৭ জানুয়ারি, ২০২১ ০৯:৪৭

শেখ হাসিনার এক যুগ; অনুকরণীয় রাষ্ট্রের মর্যাদায় বাংলাদেশ

এফ এম শাহীন

শেখ হাসিনার এক যুগ; অনুকরণীয় রাষ্ট্রের মর্যাদায় বাংলাদেশ

এফ এম শাহীন

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ধারাবাহিকভাবে গত ১২ বছরে বাংলাদেশকে উন্নয়ন অগ্রগতির সূচকে যুগান্তকারী মাইলফলক স্পর্শ করে বিশ্ব সভায় উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছেন। অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে অগ্রগতির অভূতপূর্ব স্মারক বহন করছে বাংলাদেশে যা সারা বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা ‘দিন বদলের সনদ রূপকল্প ২০২১’ উপস্থাপন করে নতুন যুগের যাত্রা শুরু করেন । তার এই নিরবচ্ছিন্ন অগ্রযাত্রা দেশের অভাবনীয় সমৃদ্ধির ছাপ ক্রমশই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরেই কন্যা শেখ হাসিনা তার স্বপ্নের সোনার বাংলাকে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়নের মহাসোপানে। বর্তমানে সারা দেশে চলছে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও কর্ণফুলী টানেলের কাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুত গতিতে।

করোনা মহামারিতে বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত তখন প্রতিটি ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ। এমন ভয়াবহ সময়ের মধ্যেও প্রবাসি বাঙালির শ্রম ঘামে দারুণ গতিতে বেড়েছে রেমিট্যান্স। ২০২০ সালে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ (২১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। রিজার্ভের ক্ষেত্রেও রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ অবস্থান করছিল ৪ হাজার ২০৯ কোটি (৪২ দশমিক ০৯ বিলিয়ন) ডলারে, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। গোটা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল আজ বাংলাদেশ, এক ভিন্ন মর্যাদায় বাংলাদেশ।    

সম্প্রতি দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি তুলনা তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশকে শোষণ-নিপীড়নে নিষ্পেষিত করতে চেয়েছিল যে দেশটি, এখন অনেক কিছুতে তার চেয়ে এগিয়ে আছে সে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত ১৯৭১ সালে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয়ার পর এত অল্প সময়ে কোনো দেশ যুদ্ধের ভয়াবহতা কাটিয়ে এগিয়ে যেতে পারে, যা একমাত্র বাংলাদেশেই জাতির পিতা তার নেতৃত্বে সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।

গত ৪৬ বছরের অগ্রগতিতে বাংলাদেশের মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ এখন পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশে মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ ১ হাজার ৫৩৮ ডলার। সেখানে পাকিস্তানের তা ১ হাজার ৪৭০ ডলার। স্বাধীনতার পর যেখানে মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার এক কঠিন লড়াইয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশই এখন গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে (বিশ্ব ক্ষুধাসূচক) পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। ২০১৭ সালের গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮; যেখানে পাকিস্তানের ১০৬।

সম্প্রতি আইএমএফের আরও এক প্রতিবেদন নিয়ে ভারতে তোলপাড়। বাংলাদেশ তো আগেই জিডিপিতে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। এবার মাথাপিছু জিডিপিতে পেছনে ফেলতে যাচ্ছে ভারতকে। বাঘা বাঘা সাংবাদিক-অর্থনীতিবিদ তখন হিসেব কষতে ব্যস্ত। ভারত কেন পিছিয়ে পড়ল, তার চেয়েও বড় আলোচনা, বাংলাদেশ কিভাবে এগিয়ে গেল ?

পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বর্তমানে পাকিস্তানের চেয়ে প্রায় সবক্ষেত্রেই এগিয়ে বাংলাদেশ। অনেক ক্ষেত্রে ভারতের থেকেও এগিয়ে। যদিও বড় এই দুই প্রতিবেশীর চেয়েও অনেক পরে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।

মাথাপিছু জিডিপি: তিন দেশের মধ্যে মাথাপিছু জিডিপিতে শীর্ষে ভারত। তাদের জিপিপি ২১৬৯ ইউএস ডলার। এরপরই আছে বাংলাদেশ (১২৮৭.৮) এবং সবার শেষে পাকিস্তান (১১৮৫.৫)।

জিডিপি: এখানেও শীর্ষে ভারত। তাদের জিডিপি ২.৯। এরপর আছে বাংলাদেশ (২০৯.৯৭) এবং পাকিস্তান (২৫৬.৭৩)।

গ্রস সেভিংস জিডিপি: এক্ষেত্রে শীর্ষ দেশটির নাম বাংলাদেশ (৩৩.৩%)। এরপর আছে ভারত (৩১.১%) এবং সবার শেষে পাকিস্তান (১৯.৩%)।

দারিদ্রসীমার নিচে থাকা নাগরিক: এক্ষেত্রে তিন দেশের পরিস্থিতিতে খুব একটা বড় পার্থক্য নেই। দারিদ্রসীমার নিচে থাকা নাগরিক ভারতে ২১.৯%, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে সমান ২৪.৩%।

ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ: সহজে ব্যবসা করার পরিবেশ এবং সুবিধার দিকে দিয়ে এই তিন দেশের মধ্যে শীর্ষে আছে ভারত। ১০০ নম্বরের মাঝে দেশটির অর্জিত পয়েন্ট ৭১.১। এরপর আছে পাকিস্তান (৬১.০) এবং এক্ষেত্রে সবার পেছনে পড়ে গেছে বাংলাদেশ (৪৫.১)।

শিক্ষার হার: এক্ষেত্রে শীর্ষে আছে ভারত। সেখানে শিক্ষার হার ৭৪.৪%। সামান্য পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের শিক্ষার ৭৩.৯%। সবার শেষে থাকা পাকিস্তানের শিক্ষার হার ৫৯.১৩%।

শিশুমৃত্যুর হার: এক্ষেত্রে বাকি দুই দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা অনেক ভালো। ভারতে যেখানে প্রতি ১০০০ জনে ২৯.৯ এবং পাকিস্তানে ৫৭.২ জন শিশু মারা যায়, সেখানে বাংলাদেশ এই শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে এনেছে ২২.১ জনে।

শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ: ৫-১৪ বছর বয়সী শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ শীর্ষে। রেটিং ৪.১। ভারতের ৫.৭ এবং খুব খারাপ অবস্থায় থাকা পাকিস্তানের রেটিং ৯.৭।

জন্মহার: এই তিনটি দেশই জনবহুল এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি। জন্মহার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ (২.০)। দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত (২.২) এবং তৃতীয় স্থানে পাকিস্তান (৩.৫)।

গড় আয়ু: এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ সবার উপরে। এদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২.৩ বছর। ভারতে ৬৯.৪ এবং পাকিস্তানে ৬৭.১ বছর।

বায়ু দূষণ: বায়ু দূষণের সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ভারতে (৯০.৯)। শীতের মৌসুমে দেশটির রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি শহর ধোঁয়াশায় ঢেকে যায়। দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ (৬০.৯)। এই ক্ষেত্রে পাকিস্তানের অবস্থা বাকি দুই দেশের চেয়ে ভালো (৫৮.৩)।

বিদ্যুৎতায়ন: বেশি সংখ্যক মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসায় সবচেয়ে এগিয়ে ভারত (৯৫.২%)। দ্বিতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ (৮৫.২) এবং সবার শেষে পাকিস্তান (৭১.১)।

সামরিক ব্যয়: শীর্ষে আছে বাংলাদেশ (১.৪%)। দ্বিতীয় স্থানে ভারত  (২.৪%) এবং পাকিস্তান ৪.০% (সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া) । আর এই সকল অর্জনের নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা বাঙালির ভিশনারি লিডার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।  

বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুকেন্দ্রের যুগে প্রবেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ২০১০ সালে। পাবনার ঈশ্বরদীতে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুকেন্দ্রটির উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে ২০২৪ সালে।

স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে মতপার্থক্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন, তখন অনেকেই একে অবাস্তব বলে সমালোচনা করেছিলেন এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে মুখোশ পরা অনেক প্রগতিশীলকেও দেশ বিদেশে নানা ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে দেখেছি। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে একবুক সাহস নিয়ে শেখ হাসিনা দিনে দিনে সেই পদ্মা সেতু পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়েছেন। 

ইতিমধ্যে পদ্মা সেতুর সবগুলো স্প্যান বসানো হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বিনির্মাণ জাতির অহঙ্কার আর গৌরবের বিষয়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে যে শুধু যোগাযোগ তৈরি হবে তা কিন্তু নয়, সবচেয়ে বেশি গতি পাবে শিল্প ও অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হওয়ায় এক অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করার ।

ইউরোপ-আমেরিকার মতো বাংলাদেশের মানুষও যে মেট্রোরেলে চড়বে, সেই স্বপ্নও পূরণ হতে চলেছে কিছু দিনের মধ্যে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ী ও পটুয়াখালীর পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের ৬১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এই টানেল নির্মাণের ফলে চট্টগ্রাম শহর চীনের সাংহাই নদীর মতো ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলে গড়ে উঠবে।

স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য আজ বাংলাদেশ। ৫৭তম দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট যেমন আমাদের জন্য মহাকাশযাত্রার মাইলফলক, তেমনি এর মাধ্যমে পাওয়া প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে আগাম ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যাবে। ফ্রান্সের মহাকাশ সংস্থা থ্যালেস অ্যালেনিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়া স্যাটেলাইট প্রকল্পটির আরেকটি ইতিবাচক দিক- এর জন্য বরাদ্দ অর্থ ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকার মধ্যে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা।

বর্তমান সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে কৃষি খাতকে সবোর্চ্চ গুরুত্ব প্রদান করে কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের কল্যাণকে সবোর্চ্চ বিবেচনায় নিয়ে নানমুখি প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃষিখাতে সমযোপযোগী পদক্ষেপের কারণে খোরপোষের কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে। খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান দশম। 

১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯-২০১৮ সময়ের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় গত একবছরেলাভজনক ও বাণিজ্যিকীকরণের অগ্রযাত্রায় কৃষি। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্যের উৎপাদন (৪৩২.১১ লাখ মেট্রিক টন) এর লক্ষ্যমাত্রা (৪১৫.৭৪ লাখ মেট্রিক টন) ছাড়িয়ে গেছে। দেশ আজ চালে উদ্বৃত্ত; ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ। ভুট্টা উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৪৬ লাখ মে: টন। 

নিবিড় চাষের মাধ্যমে বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। সবজি উৎপাদন বেড়ে ১ কোটি ৭২ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন হয়েছে। আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ উদ্বৃত্ত এবং বিশ্বে সপ্তম। এবছর আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৯ লাখ মেট্রিক টন। দেশে ফল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আম উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম এবং পেয়ারায় অষ্টম। আম উৎপাদন প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।

বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বৃহত্তর সড়ক-মহাসড়ক, সেতু আর কালভার্ট নব উদ্যমে বিনির্মাণ দেশে যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থার এক অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বুলেট ট্রেনে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে বর্তমান সরকার। বুলেট ট্রেনটি চালু হলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছানো যাবে মাত্র ৫৫ মিনিটে। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যেতে ঢাকা-মাওয়া চার লেনের সড়কটিও শেষ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে।

জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার মধ্যেও আগুন সন্ত্রাসের ভয়াবহ কর্মকাণ্ডে সারাদেশ যখন জ্বলছে তখন নির্ভীক ও দুঃসাহসী শেখ হাসিনা কোন ধরনের আপোষ করেননি। ঘাতক-দালালদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে দেশি বিদেশি হুমকি-ধামকি, ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দৃঢ় মনোবলে জাতিকে কলঙ্কমোচনের পথে অবিচল থেকেছেন। অদম্য সাহস ও গভীর মমত্ববোধে স্বাধীনতার শত্রুদের মোকাবেলা করতে গিয়ে যা যা কারণীয় সবটাই করেছেন নির্দ্বিধায়, নিঃসংশয়ে।

কোনো রকম যুদ্ধ-সংঘাত বা বৈরিতা ছাড়াই বর্তমান সরকারের শাসন আমলেই দুই প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের বিপক্ষে সমুদ্র বিজয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পরপর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে স্থল সীমান্ত চুক্তি হয়েছিল সম্প্রতি তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহল সমস্যার সমাধান করা বাংলাদেশের বড় অর্জন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। 

সর্বশেষ রোহিঙ্গা ইস্যুতেও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশ ও সংস্থা এই ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করে পাশে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেয়েছেন ‘মাদার অফ হিউম্যানিটি’ উপাধি। পশ্চিমাদের দেয়া তলাহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র-চিকিৎসার দায়িত্বও পালন করছে।

শেখ হাসিনা সরকারের সামনে এখন কার্যত রাজনৈতিক কোনো চ্যালেঞ্জ না থাকলেও একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। করোনাভাইরাস মহামারি, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও দীর্ঘমেয়াদি বন্যা সরকারের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কারণ দুর্যোগ মোকাবেলা করতে গিয়ে সরকার বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়েতে হয়েছে ইতোমধ্যে। 

তার সাথে যুক্ত হয়েছে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ রোহিঙ্গা সমস্যা, আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি, কর্মসংস্থান, দুর্নীতি, অর্থপাচার, আমলাতন্ত্রের দৌরাত্ব ও স্বাধীনতাবিরোধী ধর্মান্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীর আস্ফলন। বিশ্বের উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর সুষম উন্নয়ন সূচকে প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে অনেক এগিয়ে গেলেও সুশাসন আর সকল ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠাই মূল চ্যালেঞ্জ মনে করছেন সবাই।  

সরকারের টানা ১২ বছর দেশের রাজনীতিসহ সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ শেখ হাসিনার হাতে থাকলেও সে পথ মসৃণ ছিল না। জ্বালাও-পোড়াও, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাসহ দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র, বাধা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগোতে হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, ক্রীড়া, পরিবেশ, কৃষি, খাদ্য, টেলিযোগাযোগ, সংস্কৃতি, সামাজিক নিরাপত্তা, মানবসম্পদ উন্নয়ন এমন কোনো খাত নেই যে খাতে অগ্রগতি সাধিত হয়নি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গত কয়েক বছরে দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, পুষ্টি, মাতৃত্ব এবং শিশু স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রশংসিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও এবং বাংলাদেশ পেয়েছে অনুকরণীয় রাষ্ট্রের মর্যাদা।   

প্রজন্মের বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব্যাহত, বলিষ্ঠ ও অবিচল নীতি-নেতৃত্বে রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পরিকল্পিত উন্নয়নের পথে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।  

 

লেখক: এফ এম শাহীন
            সম্পাদক , ডেইলি জাগরণ ডট কম
            সাধারণ সম্পাদক , গৌরব '৭১

 

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

সর্বশেষ খবর