১. ঘরজামাইদের জীবন গর্বের নাকি গ্লানির, পাঠকমাত্রই জানেন। ডান-বাঁয়ে দেখা কোনো ঘরজামাইয়ের গল্প লিখতে বসিনি। সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দল হয় রাজনীতির প্রাণ। সরকার ও জনগণ তাদের সমীহ করে। সম্মান করে। জনগণের হয়ে সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়। কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে জবাবদিহিতা আদায় করে। কিন্তু আজকের রাজনীতিতে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন-উত্তর সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সরকারের জবাবদিহিতা আদায়ের জায়গা থেকে সরে ঘরজামাই হয়ে উঠেছে। সমালোচনা নয়, জয়গান করে। সরকার যেন কোথাও ভুল করে না। ভুল করতে পারেই না। এমন ঘরজামাই বিরোধী দল সরকারকে স্বৈরশাসক বানায়। একনায়ক বানায়। স্বাধীনতা-উত্তরকালে ন্যাপ-সিপিবি সংসদের বাইরে আওয়ামী লীগের ঘরজামাই হয়েছিল। বাকশালে সাইনবোর্ড খুলে সতীত্ব বিসর্জন দিয়েছিল। অবশেষে ময়দানে বিলুপ্ত। এখন সরকারের ঘরজামাই জাতীয় পার্টি। ঘরজামাই জাতীয় পার্টি সরকার ছেড়ে যাচ্ছে না। ঘরজামাই জাতীয় পার্টি, অনুগত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা আর নিঃশর্ত ১৪ দল নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকারের যাত্রা অব্যাহত থাকবে। সর্বশেষ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদির মন্তব্য ‘বঙ্গবন্ধু দেশ গড়েছেন, রক্ষা করছেন শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির জন্য ভারত সবকিছুই করবে। বাংলাদেশ ও ভারতের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সবই একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত।’ এ মন্তব্যের পর আরেক দফা বিদেশনির্ভর রাজনীতিতে পথহাঁটা বিএনপি হোঁচট খেল। পর্দার অন্তরালে বিএনপি নেতারা এবং তাদের সুহৃদরা বলাবলি করছিলেন, পশ্চিমা শক্তি বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য ভারতকে আস্থায় নেবে। এমনকি অনেকের ভাবনা ছিল জাতিসংঘের আসন্ন অধিবেশনে যোগদানকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠককালে নরেন্দ্র মোদি সবাইকে নিয়ে নির্বাচনের তাগিদ দেবেন। কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী দায়িত্ব লাভের পর প্রথম দিল্লি সফরকালে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভের পর যে বক্তব্য পেয়েছেন তাতে এখানকার সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তির আশার বেলুন চুপসে গেছে। মাহমুদ আলী ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বাংলাদেশ সফরের দাওয়াতও পৌঁছে দিয়েছেন। এদিকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল যখন ফাঁসির দণ্ড দিয়েছিলেন তখন দেশের রাজনীতি চরম সহিংসতায়ই রূপ নেয়নি, ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছিল। কিন্তু উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ ফাঁসির দণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় দিলে জামায়াত দুই দিনের ঢিলেঢালা হরতাল ডাকলে প্রথম দিন জনজীবনে স্বস্তি ছিল। রাজনীতির অন্দরমহলে বিএনপিকে একা করার প্রক্রিয়ায় জামায়াতের সঙ্গে সরকারের একটি গোপন সমঝোতার গন্ধ বা আভাস অনেকেই পাচ্ছেন। যদিও দুই তরফ থেকেই তা অস্বীকার করা হয়েছে। বিষয়টি রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। অনেকেই বলছেন, ’৭৫-উত্তরকালে কমিউনিস্ট পার্টি কৌশল বলে সেনাশাসক জিয়ার খাল কাটায় যোগ দিতে পারলে জামায়াতও সরকারের দমননীতি থেকে নিজেদের রক্ষায় বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ করতে পারবে।
২. ভিশন-৪১ নিয়ে পথহাঁটা আওয়ামী লীগ সরকার মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে তো ভাবছেই না, অনেকের ধারণা আগামীতে মেয়াদ শেষের ভোটযুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার পুত্ররা ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত হয়ে অযোগ্যই হচ্ছেন না, পুত্ররা নির্বাসিত জীবনে থাকলেও বিএনপি নেত্রীকে কারাগারেও যেতে হতে পারে। বিএনপির আরও নেতা-কর্মীর কপালে জুটতে পারে নানা মামলায় কারাবাস। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ে জাতীয় নির্বাচন হলেও বিএনপিকে শক্তিশালীরূপে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে দূরে রাখার ছক করা হচ্ছে। নতুন নামে সেখানে আলাদাভাবে জামায়াতের অংশগ্রহণের সম্ভাবনাও দেখছেন অনেকে। এভাবেই আগামী জাতীয় নির্বাচনেও ক্ষমতায় আসতে চায় আওয়ামী লীগ। জনপ্রিয়তার পাল্লা দূরে রেখে ক্ষমতার রাজনীতির কূটকৌশলের পথেই হাঁটছে আওয়ামী লীগ। পর্যবেক্ষকদের মতে, ২১ আগস্টের নৃশংস গ্রেনেড হামলা শেখ হাসিনাকে বিরোধী দলের রাজনীতির পথ থেকে অনেক দূর সরিয়ে দিয়েছে। নিজের জীবনের নিরাপত্তাহীনতাই নয়, দলের নেতা-কর্মীদের লাশের বহর কাঁধে নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জমানায় যে পথ তাকে হাঁটতে হয়েছিল সেই দুর্বিষহ পথে তিনি যেতে নারাজ বলেই পর্যবেক্ষকদের অভিমত। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচনের যে ছক নেওয়া হয়েছিল ৫ জানুয়ারির প্রশ্নবিদ্ধ ভোটের মাধ্যমে, তা অর্জন করেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপিকে ক্ষমতার বাইরে দিয়ে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে ঘরজামাইয়ের মতো খাইয়ে-পরিয়ে রাখা হয়েছে। এখন জাতীয় পার্টি সরকারে যায় আর সংসদে ঘুমায়। চিরাচরিতভাবে সমাজ জীবনে ঘরজামাইদের যেভাবে জামাইয়ের মর্যাদা ও আদর-যত্ন না দিলেও খেয়ে-পরে জীবনধারণের সুযোগ দেওয়া হয় এরশাদের জাতীয় পার্টিকে তা-ই দেওয়া হয়েছে। গৃহপালিত বিরোধী দলের সীমা অতিক্রম করে সরকারের মন্ত্রিসভায়ও ঠাঁই দেওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টিকে। সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় বিরোধী দলের যে সম্মান, সমাদর, সমীহ দেওয়ার কথা তা দিতে হচ্ছে না। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যেভাবে এসেছিলেন যদি অদৃশ্য শক্তির পরামর্শ বা উদ্ভূত পরিস্থিতির মুখে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা না দিতেন তাহলে আজকে জাতীয় পার্টি ৮০টির মতো আসন নিয়ে সংসদে বিরোধী দলের জায়গা দখল করতে পারত। এরশাদ হতেন তখন বিরোধী দলের নেতা। এ ক্ষেত্রে সমঝোতার বিরোধী দল হলেও তাতে সংসদ যেমন প্রাণবন্ত হতো তেমনি সংসদে সরকার ও বিরোধী দলের উজ্জ্বলতাও কিছুটা বাড়ত। জাতীয় পার্টি ও মাঠের রাজনীতিতে অনেক শক্তিশালী আর সুসংগঠিত হওয়ার সুযোগ পেত। এখনকার মতো লেজে-গোবরে অবস্থা হতো না। এখন সংসদে বিরোধী দলের অবস্থা হচ্ছে সুরঞ্জিত সেনের বক্তব্যের মতো ‘মাথাটা বিরোধী দলের, লেজটা সরকারের’। জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের ছেড়ে আসতে হবে- এ কথা বলায় জাতীয় পার্টির শেষ শক্তিস্থল রংপুরেই এখন গৃহদাহ। রাঙ্গা, তাজুলের বহিষ্কার নিয়ে পার্টিতে বিভক্তি। সারা দেশে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা এখনো পড়ে আছেন এরশাদের দিকে তাকিয়েই। এটি যেমন সত্য তেমনি বার বার তার অবস্থান পরিবর্তন নেতা-কর্মীদের করেছে চরম হতাশ। পার্টিকে করেছে দুর্বল। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি সবাইকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কথা বললেও শেষ হাল ধরেছিলেন রওশন এরশাদ। তার সঙ্গে শক্তি হয়ে মূলত কাজ করেছিলেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন বাবলু ও তাজুল ইসলাম চৌধুরী। শেষজন রওশন এরশাদের আস্থাভাজন হিসেবে এখন পরিচিতি পেলেও প্রথম দুজন বরাবরই এরশাদের আস্থাভাজন। স্বতন্ত্র হিসেবে যারা জিতে এসেছেন তারা আওয়ামী লীগের প্রতি অনুগত। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়েই ১৪ দলের শরিক, বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষকদের মতে, জাতীয় পার্টিতে অস্থিরতা যতই থাকুক সরকারবিরোধী পথ নিতে পারছে না। ঘরজামাইয়ের মতোই থাকতে হচ্ছে। ১৪ দলের শরিক ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরাও আনুগত্যের পরীক্ষা দিয়েই পথ হাঁটবেন। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল পাসকালে জাতীয় পার্টি তো একযোগে সমর্থন দিলই, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরাও না দিয়ে পারলেন না। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় এমন দৃশ্য বিরল। পঞ্চম সংসদে একাদশ ও দ্বাদশ সংশোধনী বিল সরকার ও বিরোধী দলের সম্মিলিত সমর্থনে পাস হলেও সেই সংসদ ছিল জনগণের ব্যালট বিপ্লবে একটি প্রকৃত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে। তাই তার রূপ, রস, যৌবন ছিল অন্যরকম। আকর্ষণ ছিল চোখধাঁধানো। আর একাদশ-দ্বাদশ সংশোধনী ও ষোড়শ সংশোধনী তো এক কথা নয়। ৫ জানুয়ারির সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার নির্বাচনে সংসদ গঠিত হলেও এটি রূপ, রস, গন্ধহীন, ধূসর। এর সাংবিধানিক বৈধতা থাকলেও উজ্জ্বলতা নেই। একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যও ষোড়শ সংশোধনী বিল পাসের বিরোধিতা করে ওয়াকআউট করেননি। বাকিদের না হয় সংবিধানপ্রণেতাদের সোর্ড অব ডেমোক্রেসি খ্যাত অনুচ্ছেদ ৭০ ধারায় হাত-পা ছিল বাঁধা। প্রশ্ন হচ্ছে, এত ঘটনা শেষে অতঃপর রাজনীতি কোন পথে যাচ্ছে?
৩. এরশাদ যতই বলুন জাতীয় পার্টি বিএনপির শূন্যস্থান পূরণ করে কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকা নেবে, সেখানে মানুষের আস্থার সংকট দেখা দেয়। ’৯০-উত্তরকাল থেকে এ পর্যন্ত মামলার জালে বন্দী এরশাদকে স্বাধীনভাবে রাজনীতিতে সাঁতার কাটার সুযোগ কখনো দেওয়া হয়নি। এবার দেওয়া হবে সেই সম্ভাবনাও নেই। বিরোধী দলকে তাই সংসদে ফরমালিন নিয়েই আলোচনামুখর থাকতে হবে। এরশাদকে বিরোধী দলের নেতা করে সংসদকে প্রাণবন্ত করার কথা কেউ কেউ ভাবলেও পর্যবেক্ষকদের মতে, শেখ হাসিনার সেই ঝুঁকি নেওয়ার সুযোগ নেই। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এরশাদ যে ধাক্কা দিয়েছেন তার ধকল এখনো তিনি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তাই আর যাই হোক, এরশাদকে হাত-পা খোলা রেখে সাঁতার কাটতে দিচ্ছেন না। জাতীয় পার্টিকে জামাইয়ের মর্যাদা ও সম্মান নয়, ক্ষমতার অংশীদারদের সঙ্গে ঘরজামাই হয়েই খেয়ে-পরে বাঁচতে হবে। জাতীয় পার্টির অনেকেও সেভাবেই স্বতন্ত্র সত্তা ভুলে গিয়ে কথা বলছেন। কাজ করছেন।
৪. সরকারবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি নেতা-কর্মীরা এক কঠিন সময় পার করছেন। হতাশার চাদরে ঢাকা বিএনপি বড় ধরনের আন্দোলনে নামতে পারবে এমন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। নেতা-কর্মীরা আদালতে দৌড়াবেন নাকি রাজপথে লড়বেন, সে প্রশ্নই সামনে ঝুলছে। তবুও মানুষের প্রশ্নের শেষ নেই। অতঃপর কী হবে? ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে শিবিরের হরতালের দিন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বৈঠকসূচি বাতিলের মাধ্যমে যে খেসারত দেওয়া শুরু হয়েছিল বিদেশনির্ভর রাজনীতির পথে পা বাড়ানো দলটিকে এখন তার চড়া মাশুল গুনতে হচ্ছে। কংগ্রেসের করুণ পরাজয় ও নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক ভারতের ক্ষমতায় বিজেপির অভিষেক দেখে এখানকার বিএনপি যখন অতিমাত্রায় উল্লসিত হয়ে উঠেছিল তখনই প্রশ্ন এসেছিল- কেন এ উল্লাস? নরেন্দ্র মোদি ভারতের নিরাপত্তার স্বার্থ বড় করে দেখবেন নাকি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কে ক্ষমতায় এলো, কে গেল সেটি দেখবেন? তিস্তা চুক্তি নিয়ে বাগড়া বসানো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনী লড়াইয়ে নরেন্দ্র মোদিকে যেভাবে আক্রমণ করেছিলেন সারদা কেলেঙ্কারির সুযোগে দিল্লি সরকারের এখন হিসাব নেওয়ার পালা। সেই পালা শুরু হয়েছে। সিবিআই প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানেই কাজ করে। ভারতের নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার পর তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মুকুল রায় রাতের আঁধারে দিল্লি সফরে গেলেও কাজ হয়নি। পশ্চিমবঙ্গে মমতার দুর্গ ভাঙতে নির্বাচনের আগেই নরেন্দ্র মোদি ছয় দফা হানা দিয়েছেন। এখন ছেড়ে দেবেন এমনটি ভাবার কারণ নেই। কংগ্রেস ভোটযুদ্ধে বিদায় নিয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় মোদির নেতৃত্বে বিজেপি এসেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসবাদ দমনের পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে অমীমাংসিত ইস্যুর সমাধানে পথহাঁটা অব্যাহত রেখেছেন। রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণী অবস্থান থেকে হিন্দুত্ববাদের স্লোগান দিয়ে উঠে আসা বিজেপির নরেন্দ্র মোদি আর যাই হোক এখানে আইএসআইয়ের তৎপরতা বাড়ুক, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের ফের উত্থান হোক সেটি চাইবেন না। এটি আগেই অনেকে বলে এসেছেন। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক ও পারস্পরিক সফরের আগেই তার আলামত মাহমুদ আলীর সফরে দেখা যাচ্ছে। এখানেই শেখ হাসিনার চিবুকে হাসির ঝিলিক, খালেদার চোখে বিস্ময়, বিষণ্নতা। তবুও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে অতঃপর কী হবে আমাদের রাজনীতি? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের শীতল সম্পর্ক বিএনপি খুশি মনে দেখলেও শেখ হাসিনা যে জাপান-চীন-রাশিয়ার সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে সম্পর্কের নতুন দুয়ার খুলেছেন সেটিই তাকে পশ্চিমাদের সঙ্গে বরফ গলাতে সহায়তা দেবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।
৫. প্রশ্ন সর্বত্রই উঠছে- জনগণের মতামত উপেক্ষা করে নির্বিঘ্নে শেখ হাসিনার সরকার কীভাবে ভিশন-৪১ লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাবে? রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো সুযোগ যে নেই তা ইতিমধ্যে দৃশ্যমান। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে একটি উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠীর যে সমর্থন সেটিকে অবজ্ঞা করার সুযোগই বা কতদূর? অন্যদিকে দেশের ব্যবসায়ী সমাজ থেকে সাধারণ মানুষ আর হরতাল-অবরোধ, সহিংসতার রাজনীতি যেমন দেখতে চায় না, অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার কর্মসূচি যেমন আশা করে না তেমনি এটিও ঠিক সরকারকে দেখতে চায় গণমুখী ও জবাবদিহিমূলক। সরকার কি দুর্বল ঘরজামাই বিরোধী দল সংসদে বসিয়ে, মুখরোচক কথাবার্তায় অভ্যস্ত গণবিচ্ছিন্ন রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার ভাগ দিয়ে দীর্ঘ পথ নির্বিঘ্নে পাড়ি দিতে পারবে? দেশের ব্যবসায়ী সমাজসহ পেশাজীবীদের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন তৈরি হবে নাকি সহযোগিতার উষ্ণ দুয়ার খুল দেবে? প্রশাসনকে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বাধতে বাধতে দলীয়করণের চূড়ান্ত পথে নিয়ে যাবে নাকি মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতার বিচারে জনগণের কল্যাণে পেশাদারিত্বের ওপর দাঁড় করাবে? গণমাধ্যমকে তির্যক বাক্যবাণে দূরে ঠেলে দেবে নাকি আস্থায় নেবে? ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে? শেয়ার মার্কেট চাঙ্গা করে রিক্ত নিঃস্ব বিনিয়োগকারীদের দাঁড় করাতে পদক্ষেপ নেবে? নাকি আবার চাঙ্গা আবার পতন? শাসক দলের অভ্যন্তরীণ সংঘাত, সংঘর্ষ কঠোর হাতে দমনের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে? দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত ও উৎসাহদানে প্যাকেজ প্রোগ্রাম নিয়ে মানুষের আস্থায় অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনবে? দেশজুড়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে অভিযান চালাবে? উন্নয়ন বরাদ্দের অর্থ লুটপাট আর সীমাহীন দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে সরকার কঠোর ভূমিকা নেবে? জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংলাপের দরজা খুলে দেবে? সমঝোতার রাজনীতির বাতাবরণ তৈরি হবে নাকি সরকার ক্ষমতার সিঁড়িপথে তার লক্ষ্য অর্জনে হেঁটে যাবে? কিছু দিন আগে শেখ হাসিনার কট্টর সমালোচক এক সাংবাদিক আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাকে বলেছেন, আপনাদের নেত্রীর সঙ্গে বিএনপি পারবে না। যিনি ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পরিশ্রম করেন তার সঙ্গে পারে কীভাবে? বিএনপি চ্যাপ্টার আপাতত ক্লোজড! এটিও বললেন তিনি। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অনেককে দেখলে মনে হয় তারা ক্ষমতায় আজীবন থাকবেন! এর কারণ আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতানির্ভর। ক্ষমতা শেখ হাসিনানির্ভর। দল শক্তিশালী জনপ্রিয় না হলে এই ক্ষমতার দৌড় কত দূর? সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল পাসে সবাইকে এক করতে শেখ হাসিনা তৎপর ছিলেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও দলের সাধারণ সম্পাদক বিদেশে কেন? তবুও প্রশ্ন থেকে যায়, অতঃপর কী হবে? ঘরজামাই জাতীয় পার্টি, অনুগত শরিক আর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের নিয়ে নির্বিঘ্নে পথচলা কতকাল?
শিরোনাম
- শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠাই হবে মে দিবসের অঙ্গীকার : শিমুল বিশ্বাস
- লিবিয়া থেকে কাল দেশে ফিরছেন ১৭৭ বাংলাদেশি
- চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
- প্রাক-প্রাথমিকে ১৫০০ বিদ্যালয়ে স্মার্ট টিভি-ল্যাপটপ দেবে সরকার
- জ্বালানি তেলের নতুন দাম নির্ধারণ
- দাবানলে জ্বলছে ইসরায়েল, হন্য হয়ে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা
- দেশব্যাপী শব্দদূষণবিরোধী অভিযানে ২৬৫ হাইড্রোলিক হর্ন জব্দ
- তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে তুরস্কের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
- পুঁজিবাজারে সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে
- গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু নেই, হাসপাতালে ভর্তি ২৯
- দেশের রিজার্ভ বেড়ে ২৭ বিলিয়ন ডলার
- মুহুর্মুহু রকেট হামলায় বিপর্যস্ত মার্কিন রণতরী, বাধ্য হলো পিছু হটতে
- ছাত্রলীগের নির্যাতনের সহযোগী শিক্ষক-কর্মকর্তার বিচারের দাবিতে ঢাবি ছাত্রদলের বিক্ষোভ
- মিরাজের ঘূর্ণিতে তিনদিনেই জিতল বাংলাদেশ
- প্রিপেইড গ্যাস মিটার নিয়ে প্রতারণা এড়াতে তিতাসের সতর্কবার্তা
- শিল্পীদের মেধাসম্পদ সংরক্ষণে কাজ করছে সরকার : শিল্প উপদেষ্টা
- সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
- ১১৯তম প্রাইজ বন্ডের ড্র, প্রথম বিজয়ী নম্বর ০২৬৪২৫৫
- রাজধানীর উত্তরায় ঢাবির বাসে হামলা, গ্রেফতার ৫
- প্রথম আলোর বিরুদ্ধে মামলার আবেদনকারীকে হুমকির অভিযোগ
মন্তব্য প্রতিবেদন
ঘরজামাই জাপা, মোদির মন্তব্য, অতঃপর...
পীর হাবিবুর রহমান
অনলাইন ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
১৪ মিনিট আগে | জাতীয়

সাবেক সংসদ সদস্য শাহরিন ইসলাম তুহিনের মুক্তির দাবিতে নীলফামারীতে আইনজীবীদের বিক্ষোভ
৩৩ মিনিট আগে | দেশগ্রাম