প্রাণিকুলের অত্যন্ত নিরীহ ও মানব উপকারী একটি জানোয়ার গাধা। গাধা নাকি তার চেয়ে বেশি ওজনের ভার বহন করতে পারে। গাধা নিতান্তই নিরীহ গোবেচারা ও মানুষের উপকারী প্রাণী। তার সামনে নাকি একটা মুলা ঝুলিয়ে দিলে সেই মুলা খাওয়ার লোভে সে বোঝা পিঠে নিয়ে অবলীলায় বিরামহীন যে কোনো দূরত্ব বা চড়াই-উতরাই পার হয়ে যেতে পারে। তাই অনেক মানুষ নির্বোধ শক্তিশালী আপনজনকে আদর করে গাধা বলে ডাকে। এটি কোনো গালি বা খারাপ অর্থে ব্যবহৃত শব্দ নয়। অনেকটা আদুরে শব্দ। তবে গাধা নামে কথিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ কখনই আস্থাভাজন নয়।
কতিপয় বিদেশি ধুরন্ধর শক্তি ও তাদের তাঁবেদার দেশীয় তল্পিবাহকরা অত্যন্ত সুকৌশলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে মধ্যনির্বাচনের একটি বড় মুলা ঝুলিয়ে দিয়ে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে গোলক ধাঁধায় দৌড়াচ্ছে। কেউ বলছে ১৫ দিন আবার কেউ ২১ দিনের মধ্যে সরকার পড়ে যাবে বলে বিজ্ঞ জ্যোতিষীর মতো অমোঘ ভবিষ্যদ্বাণীর ঘোষণা দিচ্ছেন। আবার অনেক বিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫-এর মধ্যে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাধায়ক সরকারের অধীনে আরেকটি নির্বাচন হচ্ছে বলে চুপি চুপি এলান করে বেড়াচ্ছে এবং সেই নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতিও অনেকে ইতিমধ্যে নিতে শুরু করেছেন। তোপখানা রোডের বিভিন্ন আড্ডাখানায় খোলামেলা আলোচনা হচ্ছে সরকার নাকি পিছটান দিতে শুরু করেছে। সংসদের আগামী অধিবেশনে সম্প্রচার ও বিচারপতিদের নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হলেই সারা দেশ বিক্ষোভে ফেটে চুরমার হয়ে যাবে! সেই ফাটাতে সরকারকে ফেলে দিয়ে তাকে মাটি চাপা দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হবে! আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সরকার আইন দুটি পাস করলে অক্টোবর বা নভেম্বরের মধ্যে বর্তমান সরকারকে ফেলে দিয়ে নভেম্বরের শেষ নাগাদ বা ডিসেম্বরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নিলে খুব সহজভাবেই ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫-এর মধ্যে একটি অবাধ-নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সে নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি, জামায়াত, বিএনপিসহ সব সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে হারিয়ে ক্ষমতায় চলে আসবে! আওয়ামী লীগ কি তখন বসে বসে আঙ্গুল চুষবে? না, তারা আঙ্গুল চুষবে না। তবে তারা কি করবে তার দিক-নির্দেশনাও তোপখানা রোডে পাওয়া যাচ্ছে। যদি সরকার সরকারবিরোধীদের দাবি না মানে, তাহলে দেশে প্রচণ্ড শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হবে (!), সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করার নামে সরকার যদি দমননীতি চালায় বা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করার জন্য সশস্ত্রবাহিনী নিয়োগ করে, দেশে অশান্তি বা সহিংস গণ্ডগোল পাকায়, তাহলে বিদেশিরা বসে থাকবে না এবং তখন তারা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে (!) এবং প্রয়োজনে বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক শান্তি মিশনে পাঠানো বন্ধ করে দেবে। তাহলে সশস্ত্রবাহিনী শুর শুর করে গর্তে ডুকে যাবে! তখন সরকারের আর কিছুই করার থাকবে না! সরকারবিরোধীদের ভয়ে সরকার তখন হয়তো চুন লেদাতে শুরু করে দেবে! দুঃখিত, গ্রামবাংলার লেদানো শব্দটি ব্যবহার করার জন্য। আমাদের কিশোরগঞ্জ এলাকায় পশু-পাখির মলত্যাগকে লেদানো বলে এবং পাখির লেদা সাদা বা চুনের মতো হয়। সাধারণত পাখি মানুষকে ভয় পায়, তাই কেউ পাখিকে ধাওয়া দিলে উড়ে যায় এবং কখনো কখনো উড়ে যাওয়ার সময় লেদাতে থাকে, তাই 'তোর ভয়ে পাখি লেদাচ্ছে' বলে অনেকে কৌতুক করে থাকে।
তোপখানা রোডে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা সামাজিক সংগঠনের প্রতিদিনই অন্তত দু-তিনটা আলোচনা, গোলটেবিল, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, প্রতিবাদ, সংবাদ সম্মেলন বা স্মরণসভা হয়ে থাকে। এসব সভা-সেমিনারে প্রচুর রাজনৈতিক তথ্য পাওয়া যায়। বিশেষ করে শীর্ষ নেতানেত্রীর অন্দরমহলের গোপন খবর এবং তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া বা অনেক সিদ্ধান্তের আগাম খবর তোপখানা রোডের আড্ডাখানার চায়ের টেবিলে পাওয়া যায়। তোপখানার অনেক রাজনীতিবিদ মনে করেন এবার প্রয়োজনে বিদেশিরা এই সরকারকে হঠিয়ে সামরিক বাহিনীকে বসাবে। এখন তো আর ভারতে কংগ্রেস সরকার নেই যে, আওয়ামী সরকারকে বাঁচানোর জন্য তারা সেনাবাহিনী পাঠাবে- এমন কোনো ভয় নেই। ওইসব রাজনীতিবিদদের মনস্তাত্তি্বক অবস্থা দেখে আশ্চর্য হতে হয় যাদের অনেককেই সরকার ডাক দিলে সরকারের কাছে দৌড়ে চলে যাবে। এসব রাজনীতিবিদদের জ্ঞান, বুদ্ধি, মেধা, মননশীলতার মান দেখে একজন ক্ষুদ্র রাজনীতিবিদ হিসেবে লজ্জিত হওয়া ছাড়া কিছুই থাকে না। আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে বাংলাদেশের রাজনীতির সমীকরণ খুবই সরল। এখানে 'ক' কখনই 'খ'-এর সমান নয়। ক ও খ এর সম্পর্ক সাংঘর্ষিক এবং চিরন্তন। ক সদা সচেষ্ট খ-কে ক্ষুদ্র করে রাখার জন্য এবং খ সদা সংগ্রামে লিপ্ত নিজেকে ক-তে অধিষ্ঠিত করতে। এর বাইরে আমাদের কোনো রাজনীতি নেই। আমরা এক কেন্দ্রিক জাতি। আমাদের ভাষা এক, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এক, জনসংখ্যার ৯০-৯৫% এক ধর্মাবলম্বী, ক্ষুদ্র ধর্মাবলম্বীদের রাজনৈতিক প্রভাব গৌণ তারপরও যেটুকু আছে, তাও মনস্তাত্তি্বক, আশা আকাঙ্ক্ষা এক, ধনী-গরিবের পার্থক্য তেমন প্রকট নয় এবং পারস্পরিক সম্পর্কও সাংঘর্ষিক নয়, রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা কোনো গোষ্ঠী বা অঞ্চলের কাছে কুক্ষিগত নয়। আমাদের রাজনীতিতে যেমন কোনো ধর্মীয় বা উপধর্মীয় সাংঘর্ষিক বিরোধ নেই, তেমনি কোনো আঞ্চলিক বিরোধও নেই। আমাদের আদর্শগত কোনো বিরোধ এবং বৈদেশিক নীতিতেও কোনো সাংঘর্ষিক বিরোধ নেই। আমরা কোনো বিদেশি বলয়ের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ নই। আমাদের রাজনীতি সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক এবং পরস্পর ব্যক্তিবিরোধী। আরও খোলা করে বলতে গেলে বলতে হয়, সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তি স্বার্থকেন্দ্রিক। আমাদের রাজনীতিতে ক-এর সঙ্গে খ-এর বিরোধ একচ্ছত্র ক্ষমতা নিয়ে। আর বাকি সব হলো স্তাবক। কেউ ক-এর পক্ষে আবার কেউ খ-এর পক্ষে। এই স্তাবকের দল যখন তাদের স্বার্থে যেদিকে ধাপিত হয় ক ও খ-এর অবস্থান সেভাবে পরিবর্তন হয়। এই স্তাবকেরা যেমন তাদের নেতা ক বা খ-কে ভগবান বানাতে পারে তেমনি পূজা শেষে তাদের ভগবানকে পায়ের নিচে দুমড়ে-মুচড়ে বিসর্জনও দিতে পারে। ভাগ্যের কারণে ক ও খ তাদের পরস্পর বিরোধিতা বাদ দিয়ে কখনই মিলতে পারবে না। মিলতে চাইলেও তাদের স্ব-স্ব স্তাবকেরা কখনোই তা দেবে না। ক ও খ কখনোই তাদের অবস্থান ছাড়বে না তাই তাদের পরিণতিও হবে বিয়োগান্তক যা তাদের বংশধরদের জন্য বংশ পরম্পরায় সম্পদ হয়ে থাকবে, যা আমাদের রাজনীতির চরম ট্র্যাজেডি। ক বা খ যেই ক্ষমতায় থাকবে তখন তার বলয়ে অবশ্যই স্তাবকদের সংখ্যা বেশি থাকবে। এমনকি খ-এর স্তাবকেরাও গোপনে, আড়ালে-আবডালে ক-এর বলয়ে প্রবেশ করতে চাইবে এবং না পারলে ক এর বিরুদ্ধে খ কে উত্তেজিত করতে প্রলুব্ধ করবে। সবচেয়ে মজার খেলা হলো খ এর স্তাবকেরা এই উত্তেজনাকেই আবার পণ্য করে ক-এর সঙ্গে দরকষাকষি করবে। ক এবং খ আমাদের রাজনীতিতে পণ্য, আমরা আমাদের নেতাদের বেচাকেনা করি। যখন যার আড়তে ক বা খ গুদামজাত হয় তখন তারা ক্ষমতার আড়তদার, ব্যবসা তখন তাদের তুঙ্গে। আমাদের রাজনীতিতে আদর্শ বা কর্মসূচির কোনো মূল্য নেই। উন্নয়ন করে ক্ষমতায় টেকা যায় না এবং আসাও যায় না। কারণ জনগণও জানে উন্নয়ন মানে কমিশন- ঠিকাদার-ইঞ্জিনিয়ার-ক্ষমতাসীন আমলা ও রাজনৈতিক এবং বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীদের সমন্বয়ে গঠিত দস্যুবাহিনীর রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন। রাজনৈতিক পদ ও সংসদ সদস্যের আসন এখন নিলামে ওঠে, ক বা খ এর বংশধর ও আত্দীয়স্বজনরা এখন রাষ্ট্রের মালিকপক্ষ। ক বা খ এর ক্ষমতার পরিবর্তনের সঙ্গে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ বা প্রমত্ত পদ্মার ঢেউয়ের বিপরীতে মাথা তুলে দাঁড়াতে হয় জনগণকেই। রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেখানে কোনো পথ দেখায় না। জনগণ বাধা মানে না তাই জনগণই জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করে।
যে স্তাবকেরা দিবা স্বপ্ন দেখছেন ১৫ বা ২১ দিনে সরকার পরিবর্তন বা আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫-এর মধ্যে নির্বাচনের, জানি না কারা তাদের সামনে এই স্বপ্নের মুলা ঝুলিয়েছেন। তবে এটা নির্দি্বধায় বলতে পারি, ওই দেশি-বিদেশি ধুরন্ধর গোষ্ঠী অবশ্যই তাদের স্বার্থে এবং সরকারের সঙ্গে দর কষাকষি করার জন্যই সরকারবিরোধীদের এই দিবাস্বপ্ন দেখাচ্ছে। ওই ধুরন্ধর গোষ্ঠীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিলে, মনে হয় অনেক কিছু আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এরা হলো - ১. সরকারবিরোধী ভাবাপন্ন বা অতীতে বর্তমান সরকারবিরোধীদের সঙ্গে মধুর সম্পর্কের কারণে বর্তমানে সরকারি পদ-পদবি, পদোন্নতি ও বিশেষ সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত চাকরিরত সামরিক ও বেসামরিক আমলা, পুলিশ, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, শিক্ষক এবং ব্যাংকসহ বিভিন্ন পেশা ও বুদ্বিজীবী, সাংবাদিক এবং কর্মজীবী গোষ্ঠী। ২. সরকারের আনুকূল্যবর্জিত বিভিন্ন ছোট বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী, ব্যাংক, বীমা, শিল্প ও মিডিয়া মালিক গোষ্ঠী। ৩. সরকারের ঋণখেলাপি, সরকারি ব্যাংকের ঋণ সুবিধাবঞ্চিত ও সরকারের বিভিন্ন আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত গোষ্ঠী। ৪. বিভিন্ন বিত্তশালী ব্যক্তিবর্গ, যারা সরকারের কাছে অগ্রহণযোগ্যতার কারণে বিত্তের প্রসারে বাধাগ্রস্ত। ৫. বিভিন্ন ব্যাংক-বীমা, পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন ও বিভিন্ন লাইসেন্স, পারমিট, বড় বড় একচেটিয়া ঠিকাদারি ও ব্যবসা প্রত্যাশী সরকারের কাছে অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ। ৬. রাষ্ট্রদূত, বিদেশে বাণিজ্যিক/তথ্য অ্যাটাসে হতে আগ্রহী সরকারের কাছে অগ্রহণযোগ্য বেসামরিক আমলা ও তথ্য ক্যাডার ও সাংবাদিক ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ। ৭. বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতরা যারা সরকারের সঙ্গে আস্থাশীল সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়, তারা তাদের ব্যর্থতা থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের কাজে লাগাতে চেষ্টা করছে। ৫ জানুয়ারির আগেও তারা সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করে আমাদের নির্বাচনের বাইরে রাখার নীল-নকশা বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করেছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। এ ছাড়াও কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীসমূহ যারা অব্যাহতভাবে আমাদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করছে। আমরা যদি আমাদের নেতা-কর্মীদের বিপদের দিকে ঠেলে দিয়ে তাদের প্ররোচিত পথে আন্দোলনে নামার পর সরকার যদি এই আলোচিত ধুরন্ধর গোষ্ঠীগুলোকে কাছে টেনে নেয়, তখন আমাদের নেতা-কর্মীদের ভাগ্যে কি হবে, তা বিবেচনায় রেখে আন্দোলনে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আমরা কোনো আদর্শের লড়াই করছি না। আমাদের লড়াই হচ্ছে ক্ষমতার লড়াই। এই লড়াইয়ে যেই জিতুক ক্ষমতা সেই নিরঙ্কুশ ভোগ করতে পারবে না। ধুরন্ধর গোষ্ঠী, সে আমাদেরই হোক বা বর্তমানের সরকারদলীয়ই হোক, তাদের উভয়ের সঙ্গে ক্ষমতা অবশ্যই ভাগাভাগি করতে হবে। এমন একটি কায়েমি স্বার্থবাদী রাজনৈতিক অবস্থাতে সরকার সব সময় সুবিধাজনক অবস্থায় থাকে। সরকার যদি ক্ষমতা ভাগাভাগি করে তাহলে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তির টিকে থাকা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার নেতা আমরা, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণ করি আমরা, খেলার মাঠেও আমরা প্রভাবশালী কিন্তু সেখানেও আমরা আন্দোলন করতে পারি না। আমরা অনেকে চিকিৎসার জন্যও বিদেশে যেতে পারি না, নেতা-কর্মীদের জেলখানা থেকে বের করে আনতে পারি না, আন্দোলনে আহত কর্মীদের নূ্যনতম চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারি না, অথচ অনেকে নেত্রীর সঙ্গে অবাধে ব্যক্তিগত সফরে বিদেশে যেতে পারি যেখানে দল বেঁধে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। তখন অর্থেরও অভাব হয় না এবং বিমান বন্দরে কেউ বাধাপ্রাপ্তও হয় না। আমরাও আন্দোলন করতে চাই। আন্দোলন করতে চাই আমাদের স্বার্থে- আমাদের প্রয়োজনে। আমাদের নিজস্ব পথ ও পরিকল্পনায়। কোনো কায়েমি স্বার্থবাদী ও ধুরন্ধরদের সরকারের সঙ্গে দরকষাকষির সুবিধা করে দেওয়ার জন্য আমরা আন্দোলন করতে চাই না। আমরা নিজেরা ক্ষমতায় যেতে চাই, অন্য কাউকে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ করে দেওয়ার জন্য গাধার মতো আন্দোলন অবশ্যই করতে চাই না। নিজের বুদ্ধিতে রাজা হবো কিন্তু নির্বোধের মতো পরের বুদ্ধিতে গাধা হবো না। মানুষ পরিবর্তন চায়। গাধার মতো মুলা দেখে দৌড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। জনগণ খালেদা জিয়ার পক্ষে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। একটি ভোট দেওয়ার সুযোগ। হটকারিতা থেকে সাবধান থাকতে হবে। ধৈর্যই এখন বড় শক্তি। সংঘাত এড়িয়ে চলতে হবে। সরকারকে উন্নয়নের নামে লুণ্ঠনে ব্যস্ত রেখে নিজের দলকে গোছাতে হবে, আগামী নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য