৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১০:০৩

অতিরিক্ত করারোপের বিরুদ্ধে ৫ দাবি আদায়ে সব রাজনৈতিক দলের আন্দোলন চাই

মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান

অতিরিক্ত করারোপের বিরুদ্ধে ৫ দাবি আদায়ে সব রাজনৈতিক দলের আন্দোলন চাই

মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান

অর্থনীতি নিয়ে বেসরকারি গবেষনা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আইএমএফের শর্ত পূরণের ব্যাপারে খুবই সরল একটি কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, “আগামী তিন অর্থবছরে বাংলাদেশকে রাজস্ব হিসেবে ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা আয় করতে হবে।” খুবই ইতিবাচক কথা! বাংলাদেশকে মাত্র তিন বছরে ২.৩৬ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব বাবদ অতিরিক্ত আয় করতে হবে! কি সুন্দর কথা।  

তিন বছরে ২.৩৬ লক্ষ কোটি টাকা রাজস্ব বাবদ অতিরিক্ত আয় করতে পারলেই আইএমএফের শর্ত পূর্ণ হয়ে যাবে! রাজস্ব কোন ব্যবসা বা শিল্প বা কৃষি উৎপাদন বা এমন কোন সেবার সুযোগ বৃদ্ধিও নয় যে বাড়তি ব্যবসা বা শিল্প বা কৃষি উৎপাদন বা সেবার পরিধি বৃদ্ধি করে পিআরআই এর দেখানো পথে বাংলাদেশ ২.৩৬ লক্ষ কোটি তিন বছরে আরো অতিরিক্ত আয় করে ফেলবে। রাজস্ব আয় জনগণের সরাসরি সরকারকে দেয়া কর বা ব্যয় যা সরকারের আয়। অর্থাৎ জনগণের গায়ের রক্ত দিয়ে আগামী তিন বছরে ২.৩৬ লক্ষ কোটি টাকা বিভিন্ন খাতে কর দিয়ে সরকারের আয় বাড়িয়ে দিবে।
 
বর্তমান বছরে রাজস্ব বাবদ সরকারের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হল ৩.৭০ লক্ষ কোটি টাকা যা গত বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে  ৬০ হাজার কোটি টাকা বেশি। যদিও ইতিমধ্যেই আমদানি মূল্য ও ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির ফলে সরকারের রাজস্ব বাবদ বাম্পার আয় হয়েছে। কারণ সকল দ্রব্যের গত বছরের আমদানি মূল্য থেকে প্রায় দ্বিগুন হয়ে গেছে। তার উপরে ডলারের বিনিময় হার গত বছরের গড় ৭৮ টাকা থেকে বেড়ে এই বছরের এই পর্যন্ত গড় বিনিময় হার একশত টাকার উপরে উঠে গেছে। তাই গত সাত মাসে সরকারের রাজস্ব আয় ৩.৭০ লক্ষ কোটি ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা যা বছর শেষে ৪.৫০ লক্ষ কোটি টাকা অনায়াসে ছাড়ায়ে যাবে। সেখানে পিআরআই এর অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞগণ তিন বছরে আরো ২.৩৬ কোটি টাকার রাজস্ব আয় বাড়ানোর অসৎ পরামর্শ দিচ্ছেন সরকারকে। অসৎ পরামর্শ বলছি এই জন্য যে এই অতিরিক্ত ২.৩৬ লক্ষ কোটি টাকার রাজস্ব আয় পুরোটি জনগণকে তাদের পকেট থেকে নয় তাদের রক্ত বেঁচে দিতে হবে। ইতিমধ্যেই জনগণের শুধু ক্রয় ক্ষমতাই কমে যায় নাই সেই সঙ্গে তাদের আয়ও যতেষ্ট পরিমান কমে গেছে। এর জন্য গবেষনার প্রয়োজন নাই। চারিদিকে মানুষের নিরব হতাশার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিলে তা যে কেউ অনুধাবন করতে পারবে।  
গবেষনা প্রতিষ্ঠান পিআরআই ইনিয়-বিনিয়ে বিভিন্ন পরিসংখ্যান দিয়ে বলার চেষ্টা করছেন উনাদের আইএমএফের শর্ত পূর্ণ করার জন্য যেন জনগণকে আরো বেশি কর দিতে বাধ্য করা হয়। না হলে আইএমএফ নাখোষ হতে পারে। তবে জনগণের অবস্থান পরিস্কার এবং স্পষ্ট যে জনগণ আর অতিরিক্ত কোনো কর দিতে পারবে না এবং দিবে না। এর জন্য দরকার পড়লে জনগণ আন্দোলনে মাঠে নামবে এবং সকল প্রকার পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ কর আরোপ ও আদায়ের বিপক্ষে দেশব্যাপী গণজাগরণ সৃষ্টি করবে। এই ব্যাপারে সকল রাজনৈতিক দল এগিয়ে আসবে বলে জনগণের প্রত্যাশা। জনগণ চায় সরকার:

১। আমদানি কর হার মার্কিন ডলার বিনিময়ের হারের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্ধারিত করা হোক।
২। বিদেশের বাজারে উচ্চ মূল্যের সমন্বয় করে আমদানি কর নির্ধারিত করা হোক।
৩। আয় কর হার কমানো হোক এবং খরচের তফশিল বাস্তবোচিত করা হোক।
৪। কর্পোরেট কর হার কমানো হোক।
৫। কর নির্ধারনের ক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে নেওয়া হোক।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

সর্বশেষ খবর