মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর অর্থসম্পদ, নামে-বেনামে কেনা ও দখল করা জমির বিষয়েও তদন্ত হবে। পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালে করা অনিয়মগুলোর প্রমাণ এরই মধ্যে পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে তার কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিদেশে কোনো অর্থসম্পদ রেখেছেন কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সরকার তার ব্যাপারে সবকিছু কঠোরভাবে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশে ফিরলে তার পাসপোর্টও জব্দ করা হতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত কঠোর।
এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রণালয় থেকে অপসারণের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। সংবিধানের ২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মন্ত্রী পদত্যাগ না করলে প্রধানমন্ত্রী তাকে সরানোর জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পেশ করবেন। বর্তমানে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ সোইন ভূইঞা পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরব রয়েছেন। তারা দেশে ফিরলেই লতিফ সিদ্দিকীর অপসারণের কাজ সম্পন্ন হবে। ঈদের পর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকের মধ্য দিয়ে দল থেকেও বাদ দেওয়া হবে তাকে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী অনমনীয় অবস্থানে রয়েছেন। সূত্রমতে, ঈদের পরই লতিফ সিদ্দিকীর ব্যাপারে সরকারের সংস্থাগুলো তদন্তের কাজ জোরদার করবে। প্রাথমিকভাবে পাট মন্ত্রণালয়ের অনিয়মগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। পাশাপাশি কালিহাতী ও গাজীপুরে তার বিশাল সম্পদের বিষয়েও দুর্নীতি দমন কমিশন খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। সূত্র জানায়, লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রী থাকা অবস্থায় দখলের রাজত্ব কায়েম করে রাখেন। সরকারি বন, খাস, অর্পিত ও ব্যক্তিমালিকানা জমি, নদী- কোনো কিছুই বাদ রাখেননি। দখল করে নিজের সম্পদ বাড়িয়েছেন বছর বছর। সূত্র জানায়, বিআরডিবির জমি দখল করে কালিহাতীতে বাসা করেছেন। বিগত ছয় বছরে মন্ত্রী থাকাবস্থায় কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ করেছেন ছেলে অনিক সিদ্দিকীসহ আত্মীয়স্বজনের নামে। লতিফ সিদ্দিকীর এসব দুর্নীতির প্রমাণাদি এখন সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হাতে। সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু সেতুসংলগ্ন ইব্রাহীমাবাদ ট্রেন স্টেশনের সামনে যুগারচরে ৪ হাজার শতাংশ জমির ওপর বিশাল প্রজেক্ট গড়ে তুলেছেন লতিফ সিদ্দিকী। এর বৃহদাংশ যমুনা নদী ভরাট করে করা হয়েছে। সরকারি সম্পত্তি দখল করে মাটি ভরাটের কাজ এখনো চলছে। এ ছাড়া তার নিজ গ্রাম আওলিয়াবাদ ছাতিহাটিতে ১ হাজার শতাংশ জমির ওপর তাঁতের শাড়ির কারখানা ও মাছের খামার তৈরি করেছেন। এদিকে টাঙ্গাইল শহরের প্রাণকেন্দ্র আকুর টাকুর পাড়ায় ৭৯ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তি স্বাধীনতার পর নিজ নামে সরকারের কাছ থেকে লিজ নেন। পরে ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ওই সম্পত্তি নিজ নামে দলিল করে নেন এই মন্ত্রী। এ ছাড়া গাজীপুরে লতিফ সিদ্দিকী বন বিভাগের বিশাল জমি দখল করেছেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর রয়েছে। সূত্র জানায়, সরকারের কয়েক শ বিঘা জমি দখলে নিয়ে বাউন্ডারি করে রেখেছেন হালের বিতর্কিত এই মন্ত্রী। গাজীপুর ইজ্জতপুর রেল স্টেশনের পাশে বন বিভাগের মূল্যবান ২২ বিঘা জমি মন্ত্রী দখলে নেওয়ার পর থানায় চারটি মামলা হয়েছে। জিডি হয় একটি। মামলা ও জিডি হয় মন্ত্রীর লোকজনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া গাজীপুর শহরে সরকারের খাস জমি দখল করে ছেলের নামে বাড়িও করেছেন তিনি। সূত্র জানায়, বিগত মহাজোট সরকারের সময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় একের পর এক দুর্নীতির মাধ্যমে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারের সম্পদ পানির দরে বিক্রি করেছিলেন এই মন্ত্রী। সরকারি সম্পত্তি পানির দরে বিক্রি করলেও নিজে হয়েছেন বিত্তবৈভবের মালিক। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে গঠিত কমিটির তদন্তেও বেরিয়ে এসেছে তার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিভিন্ন খতিয়ান। ইতিমধ্যে কমিটি মন্ত্রীর পাহাড়সম দুর্নীতির প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, যাতে লতিফ সিদ্দিকীর দুর্নীতির প্রায় অর্ধশত প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর এই তার বিরুদ্ধে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। গোয়েন্দারা সেই অভিযোগেরও সত্যতা খুঁজে পাচ্ছেন। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা করে এই মন্ত্রী হাজার কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেছেন, বহু বিতর্কিত ঘটনার জন্মদানকারী বেপরোয়া এই মন্ত্রী এ যাত্রায় আর রক্ষা পাচ্ছেন না কোনোভাবেই। অনিয়ম-দুর্নীতি, লুটপাট, ভিওআইপি ব্যবসা, জমিসহ সরকারি মিল বিক্রি করা; ঢাকার মতিঝিলে ১৫০ কোটি টাকার জমি নিজ স্ত্রীর সমিতির নামে ১ কোটি টাকায় লিজ দেওয়া, পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে ফ্ল্যাট, গাড়িসহ ব্যক্তিগত সামগ্রী কেনা; খাস, অর্পিত ও নদী দখল করে নিজ সম্পদ বাড়ানো; পুত্র, আত্মীয়স্বজনসহ নামে-বেনামে বহু সম্পদের মালিক হয়েছেন বিগত ছয় বছরে লতিফ সিদ্দিকী। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে তার এসব অপকর্মের তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। বিদেশ থেকে ফিরলেই সেসব অভিযোগের মুখোমুখি হতে হবে তাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থা সে লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে।
শিরোনাম
- ‘অপমান থেকে বাঁচতেই হিন্দি শিখেছিলাম’
- রোম সফর শেষে দেশের পথে প্রধান উপদেষ্টা
- চট্টগ্রামে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে কানাডার সহযোগিতা চাইলেন মেয়র
- চট্টগ্রামে ইয়াবা মামলায় সাজা: পাঁচ বছর কারাদণ্ড
- চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল নেতা নিহত
- সততার সাহস : ভুল স্বীকারের মর্যাদা
- লক্ষ্মীপুরে মাদ্রাসার ছাত্র অপহরণ, পাঁচ দিনেও মেলেনি খোঁজ
- কুয়াকাটায় শৈবাল চাষ নিয়ে কর্মশালা
- ২০০ রানে হেরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
- মালয়েশিয়ায় ভূমিধসে প্রাণ গেল বাংলাদেশি শ্রমিকের
- টাইমের প্রচ্ছদে নিজের চুল ‘গায়েব’ দেখে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প
- মিরপুরে অগ্নিকাণ্ড: নিহত ১৬ জনের মরদেহ ঢামেক মর্গে
- হোয়াইটওয়াশ এড়াতে বাংলাদেশের প্রয়োজন ২৯৪
- থাইল্যান্ডে মাদকসহ চার ইসরায়েলি সেনা গ্রেফতার
- অগ্নিদুর্ঘটনায় ১৬ জনের মৃত্যুতে তারেক রহমানের শোক
- অক্টোবরের ১৩ দিনে এলো ১২৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স
- মিসরে গাজা শান্তি সম্মেলন: দুই প্রেসিডেন্টের গোপন আলাপ ফাঁস
- মিরপুরে অগ্নিকাণ্ড : আলামত সংগ্রহ করছে সিআইডি
- মেক্সিকোর অর্ধশতাধিক রাজনীতিকের ভিসা বাতিল করল যুক্তরাষ্ট্র
- গাজার সব সীমান্ত খুলে দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘ ও রেড ক্রসের
তদন্ত হচ্ছে লতিফ সিদ্দিকীর দখল করা জমি নিয়ে
রাষ্ট্রপতি দেশে ফিরলেই মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
অনলাইন ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর