নিউইয়র্ক সিটির ডাইভার্সিটি প্লাজায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা-কর্মীদের অংশগ্রণে আরাফাত রহমান কোকোর গায়েবানা জানাজায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এবং সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. ওসমান ফারুক।
২৫ জানুয়ারি রবিবার বাদ মাগরিব (বাংলাদেশ সময় সোমবার সকাল) বিএনপির কেন্দ্রীয় এই দুই নেতার উপস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ৪ খন্ডে বিভক্ত নেতা-কর্মীরা জড়ো হন নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে ডাইভার্সিটি প্লাজায়। হিমেল হাওয়ার মধ্যে খোলা পার্কে নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সভাপতি মাওলানা অলিউল্লাহ মোহাম্মদ আতিকুর রহমানের ইমামতিতে কোকোর গায়েবানা জানাজায় অংশ নেন সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। এরপর অনুষ্ঠিত মোনাজাতে কোকোর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত এবং বেগম খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্য কামনা করা হয়।
এ সময় সাদেক হোসেন খোকা বলেন, 'স্বৈরাচারি শেখ হাসিনা সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হয়ে অকালে ঝরে গেল কোকোর প্রাণ। এ মৃত্যুর দায় সরকার কখনো এড়াতে পারবে না। কোকোর মৃত্যুতে সৃষ্ট শোককে শক্তিতে পরিণত করে দমন-পীড়নের অবসান ঘটাতে যত দ্রুত সম্ভব এ সরকারকে বিদায় করতে হবে।'
ড. ওসমান ফারুক বলেন, 'সরকার যেভাবে মিডয়া নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে তা গোয়েবলসীয় কায়দাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এহেন অবস্থা থেকে মানুষ মুক্তি চাচ্ছে এবং মুক্তির দিশারি হিসেবে চলমান আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। গণতন্ত্র রক্ষার এ আন্দোলনের প্রতি আন্তর্জাতিক জনমত সুসংহত করতে প্রবাসীদের আরও জোরালো ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।'
পরে ডাইভার্সিটি প্লাজায় মিডিয়ার মুখোমুখি হন সাদেক হোসেন খোকা এবং ড. ওসমান ফারুক। খোকা বলেন, 'সরকারের দমন-পীড়নে সারাদেশের মানুষ অতীষ্ঠ। সরকার জিয়া পরিবারের জনপ্রিয়তায় সদা ভীত-সন্ত্রস্ত বলে তারেক রহমান এবং কোকোকে বাংলাদেশে ফিরতে দেয়নি। রাজনীতির ধারেকাছেও ছিলেন না কোকো। তবুও সরকারের বহুমুখী ষড়যন্ত্রের মুখে ছিলেন। এমনি অবস্থায় তার মায়ের ওপর সরকারের অকথ্য আচরণে কোকো এতটাই ভেঙ্গে পড়েন যে, এক পর্যায়ে তিনি মৃত্যুর কোলেই ঢলে পড়লেন।'
ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্যে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন সাদেক খোকা। একইসাথে তিনি বিএনপির বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও অংশ নিচ্ছেন স্বাভাবিক একজন মানুষের মতোই। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যেও নানা প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি তিনি লন্ডন ঘুরে এসেছেন। নেতা-কর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে যে, তিনি যদি লন্ডন যেতে পারেন, তাহলে ঢাকায় যেতে অসুবিধা কোথায়?
ওসমান ফারুক সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, 'বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের অবরোধ-হরতালে যতটা ক্ষতি হয়েছে বা হচ্ছে তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি সম্পদ গত ৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের লোকজন লুট করেছেন।'
বর্তমান রাজনৈতিক সংকটকে মহাপ্রলয়ের সাথে তুলনা করে ওসমান ফারুক বলেন, 'অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে লাভ নেই। বর্তমান সংকট নিয়ে বাস্তবসম্মত আলোচনা করতে হবে।'
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির বিবদমান গ্রুপগুলোর নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন আলহাজ্ব আব্দুল লতিফ সম্রাট, গিয়াস আহমেদ, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, শরাফত হোসেন বাবু, হযরত আলী, জিল্লুর রহমান, আকতার হোসেন বাদল, মো. বশির, গোলাম ফারুক শাহীন, কাজী আজম, বেলাল মাহমুদ, জসীম ভূইয়া, এম এ বাতিন, মাওলানা অলিউল্লাহ মো. আতিকুর রহমান, সাইদুর রহমান সাঈদ, গিয়াসউদ্দিন, আবু সাঈদ আহমেদ, পারভেজ সাজ্জাদ, রফিকুল ইসলাম ডালিম, আতাউর রহমান আতা, মাজহারুল হক জনি প্রমুখ।
গায়েবানা জানাযার পর জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে বিএনপির বিবদমান গ্রুপগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার একটি সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এক গ্রুপের লোকজনের উপস্থিতি কম হওয়ায় সেটি বানচাল হয়ে যায়। এ কারণে কর্মীরাও ক্ষুব্ধ।
যুবদলের শোকসভা
২৫ জানুয়ারি রবিবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের ফুডকোর্ট মিলনায়তনে কোকোর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় যুক্তরাষ্ট্র যুবদল এবং ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে এক শোক-সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক এম এ বাতিন এবং পরিচালনা করেন যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রদলের সভাপতি আতাউর রহমান আতা। বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা হযরত আলী, আজহারুল হক মিলন, সেয়দ এম রেজা, গিয়াসউদ্দিন, ফারুক মজুমদার, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম জনি প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/২৬ জানুয়ারি ২০১৫/ আহমেদ