১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৫:২৮

বঙ্গমাতার প্রতিচ্ছবি আমাদের ছোট আপা

গুলশাহানা ঊর্মি

বঙ্গমাতার প্রতিচ্ছবি আমাদের ছোট আপা

শেখ রেহানা, আমাদের ‘ছোট আপা’। আমরা যারা বঙ্গবন্ধুকে আমাদের আদর্শিক পিতা মনে করি, বঙ্গবন্ধু’র আদর্শ লালন ও ধারণ করি তাদের কাছে অতি আপনজন এবং নিজের মানুষ বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। জাতীয় জীবনের যে কোন দুর্যোগ-দুর্বিপাক থেকে শুরু করে আমাদের ব্যক্তিগত শোক-তাপ বিমোচনের আশ্রয়ও তারা। 

মনের খুব গভীর কোন বেদনা, না পাওয়া, অনুতাপ কিংবা গভীর কোন ক্ষত যা দীর্ঘ সময় রক্ত ঝরায় এমন কষ্ট লাঘবের জন্যও আমরা মনে মনে কামনা করি একবার যদি আপাকে (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা) বলতে পারতাম তাহলে হয়তো কষ্টটা কমে যেতো। এটা শুধু আমাদের মনের আবেগ না, এটা আমাদের বিশ্বাসও। যে কোন জটিল সমস্যার সমাধান যখন সংশ্লিষ্ট কেউ দিতে না পারেন তখন দেখা যায় সবাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র কাছে সেই সমস্যার সমাধান চেয়ে আবেদন করেন। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে এইরকম খরব আমরা হরহামেশাই দেখতে পাই। 

বঙ্গবন্ধু’র বড়কন্যা শেখ হাসিনা সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকায় দেশের আপামর জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার আশ্রয় হয়ে ওঠেছেন, ঠিক তেমনিভাবে বঙ্গবন্ধু’র ছোটকন্যা শেখ রেহানা আপাও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-অনুসারীদের কাছে আশা-আকাঙ্ক্ষার আশ্রয় তাই তো তাদের কাছে তিনি ‘ছোট আপা’।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা জীবনের দীর্ঘ একটা সময় লন্ডনে বসবাস করলেও তিনি বাংলার সাধারণ নারীর মতই জীবনাচরণ করে থাকেন। বাংলাদেশের জাতির পিতার কন্যা এবং চারবারের প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন হয়েও নিরহংকারী সাদাসিধে সাধারণ বেশভুষা, সাধারণ জীবন তার। নিজে চাকরি করে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করিয়েছেন, বুঝিয়েছেন জীবনবোধ। সংগ্রাম করেছেন জীবনের প্রতিটি স্তরে। 
ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেও শেখ রেহানা একজন সৎ, একজন সংগ্রামী মানুষ, অতি সাধারণ জীবনযাপন তাকে অনন্য মহিমা দান করেছে। বড়বোন এই বাংলাদেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী অথচ তার আচরণে কোনো অহমিকা বা দাম্ভিকতার ছাপ নেই। 

পাবলিক গাড়িতে করে নিজের অফিসে আসা-যাওয়ার খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার মাধ্যমে সারাদেশের মানুষ তা অবগত আছেন। কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহের দৃষ্টান্ত হিসেবে তিনি উদাহরণ হয়ে থাকবেন। জাগতিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বা ধন-সম্পদের প্রতি তার নির্মোহতার পরিচয় মেলে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ২০০ কোটি টাকা মূল্যমানের ঢাকার ধানমন্ডির ৬ নম্বর রোডের ২১ নম্বর বাড়িটি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের জন্য তিনি উৎসর্গ করেন। এছাড়াও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুতিকাগার ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়িটিকেও বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে একাত্ম হয়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর করে দেশের জনগণের জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছেন শেখ রেহানা।

বহু বছর ধরে প্রচলিত একটি প্রবাদ হলো ‘মা গুণে ঝি’ অর্থাৎ মায়ের গুণাগুণ নিয়ে মায়ের পেট থেকে একটি মেয়ে ভূমিষ্ট হয়। এদেশের মানুষের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আত্মত্যাগের কথা যেমন আমরা জানি, সেই সাথে মহিয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের আত্মত্যাগ ও মহত্বের কথাও আমরা জানি। 

বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা সারাটা জীবন শুধু মানুষের কথা চিন্তা করেছেন, মানুষের মুক্তির কথা ভেবেছেন। তাদের রক্তের উত্তরসূরি হয়ে ঠিক একইভাবে এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুর সেই অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে জীবনপণ সংগ্রাম ও কষ্ট করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার দুই সন্তান শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানা। বড় মেয়ে শেখ হাসিনা জীবন বাজি রেখে পর্দার সামনে সামনে কাজ করে যাচ্ছেন, আর অপরজন পর্দার অন্তরালে থেকে বোনকে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সাহস যুগিয়ে, উৎসাহ দিচ্ছেন। আমাদের ছোট আপা একজন প্রচারবিমুখ, নিভৃতচারী মানুষ হিসেবে ইতোমধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত। তিনি তার বড় বোন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থা ও ভরসার জায়গা। 

বড় বোনের সকল কাজের প্রেরণার উৎস আবার কখনও বা সংকটে পরামর্শদাতা ও পথপ্রদর্শক হিসেবে তিনি সব সময় পাশে থাকেন। কখনও বা তিনি ছোট বোনের অবস্থান ছাপিয়ে বড় বোনকে মায়ের মমতায় আগলে রাখেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে সংগঠিত পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসের বর্বরোচিত ও ন্যাক্কারজনক গ্রেনেড হামলার পর নেতা-কর্মীদের শোকে মূহ্যমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে তিনি যেভাবে আগলে রেখেছিলেন সেই দৃশ্য আমরা যারা সেই সময় ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম তারা খুব কাছ থেকে দেখেছি। সংবাদপত্রের মাধ্যমের সেই সময়ের ছবি সারাদেশের মানুষও দেখেছেন। এদেশের প্রতিটি ক্রান্তিকালে তিনি বড় বোন শেখ হাসিনার সাথে থেকে নিরবে-নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছায়াসঙ্গী হিসেবে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায়ও তার অবদান অনস্বীকার্য। 

বলা হয়ে থাকে মহিয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব যদি বঙ্গবন্ধু’র যোগ্য সহধর্মিণী হয়ে উঠতে না পারতেন তাহলে হয়তো আমরা হিমালয়সম বঙ্গবন্ধুকে পেতাম না। তিনি যদি বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা, রাজনৈতিক সহকর্মী হয়ে না উঠতে পারতেন তাহলে হয়তো ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুও একজন অন্যতম নেতা হয়ে উঠতে পারতেন না। সরাসরি রাজনীতির সাথে তিনি সম্পৃক্ত না থাকলেও অন্তরালে থেকে তিনি বঙ্গবন্ধুকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করেছেন। বঙ্গবন্ধু যখন জেলখানায় থাকতেন তখন তার অবর্তমানে সংগঠন পরিচালনার গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ঠিক একই ভূমিকায় ‘৭৫ এ বাবা-মা ও স্বজনহারা বড় বোন শেখ হাসিনারও আশ্রয় হয়ে ওঠেন ছোট বোন শেখ রেহানা। 

এদেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পাশে থেকেছেন এবং সংকটকালে কাণ্ডারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তিনি একাধিকবার। বিশেষ করে দেশের উল্লেখযোগ্য ক্রান্তিকান ১/১১ এর সময় তিনি অনন্য ভূমিকা রাখেন। সে সময় শেখ হাসিনার মুক্তির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে এবং আন্তর্জাতিক মহলে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও জনমত তৈরি করতে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও তিনিই প্রথম বিশ্ববাসীর কাছে ‘৭৫ এর নির্মম-ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন। এখানেও তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সাহসিকতার ছাপ পাওয়া যায়।

আমাদের ছোট আপা দেখতেও অনেকটাই বঙ্গমাতার মতো। মৌখিক অবয়বের পাশাপাশি বঙ্গমাতার মত মানবিক, নির্মোহ, নিভৃতচারী, রাজনৈতিক প্রজ্ঞাসম্পন্ন ও সাহসী  আমাদের ছোট আপা শেখ রেহানা।

আমাদের সবার প্রিয় ছোট আপা শেখ রেহানার আজ ৬৭তম জন্মদিন। জন্মদিনে তার নিরোগ ও দীর্ঘজীবন কামনা করছি। 

“শুভ জন্মদিন ছোট আপা। সব সময় ভালো থাকবেন।”

লেখক : বিসিএস তথ্য, সহকারী পরিচালক
প্রেস উইং, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

সর্বশেষ খবর