বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেছেন, বিএনপির রাজনীতি নিয়ে দেশের মানুষ হতাশ। বারবার সরকারের কৌশলের কাছে মার খাচ্ছে দলটি। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনদের কর্মকাণ্ডে মানুষ সরকারবিরোধী হওয়া সত্ত্বেও বিএনপির কার্যক্রমে তারা হতাশ। এখনো বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রামে বিরোধী শক্তি হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারলে জনগণ তাদের পাশে থাকবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এ কথা বলেন তিনি। মাওলানা মাহফুজুল হক বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা আমির মরহুম শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের ছেলে। বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড-বেফাকের যুগ্ম-মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
সংসদের বিরোধী দল প্রসঙ্গে মাওলানা মাহফুজ বলেন, এবারের সংসদে কার্যত কোনো বিরোধী দল নেই। এরশাদ আমলে গৃহপালিত বিরোধী দল ছিল। এখন তাও নেই। সংসদে বিরোধী দল আবার সরকারেও অংশীদার। বিরোধী দলের প্রধান কখন কী বলেন তার কোনো ঠিক নেই। মধ্যবর্তী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা মধ্যবর্তী নির্বাচন চাই। কিন্তু এ সরকারে অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আমাদের রাজনৈতিক দাবি।' বর্তমান সরকার প্রসঙ্গে মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, সরকার ভোটারবিহীন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। অর্ধেকের বেশি সংসদ সদস্য নির্বাচন ছাড়াই বিজয়ী হয়েছেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যে কটি আসনে নির্বাচন হয়েছে তাতে ভোটারের উপস্থিতি ছিল নগণ্য, যা নজিরবিহীন। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি করেছে। নির্বাচনে জনগণের মতামতের বহিঃপ্রকাশ হয়নি। তাই এ সরকারকে কোনোভাবেই বৈধ সরকার বলা যায় না।
আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে কোনো সময়ের চেয়ে ভয়াবহ। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীদের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা অহরহ ঘটছে। খুন-খারাবি ঘটেই চলছে। সরকারদলীয় ক্যাডারদের দৌরাত্দ্যে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। চর দখলের মতো সরকারি জমি দখল চলছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি চলছে। সরকার দলের অনেক এমপি-নেতার সংশ্লিষ্টতা এসব অপকর্মের সঙ্গে আছে বলে মিডিয়ায় আসছে। সম্প্রচার নীতিমালা প্রসঙ্গে বলেন, নতুন সম্প্রচার নীতিমালা করে সরকার মূলত বিরোধী মতকে দমন করতে চায়। মন্ত্রিসভা এ নীতিমালা অনুমোদনের পর থেকেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদের পুলিশ ও সরকারদলীয় ক্যাডাররা হয়রানি করে আসছে।
খেলাফত মজলিস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মরহুম আল্লামা আজিজুল হক ১৯৮৯ সালের ৮ ডিসেম্বর আদর্শিক প্লাটফর্ম হিসেবে এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ দেশে 'খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা' কায়েমের লক্ষ্যে যোগ্য কর্মীবাহিনী গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠনের প্রায় ৫০টি শাখায় নিয়মিত কর্মসূচি চলছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সাধ্যমতো আন্দোলন করে যাচ্ছে। ৩০ আগস্ট কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। সংগঠনের সর্বোচ্চ ফোরাম মজলিসে শুরাতেই আগামী দিনের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। জোটভুক্ত হবেন কি না- জানতে চাইলে বলেন, 'আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে জোট করার পক্ষে নই।'