয়ে গেছে, সেটা তো আর ফেরত নেওয়া যায় না। সেটাই তো আসল কথা। সরকার বেয়ারা সাংবাদিকদের এক হাত দেখে নিতে চায়। বাংলাদেশ প্রতিদিনের ৬ আগস্ট সংখ্যায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না যথার্থই বলেছেন, "... নীতিমালায় আছে আলোচনামূলক অনুষ্ঠানে (টকশো) বিভ্রান্তিমূলক ও অসত্য তথ্য পরিহার করতে হবে। এ ধরনের অনুষ্ঠানে সব পক্ষের যুক্তি যথাযথভাবে উপস্থাপনের সুযোগ থাকতে হবে। ৫ জানুয়ারি তথাকথিত নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করি। এটা কি কোনো নির্বাচন? শতকরা ৪০ ভাগ ভোট পড়েছে? দেশের মানুষ দেখেনি? কোন তথ্যটি বিভ্রান্তমূলক? মাত্র ৫ ভাগ ভোট পড়েছে নাকি ৪০ ভাগ? বিভ্রান্তি কি টকশোর অতিথি বক্তারা ছড়াচ্ছেন নাকি সরকার নিজে। যদি সত্যের কথা বলেন, তাহলে সরকারের এসব মিথ্যাচার বন্ধ করে দিতে হবে। অথচ কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা তা বিচার করার ভার থাকছে মন্ত্রণালয় তথা সরকারের হাতে। এটা স্বৈরাচার নয়?"
সম্প্রচার নীতির লক্ষ্য হলো সরকারের মিথ্যাকে মিডিয়ায় প্রচার করতে হবে। আসল সত্য প্রকাশ করলে মিডিয়ার ওপর, সাংবাদিকদের ওপর খড়গ নামবে। এক কথায়, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকেই বলি দেওয়া হবে তথাকথিত রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, ব্যক্তি বিশেষের বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাহানি বন্ধ অথবা বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষার নামে। স্বৈরাচারী শাসক মাত্রই এসব ভালো ভালো কথার আড়ালে গণতন্ত্রকেই বিসর্জন দেয়, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করে। বর্তমান শাসকরা ঠিক একই কাজ করছেন। স্বৈরাচারী শাসকরা যে ভুল করে থাকে বর্তমান শাসকরাও একই ভুল করছেন। স্বাধীন সংবাদ প্রবাহ বন্ধ করে দিলে সন্দেহ, অবিশ্বাস ও অনাস্থা আরও বেশি করে তৈরি হয়, যা কোনো শাসকের জন্য শুভ নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'গান্ধারীর আবেদন' কবিতায় 'বাক স্বাধীনতার সপক্ষে এবং তা রুদ্ধ করে দিলে কী পরিণতি হতে পারে সে সম্পর্কে মহাভারতের চরিত্র ধৃতরাষ্ট্রের মুখ দিয়ে বলেছেন,
'ওরে বৎস শোন
নিন্দারে রসনা হতে দিলে নির্বাসন
নিম্নমুখে অন্তরের গূঢ় অন্ধকারে
গভীর জটিল মূল সুদূরে প্রসারে,
নিত্য বিষ তিক্ত করি রাখে চিত্ততল।
রসনায় নৃত্য করি চপল চঞ্চল
নিন্দা শ্রান্ত হয়ে পড়ে; দিয়ো না তাহারে
নিঃশব্দে আপন শক্তি বৃদ্ধি করিবারে
গোপন হৃদয় দুর্গে।'
স্বৈরশাসক দুর্যোধন নাগরিকদের সমালোচনা বন্ধ করার সব ব্যবস্থা করেছিল। তার প্রতি ধৃতরাষ্ট্রের এ ছিল উপদেশ। স্বাভাবিক পথে বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা না থাকলে তা আরও বহুগুণ শক্তি দিয়ে অন্য কোনো পথে আত্দপ্রকাশ করবেই, যা শাসক গোষ্ঠীর জন্য মোটেও শুভ নয়।
একই কথা বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯৮ সালে, যখন ঔপনিবেশিক শাসক ব্রিটিশ সরকার তিলককে গ্রেফতার করেছিল এবং সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করেছিল। রবীন্দ্রনাথ 'কণ্ঠরোধ' এ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। এখানে আরও উল্লেখ্য, প্রবন্ধটি পাঠ করা হয়েছিল ব্রিটিশ রাজকর্তৃক 'সিডিশন বিল' পাস হওয়ার ঠিক আগের দিন। তিনি লিখেছিলেন- 'সিপাহী বিদ্রোহের পূর্বে হাতে হাতে যে রুটি বিলি হইয়াছিল তাহাতে একটি অক্ষরও ছিল না- সেই নির্বাক নিরক্ষর সংবাদপত্রই কি যথার্থ ভয়ঙ্কর নহে। সংবাদপত্র যতই অধিক ও যতই অবাধ হইবে, স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে দেশ ততই আত্দগোপন করিতে পারিবে না।'
রবীন্দ্রনাথের মতো মনীষীদের সৎ উপদেশ কোনোকালেই স্বৈরাচারী শাসকদের কানে প্রবেশ করে না। শাসকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংবাদপত্রের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা দিতে চায় না এবং স্বাধীনতা হরণ করার সময় সব শাসকশ্রেণীর রাষ্ট্র্রীয় নিরাপত্তা ইত্যাদি বুলি উচ্চারণ করে থাকে। অতএব আজকের সরকার যা বলছে, তা-ও অতীতের স্বৈরশাসকদের থেকে ভিন্ন নয়। শাসকশ্রেণী অসত্য বললেও সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া এবং কিছু দলকানা বুদ্ধিজীবী সেটাকেই সত্য বলে জাহির করেন এবং সরকারকে বাহবা দিতে থাকেন।
এ নীতি প্রসঙ্গে সরকার কীভাবে সত্য কথা বলতে পারেনি, সেটাই দেখা যাক। তারা বলছেন, সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এবং সবার মতামতের ভিত্তিতে এ নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। এটা সত্যের অপলাপ। এ কথা ঠিক, ছয় মাস ধরে ওয়েবসাইটে খসড়া নীতিমালাটি ছিল। তার মানে এই নয় যে, ইন্টারনেটে মতামত প্রদানকারী কোনো ব্যক্তির মতকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের কথা বাদই দিলাম। এমনকি প্রণয়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে যাদের রাখা হয়েছিল তারাও অনেকে দাবি করছেন, তাদের মতামত গৃহীত হয়নি। তাদের অভিমত নেওয়াও হয়নি। তাদের অধিকাংশই কিন্তু আবার সরকার পক্ষের লোক। অন্যদিকে বিভিন্ন খবরের কাগজে সম্পাদকীয় লেখা হয়েছে, প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে, এ নীতির বিশেষ বিশেষ দিকের সমালোচনা করে। অনেক সেমিনার গোলটেবিল ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে এ নীতিকে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ বলেই আখ্যায়িত করা হয়েছে। সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ নীতিমালার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, এটা নীতিমালা নয়, বরং হুকুমনামা। এ হুকুমনামার মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে, কী কী করা যাবে না, সে ধরনের নিষেধাজ্ঞা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য যেসব নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তার তালিকা বেশ দীর্ঘ। আমরা এখানে কয়েকটি আলোচনায় আনব।
কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত বা গোপনীয় বা মর্যাদাহানিকর তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। কোনো ব্যক্তি সামাজিক বা ফৌজদারি অপরাধমূলক কাজ করে থাকলে সেটাও কি প্রকাশ করা যাবে না? সরকারদলীয় নেতা-উপনেতারা যেসব অপরাধমূলক কাজ করেন, যথা টেন্ডারবাজি, জবরদখল, দুর্নীতি ইত্যাদি- তাও কি প্রকাশ করা যায় না? হয়তো বলা হবে তাও যাবে না, কারণ তাতে তো বিশেষ ব্যক্তির মর্যাদা ক্ষুণ্ন হতে পারে। তাই সন্দেহ হতে পারে যে স্বীয় দলের দুর্নীতিবাজ লোকজন ও মাস্তানদের রক্ষা করার জন্যই কি নীতিমালায় এসব কথা ঢোকানো হয়েছে?
নীতিমালায় বলা হয়েছে- রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘি্নত হতে পারে এমন সামরিক, বেসামরিক বা সরকারি তথ্য প্রচার করা যাবে না। সামরিক বিষয়ে কিছু তথ্য প্রচার করা যায় না রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই। এটা জানা কথা। এ যাবৎ একটি নজিরও নেই যে, কোনো সংবাদপত্র এ ধরনের তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেছে। এত দায়িত্বজ্ঞানহীন কোনো সংবাদপত্র বা বৈদ্যুতিক মিডিয়া কখনোই ছিল না। তা ছাড়া সামরিক বিষয় সংক্রান্ত কোনো গোপনীয় তথ্য প্রকাশ করলে তার জন্য গুরুতর শাস্তির বিধান অন্যত্র আছে। এর জন্য নতুন করে সম্প্রচার নীতি প্রণয়নের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন অন্যত্র। বেসামরিক তথ্য বা সরকারি তথ্য কীভাবে জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত হলো? বরং আমরা জানি, সরকার যে কোনো ধরনের তথ্য সরবরাহ করতে বাধ্য, যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা তা মানে না। তথ্য জানার অধিকার প্রতিটি নাগরিকেরই অলঙ্ঘনীয় অধিকার। স্পষ্টতই বোঝা যায়, সরকার তথ্য গোপন করে তাদের অপকর্ম গোপন করতে চায়।
নীতিতে আরও বলা হয়েছে- সশস্ত্র বাহিনী অথবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত দায়িত্বশীল অন্য কোনো বাহিনীর প্রতি কটাক্ষ, বিদ্রূপ বা অবমাননা করা যাবে না। সরকারি কর্মকর্তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করা যাবে না। পুলিশ-র্যাব ইত্যাদির অন্তর্ভুক্ত কোনো সদস্য যদি কাউকে ক্রসফায়ারে হত্যা করে অথবা বন্দী অবস্থায় নির্যাতন করে তাহলেও কি সে তথ্য গোপন করা হবে? খালেদা জিয়ার ২০০১-২০০৬ শাসনকালে যৌথবাহিনী দিয়ে ক্লিনহার্ট অপারেশন করা হয়েছিল। ওই সময় বন্দী অবস্থায় অনেকের ওপর বর্বর নির্যাতন করা হয়েছিল। কারও কারও মৃত্যুও ঘটেছিল। আমার জানা মতে, কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র একতার সংবাদকর্মী মুজাহিদুল ইসলাম উইন নোয়াখালী জেলায় যৌথবাহিনীর বর্বর আক্রমণের শিকার হয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। তখন খালেদা জিয়ার ক্লিনহার্ট অপারেশন চলছিল। ওই সময় উইন ছিলেন কিশোর। খালেদা জিয়া পার্লামেন্টে আইন করে যৌথবাহিনীর নির্যাতনকারীদের দায়মুক্তি দিয়েছিলেন। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি একই পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিশেষ বাহিনীর অপরাধীদের আড়াল করতে চাচ্ছেন? হায় গণতন্ত্র!
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল আলোচনায় গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল এক লিখিত বক্তব্যে যথার্থই বলেছেন- 'এই নীতির আলোকে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন বা মৃত্যু, সামরিক বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা বা র্যাব-পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড বা দুর্নীতিতে তাদের যুক্ত থাকার খবর ইত্যাদি কোনো কিছুই প্রচার করা যাবে না। এ নীতি যদি আগে থেকেই থাকত তাহলে সাম্প্রতিক নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলা, লিমনের নির্যাতন, মিরপুরে পুলিশি নির্যাতনে ঝুট ব্যবসায়ীর মৃত্যু ইত্যাদি কিংবা অতীতের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা, মঞ্জুর হত্যা মামলার তথ্য বা ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় গোয়েন্দা সংস্থার বা নিরাপত্তা বাহিনীর যুক্ত থাকার খবরও প্রচার করা যেত না।'
নীতিমালার আরেকটি বিষয় হলো- বন্ধুরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এমন কিছু বলা যাবে না, যাতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এটাও একটি অস্পষ্ট ও অনির্দিষ্ট হুকুমনামা, যার দ্বারা সরকারের কোনো বিশেষ রাষ্ট্রের প্রতি নতজানু নীতিকে সমালোচনার বাইরে রাখা হবে। বন্ধুরাষ্ট্র কে? উপরন্তু আজ যে বন্ধুরাষ্ট্র, আগামীকাল সে রাষ্ট্র বন্ধুরাষ্ট না-ও থাকতে পারে। তা ছাড়া একেক সরকার তার পছন্দ অনুযায়ী বন্ধুরাষ্ট্রের সংজ্ঞা দেবে। যদি ধরা হয় ভারত আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র, সম্ভবত নীতি প্রণেতার মনের মধ্যে ভারতই আছে তাহলেও কতগুলো প্রশ্ন থেকে যায়। ভারত নিঃসন্দেহে আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারত যে সাহায্য করেছিল, তা আমরা কখনোই ভুলতে পারব না। কিন্তু তাই বলে কি, ভারত যদি অন্যায় আচরণ করে, আমাদের নদীর পানি থেকে বঞ্চিত করে অথবা সীমান্তে বিএসএফ বাংলাদেশি নাগরিকদের গুলি করে হত্যা করে সেই খবরও কি প্রকাশ করা যাবে না?
মোটকথা এ ধরনের অনেক অস্পষ্ট কথা দ্বারা, বহুবিধ অনাকাঙ্ক্ষিত নিষেধাজ্ঞা দ্বারা এ নীতি যা করছে তাহলো- সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ। বর্তমান যুগে সংবাদপত্রের পূর্ণ স্বাধীনতা, তথ্যের বাধাহীন প্রবাহ সভ্য সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নোবেলবিজয়ী অমর্ত্য সেন বলেছেন, 'স্বাধীন সংবাদপত্র দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধেও প্রাচীর গড়ে তুলতে পারে।'
সংবাদপত্র কী ধরনের অসাধারণ ভূমিকা রাখতে পারে সে সম্পর্কে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়ক এক প্রবন্ধে কয়েকটি উদাহরণ দিয়েছেন। সেখান থেকে কয়েকটি বাক্য উদ্ধৃত করছি।
'সংবাদপত্র ও বৈদ্যুতিন, উভয় গণমাধ্যমই গুজরাট হত্যাকাণ্ডের প্রচারের ক্ষেত্রে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছে।...'
'হতলকা কাণ্ডে, তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি সম্পর্কে যতই নৈতিক প্রশ্ন থাকু না কেন, এই টেপ-এ প্রকাশ পায় আমাদের দেশের বড় মাপের রাজনৈতিক কর্তাব্যক্তিরা ও সামাজিক কর্তারা একটি কল্পিত প্রতিরক্ষা চুক্তিতেও কীভাবে ঘুষের পরিমাণ নিয়ে দরাদরি করে।...'
'বোফর্স কেলেঙ্কারির কথা আলোচনা করলে দেখা যায়, গণমাধ্যমে ওই ঘটনা প্রকাশ পাওয়ায় তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছিল।'
এক কথায় সংবাদপত্র যদি স্বাধীন ভূমিকা রাখতে পারে তবে তা হবে একটি বিরাট শক্তি। অবশ্যই তা হবে গণতন্ত্র ও জনগণের পক্ষের শক্তি। এ শক্তিতে অগণতান্ত্রিক শাসকরা ভয় পায়। বর্তমান সরকার ৫ জানুয়ারির মতো প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে এবং জনপ্রিয়তা হারিয়ে এখন বেশি বেশি করে পুলিশ-আমলাতন্ত্র এবং দলীয় মাস্তানদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তাই স্বাধীন সংবাদপত্রকে তাদের এত ভয়। এ ভীতি থেকেই তারা সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করতে গণবিরোধী নীতি ও আইন প্রণয়ন করতে চলেছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মানুষের দায়িত্ব এ ধরনের স্বৈরাচারী পদক্ষেপ এখনই রুখে দেওয়া। অন্যথায় বেশি দেরি হলে যে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদ চেপে বসবে, তার চেহারা হবে আরও ভয়াবহ।
লেখক : রাজনীতিক।