১০ আগস্ট, ২০১৯ ১১:২৬

হাটে জাল নোট থেকে সাবধান

রিয়াজুল হক

হাটে জাল নোট থেকে সাবধান

মাঝখানে একটা মাত্র দিন। অর্থাৎ আগামী ১২ আগস্ট ঈদুল আজহা। পবিত্র এই উৎসবের উপর ভর করেই সারা দেশে পশুর হাটগুলোতে ইতোমধ্যেই পশু বেচাকেনা জমে উঠেছে। অনেক হাটেই প্রতিদিন কোটি টাকার উপরে নগদ অর্থের লেন-দেন হচ্ছে। 

দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষক তাদের পশু নিয়ে হাজির হয় পশুর হাটগুলোতে। আবার মধ্যস্বত্বভোগীরাও গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে পশু কিনে হাটে বিক্রি করে। অনেক কৃষক সারা বছর গরু-ছাগল পালন করে থাকেন ঈদুল-আজহাকে কেন্দ্র করে। অতীতে দেখা গেছে, কিছু অসাধু জাল নোট কারবারিদের অপতৎপরতার জন্য অসহায় কৃষকদের চোখের জল ছিল একমাত্র সম্বল। অনেকেই বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে পশু পালন করেছেন। জাল নোট কারবারিদের খপ্পড়ে পড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। 

সাধারণ মানুষের কিছুটা সচেতনতার অভাব এবং জাল নোট কারবারিদের নিত্য নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন এই সমস্যা সকলকেই ভাবিয়ে তুলেছে। প্রত্যেকেরই জানা উচিত আসল নোটের বৈশিষ্ট্যসমূহ। আনন্দের পূর্ব মুহূর্তে জাল নোট কারবারিদের দৌরাত্ম দূর করতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বড় নোটের ক্ষেত্রে জাল করার ঘটনাগুলো বেশি ঘটে থাকে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ১০০, ৫০০ এবং ১০০০ টাকা মূল্যমানের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সম্বলিত আসল ব্যাংক নোটের কিছু সহজ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা খালি চোখে দ্রুত বোঝা যায়, যা আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন-

১। কাগজ: নোটটি সিনথেটিক ফাইবার মিশ্রিত অধিক টেকসই কাগজে মুদ্রিত।

২। ইন্টাগ্লিও লাইন: নোটের ডানদিকে আড়াআড়িভাবে ইন্টাগ্লিও কালিতে ৭টি সমান্তরাল লাইন আছে।

৩। অসমতল ছাপা: নোটের সামনের দিকে ইন্টাগ্লিও কালিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুদ্রিত।

৪। অন্ধদের জন্য বিন্দু: ১০০০ টাকার নোটের ডানদিকে অন্ধদের জন্য ৫টি ছোট বিন্দু; ৫০০ টাকার নোটের ডানদিকে অন্ধদের জন্য ৪টি ছোট বিন্দু এবং ১০০ টাকার নোটের ডানদিকে অন্ধদের জন্য ৩টি ছোট বিন্দু রয়েছে যা হাতের স্পর্শে উচু নিচু অনুভূত হবে।

৫। রং পরিবর্তনশীল হলোগ্রাফিক সুতা: নোটের বাম পাশে ৪ মিলিমিটার চওড়া নিরাপত্তা সুতা; যাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের লগো ও ১০০/৫০০/১০০০ টাকা লেখা আছে; সরাসরি দেখলে লগো ও ১০০/৫০০/১০০০ টাকা সাদা দেখাবে। কিন্তু পাশ থেকে দেখলে বা ৯০ ডিগ্রীতে নোটটি ঘোরালে তা কালো দেখাবে।

৬। জলছাপ: কাগজে জলছাপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি; প্রতিকৃতির নিচে অতি উজ্জ্বল ইলেক্ট্রোটাইপ জলছাপে ১০০/৫০০/১০০০ লেখা আছে এবং জলছাপের বামপাশে বাংলাদেশ ব্যাংকের উজ্জ্বলতর ইলেক্ট্রোটাইপ জলছাপ রয়েছে।

৭। ব্যাকগ্রাউন্ড মুদ্রণ: ১০০/৫০০/১০০০ টাকার নোটের সামনের দিকে পটভূমি বা ব্যাকগ্রাউন্ডে হালকা অফসেটে জাতীয় স্মৃতিসৌধ রয়েছে।

৮। নোটের পেছন ভাগ: ১০০০ টাকার নোটের পেছনের দিকে ইন্টাগ্লিও কালিতে জাতীয় সংসদ ভবন মুদ্রিত আছে যা হাতের আঙ্গুলের স্পর্শে অসমতল অনুভূত হবে। ৫০০ টাকার নোটের পেছনের দিকে ইন্টাগ্লিও কালিতে বাংলাদেশের কৃষি কাজের দৃশ্য মুদ্রিত আছে যা হাতের আঙ্গুলের স্পর্শে অসমতল অনুভূত হবে। ১০০ টাকার নোটের পেছনের দিকে ইন্টাগ্লিও কালিতে ঢাকার তারা মসজিদ মুদ্রিত আছে যা হাতের আঙ্গুলের স্পর্শে অসমতল অনুভূত হবে।

৯। রং পরিবর্তনশীল কালি: ১০০০/১০০ টাকার ডানদিকের কোণায় ১০০০/১০০ লেখাটি সরাসরি তাকালে সোনালী এবং তির্যকভাবে তাকালে সবুজ রং দেখা যাবে। ৫০০ টাকার ডানদিকের কোণায় সরাসরি তাকালে ৫০০ লেখাটি লালচে এবং তির্যকভাবে তাকালে সবুজ রং দেখা যাবে। 

সাধারণত নতুন নোটগুলোই জাল হয়ে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক তফসিলী ব্যাংকসমূহকে কোরবানির পশুর হাটে পশু ব্যবসায়ীদের নোট যাচাইকরণের জন্য জালনোট শনাক্তকারী মেশিনের সহায়তায় অভিজ্ঞ ক্যাশ কর্মকর্তাদের দ্বারা ঈদের পূর্বরাত পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে পশু ব্যবসায়ীদেরকে বিনা খরচে নোট যাচাই সংক্রান্ত সেবা প্রদানের জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া কোরবানির পশুর হাটে জাল নোটের বিস্তার রোধ করার জন্য মাঠে রয়েছে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সকলের সচেতনতা এবং সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে দূর হোক জাল নোট, সেটাই প্রত্যাশা।

লেখক : উপ-পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

সর্বশেষ খবর