লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও শাসক লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া একে অপরকে আবারও হুমকি-পাল্টা হুমকি দিতে শুরু করেছেন। এটা লক্ষণীয় যে, বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে লীগ সরকারের মন্ত্রী-মিনিস্টার এবং শাসক লীগের হাফ-কোয়ার্টার সাইজের নেতারাও কিছুদিন ধরে বেশ আক্রমণাত্দক বক্তব্য দিয়ে আসছেন। এরা বেগম জিয়াকে জেলে ঢোকানোরও হুমকি দিচ্ছেন। শেষটায় খোদ প্রধানমন্ত্রীও বেগম জিয়াকে জেলের ভয় দেখালেন। তার বক্তব্যে কোনো অস্পষ্টতা নেই। মনে হচ্ছে, এতদিন অন্যরা এ ব্যাপারে যেসব হুমকি দিয়েছেন তা নিছক বক্তৃতাবাজি ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে এখন এটা প্রায় একেবারেই পরিষ্কার যে, বেগম জিয়াকে গ্রেফতারের ব্যাপারে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত সরকার হয়তো নিয়েই ফেলেছে। বেগম খালেদা জিয়া এতদিন নিজের ব্যাপারে চুপ ছিলেন। এবার একেবারে ফেটে পড়লেন। ২৩ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আয়োজিত এক জনসভায় তিনি স্পষ্টত প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া গ্রেফতারের হুমকিরই জবাব দিলেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর গণভবনে শাসক লীগ কার্যনির্বাহী সংসদ এবং দলের উপদেষ্টা পরিষদের এক গুরুত্বপূর্ণ যৌথসভায় বিএনপি নেত্রীর কঠোর সমালোচনা করেন লীগনেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা বর্তমান সংসদের হাতে তুলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর প্রতিবাদে ২০-দলীয় জোটের ডাকা হরতালের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'হরতাল-অবরোধের মাধ্যমে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে তা কঠোরহস্তে দমন করা হবে। কাউকে ছাড়া হবে না। প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকেও আইনের আওতায় এনে গ্রেফতার করা হবে' (দৈনিক যুগান্তর, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪)।
কড়া জবাবই দিয়েছেন বেগম জিয়াও। তিনি বলেছেন, 'আমাকে জেলের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমি কখনোই গ্রেফতারে ভয় পাই না। আমি বরং সরকারকে বলব, আমাকে বন্দী করার আগে নিজের রাস্তা পরিষ্কার করে রাখুন। নিজেদের পাসপোর্ট-ভিসা লাগিয়ে রাখুন। নইলে আলেম-উলামাসহ জনগণ এমনভাবে রাস্তায় নামবে যে, আপনারা পালানোর পথও পাবেন না।' তিনি আরও বলেন, বিচারপতিদের হাত-পা বেঁধে রাখতে ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়েছে। এটা বাতিল করতে হবে। নইলে এই বাতিলের দাবিতে একটা হরতালই শেষ নয়; প্রয়োজনে যে কোনো কর্মসূচি দিতে আমরা প্রস্তুত।'
দুই নেত্রীর বক্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার যে, সরকার যেমন প্রকৃত বিরোধী দল ও সম্ভাব্য গণআন্দোলন মোকাবিলায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতারের আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটও এমন অবস্থান নিয়ে ফেলেছে যে, তারাও কোনো কিছু আর বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেবে না। সর্বত্র একটা আতঙ্কাবস্থা বিরাজ করছে। প্রকৃত বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত লীগ সরকারের কঠোর অবস্থানের মোকাবিলায় কতটা কী করতে পারবে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন থাকলেও তাদের দাবি ও রাজনৈতিক অবস্থানের ন্যায্যতা এখন আর কেউ অস্বীকার করছে না। প্রধানমন্ত্রী তার উপরোলি্লখিত সভার বক্তৃতায় বেগম খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতারের ভয় দেখানোর আগে বলেছেন, '৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ শান্তিপূর্ণ অবস্থায় ফিরে এসেছে। দেশের মানুষ এখন শান্তিতে আছে। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র মজবুত হয়েছে। তারা শক্তিশালী গণতন্ত্র চায় না বলেই হরতাল ডেকেছে।' বস্তুত দশম সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের উদ্ভব। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবলিত সংবিধানের নির্দেশ বাতিল করে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সব সুযোগ-সম্ভাবনা বিনাশ করে। লীগ সরকার পরিকল্পিতভাবেই তা করেছে বলে দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মনে করে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাচনের বাইরে রেখে যেনতেন প্রকারের একটা 'ভোট ভোট খেলা'র মাধ্যমে পুনরায় রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে আনার মতলবেই শাসকলীগ অন্যায্য কাজটি করেছে, এতে এখন লীগ সমর্থক ও বেনিফিশিয়ারিরা ছাড়া অন্য কারও মধ্যেই কোনো সন্দেহ নেই বলে মনে হয়। বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জন ও তীব্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এই নির্বাচন হচ্ছে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। এই নির্বাচন শেষেই একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি তার কথা ফিরিয়ে নিয়ে এখন বলছেন, জনগণ নাকি তাদের পাঁচ বছর দেশ শাসনের ক্ষমতা দিয়েছে। তিনি দাবি করছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে নাকি শান্তি ফিরে এসেছে। অর্থাৎ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে বিরূপ সমালোচনাকে কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা।
লীগ সরকার ও শাসক লীগের দায়িত্বশীল নেতারা অবিরাম বলে যাচ্ছেন, ৫ জানুয়ারির 'নির্বাচনী ট্রেন' মিস করেছে বিএনপি ও তার মিত্ররা, কাজেই তাদের পাঁচ বছর পরের ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কী করে অবলীলায় শরম লাগার মতো কথাগুলো তারা বলে যাচ্ছেন ভাবতেই অবাক লাগে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পক্ষে তারা যেভাবে সাফাই গেয়ে চলেছেন তা থেকে যে কোনো গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ বলতেই পারেন, দেশে গণতন্ত্র, সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা কোনো কিছুই ভবিষ্যতে নিরাপদ থাকবে না, যদি জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে জেগে না ওঠে। কেননা, এই সবকিছুই জনগণের জন্য; তাই জনগণকেই তা রক্ষা করতে হবে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ৩০০ সাধারণ আসনের মধ্যে ১৫৩ আসনেই কোনো নির্বাচন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। সবাই বিনা ভোটে পাস-অটো এমপি। অথচ আমাদের সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা আছে, 'একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহ হইতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত তিনশত সদস্য লইয়া এবং এই অনুচ্ছেদের (৩) দফার কার্যকরতাকালে উক্ত দফায় বর্ণিত (৫০টি সংরক্ষিত মহিলা আসন) সদস্যদিগকে লইয়া সংসদ গঠিত হইবে, সদস্যগণ সংসদ-সদস্য বলিয়া অভিহিত হইবেন।' প্রিয় পাঠক, সংবিধানের এই নির্দেশ মান্য করলে প্রত্যক্ষ নির্বাচন ছাড়া বিনা ভোটে যাদের নির্বাচন কমিশন (প্রকৃত বিরোধী দলের ভাষায় আজ্ঞাবহ) নির্বাচিত ঘোষণা করেছে তাদের নৈতিক অবস্থানটা আসলে কোথায় দাঁড়ায়? শুধু তাদের কেন? বাকি ১৪৭ আসনে ৫ জানুয়ারি যে ভোট ভোট খেলাটি হয়েছে তাতে প্রকৃত অর্থে কত পার্সেন্ট ভোটার উপস্থিত হয়েছিলেন? বিএনপি-জামায়াতের শতকরা পাঁচ (৫) ভাগ ভোট পড়ার হিসাবটা না হয় বাদ দিলাম; ৩৯টি নির্বাচনী কেন্দ্রে একটি ভোটও না পড়ার ঘটনা ভোট কাস্টিংয়ের বাস্তবতাটা কী পরিষ্কার করে দেয় না? এই ৩০০ এমপির ভোটে যাদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচিত বলে নির্বাচন কমিশন এলান জারি করেছে তাদের নৈতিক অবস্থানটিইবা কী? বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দল এই সংসদ ও সরকারকে অবৈধ বলছেন। দেশের বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন প্রবীণ আইনজীবী এই সংসদ নিয়ে সরকারি অবস্থানকে সমর্থন করছেন না। এমন একটি সংসদ যেখানে গণতান্ত্রিক বহির্বিশ্বেও বিতর্কিত, সেই সংসদের ক্ষমতাবলে গঠিত সরকার কর্তৃক বিপুলভাবে জনসমর্থিত বিরোধী রাজনৈতিক দল, দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ও গণতান্ত্রিক দুনিয়ার জনমতকে উপেক্ষা ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা সরকারের ভেতরকার সুস্থতার লক্ষণ নয়।
নিজেদের সুবিধামতো সংবিধান পাল্টিয়েছে এবং পাল্টাচ্ছে সরকার। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থাকে পর্যুদস্ত করার পর এবার বিচারব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করার মানসে ষোড়শ সংশোধনী পাস করেছে সরকার। বর্তমান সংসদে তারাই সব। যা খুশি তা-ই করতে পারে। বিচারকদের ওপর মনস্তাত্তি্বক চাপ সৃষ্টি করে উচ্চ আদালত থেকে সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যেই বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা এই সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে বলে বলছেন সরকারের বিরোধী পক্ষ। বেগম জিয়া বলেছেন, বিচারপতিদের হাত-পা বেঁধে রাখতে ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়েছে। ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, ড. শাহ্দীন মালিক, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রমুখ আইনজীবীও এই সংশোধনীর বিরোধিতা করেছেন এবং এখনো করে চলেছেন। সরকারের আচরণে মনে হচ্ছে, তাদের হাতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীই শেষ সংশোধনী নয়। তাদের প্রয়োজনে সংবিধানে আরও ব্যবচ্ছেদ হতে পারে।
জনগণের মধ্যে শঙ্কার বিষয়টা এই জায়গায় যে, সব পরামর্শ, বিরোধিতা এবং জনমতকে উপেক্ষা-অগ্রাহ্য করে সরকারের যা খুশি তা করার প্রবণতা গোটা দেশ ও জাতিকে ভয়ঙ্কর কোনো পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে কি না? সরকার উন্নয়নের ঢোল বাজিয়ে গণতন্ত্রের দাবিকে দাবিয়ে রাখতে চাচ্ছে। অথচ এ দেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে সেই কবে থেকে। মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনার কথা আমরা বলি, গণতন্ত্রের শর্ত পূরণ না হলে সে চেতনাই তো বিনাশ হয়ে যাবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীই যদি বলেন আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র তা হলে এ প্রশ্ন তো কেউ করে বসতে পারেন- আইউব যার আমলে এমনকি এরশাদের আমলেও কিছু কিছু উন্নয়ন তো দৃশ্যমান। কিন্তু আইউব আমলে ভাসানী-মুজিব এবং বাংলাদেশে হাসিনা-খালেদা গণতন্ত্রের জন্য কেন লড়াই করেছিলেন? সারা দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত সত্য হলো, গণতন্ত্র বিপন্ন হলে উন্নয়নের ছোঁয়া জনগণকে স্পর্শ করে না। সেই উন্নয়নে উন্নতি হয় শাসকবর্গের, তাদের বেনিফিশিয়ারিদের। একমাত্র গণতন্ত্রেই উন্নয়নের হকদার হয় জনগণ। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সব কিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে ব্যক্তির বদলে সমষ্টির, দল-গোষ্ঠীর বদলে জনগণের। জনগণের নির্বাচিত সংসদই তা নিশ্চিত করে। জনগণের মত ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করা যায় না। কিন্তু স্বৈরশাসকরা তা কোথাও মানে না, মানতে চায় না। তখনই ঘটে বিপদ, বিপর্যয়। জনগণ ফুঁসে ওঠে, দ্রোহী হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী তেমন জনরোষ অথবা জনদ্রোহের আশঙ্কা করছেন? তা না হলে স্বৈরশাসকরা সচরাচর যা করে, তিনিও সেসব পদক্ষেপ কেন নিচ্ছেন? জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং জনগণের ওপর আস্থাহীন স্বৈরাচারই সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে, জনগণের বাক-স্বাধীনতা হরণ করে, বিচার বিভাগের ওপরও হস্তক্ষেপ করে। এসব যখন করা হয়, খুব ভালো ভালো কথা বলে সরকার যে মিডিয়ার স্বার্থে, বিচার বিভাগের মর্যাদার স্বার্থে, গণতন্ত্রকে দৃঢ় ভিত্তি দেওয়ার জন্যই এসব করা হচ্ছে বা হয়েছে। কিছু সুবিধাভোগী বা দলীয় 'বুদ্ধিজীবী' সব সময়ই থাকে, যারা এসব অপকর্মকে 'হালাল' সার্টিফিকেট দেয়। বর্তমান সরকারের সম্প্রচার নীতিমালা এবং সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সৎ-উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয় বলে কঠোরভাবে সমালোচিত। ধারণা করা হচ্ছে, সরকার তার বিরোধী পক্ষের ওপর একটা 'মরণ কামড়' দেওয়ার কোনো চিন্তা চূড়ান্ত করেছে এবং তার প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবেই সম্প্রচার নীতিমালার নামে সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠরোধ এবং বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের নামে কার্যত সরকারের হাতে নেওয়ার উদ্যোগ কার্যকর করেছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখে বেগম খালেদা জিয়াকেও প্রয়োজনে গ্রেফতার করার কথাটাও একেবারে মামুলি কথা নয়। এ অবস্থায় সমর্থক-অনুরাগী এমনকি জনগণের একটি বড় অংশও চায়, বেগম জিয়া ঘুরে দাঁড়াক। পারবেন কি না জানি না। তবে মনে হচ্ছে, তিনি ঘুরে দাঁড়াতে চাচ্ছেন। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল মামলার ফেইট কী হবে মানুষ যেমন বুঝছে, তিনিও বুঝছেন। তাই ধারণা করা যায়, ওই দুই মামলার চূড়ান্ত কিছু হওয়ার আগেই হয়তো তিনি ডেসপারেট ভূমিকা নিয়ে ফেলতে পারেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বেগম জিয়ার পাল্টা চ্যালেঞ্জ সেই ইঙ্গিতই হয়তো দিল।
শান্তিপ্রিয় জনগণ চায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন-পূর্ব অবস্থানে ফিরে গিয়ে তার কথা রাখুন, দশম সংসদ নির্বাচনকে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন হিসেবে মেনে নিন। তাহলে দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এবং জাতিসংঘসহ গণতান্ত্রিক দুনিয়ার পরামর্শ অনুযায়ী সব পক্ষের মধ্যে একটি অর্থপূর্ণ সংলাপের দরজা খুলে যেতে পারে। আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা হতে পারে- ২০১৯ সালে নয়, তার অনেক আগেই। কেননা, বর্তমান সংসদকে নিয়ে সরকারপক্ষ ছাড়া অন্য সবার মনে যে বৈধতা-নৈতিকতার প্রশ্ন আছে, তার ভিত্তি কিন্তু বেশ জোরালো। কাজেই অর্থবহ নির্বাচন ছাড়াই নিজেদের নির্বাচিত বলে দাবি করা লীগ সরকারকে বিএনপি-জামায়াত জোট মেনে না নেওয়াটাই বাস্তবিক ও স্বাভাবিক।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
ই-মেইল : [email protected]