ব্রিটেনের বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল আইটিভিতে বুধবার রাত ১০.৪০ মিনিটে গোপন ডকুমেন্টারি ইনভেস্টিগেশনে মুসলিম চ্যারিটির নামে টেরোরিজমে সহায়তা প্রদান ও জুইশদের প্রতি ঘৃণা ছড়ানোর চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। তথ্যগুলো দৈনিক টেলিগ্রাফ ফিচার নিউজ আকারে প্রকাশও করেছে।
ডকুমেন্টারিতে দেখানো হয়েছে, আইটিভির একজন রিপোর্টার ছদ্মবেশে গ্লোবাল এইড চ্যারিটির লন্ডনের হেড অফিসে ঢুকে শফিক শাব্বার নামের একজন চ্যারিটি কর্মকর্তার সাথে কথা বলছেন। আইটিভির রিপোর্টারকে শফিক শাব্বার জানাচ্ছেন, গ্লোবাল এইডের কর্তা ব্যক্তি এবং তাদের স্কলার বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন সমাবেশে জুইশদের প্রতি ঘৃণা ও হিংসার উদ্রেক সৃষ্টিকারী বক্তব্য দিয়েছেন, গ্লোবাল এইডের সিইও ব্যারিস্টার রেজওয়ান সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সহায়তা দিয়েছেন, গ্লোবাল এইড সিরিয়া জিহাদিস্ট কার্যক্রমে কিভাবে জিহাদি প্রেরণ করা যায় তার সহায়তা প্রদান করেছেন।
শফিক শাব্বার বর্তমানে গ্লোবাল এইডে আর কাজ করেন না। আইটিভি অবগত হয়েছে, চিফ এক্সিকিউটিভ ব্যারিস্টার রেজওয়ান গ্লোবাল এইডের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে বা তিনি চলে গিয়েছেন চ্যারিটি কমিশন ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। এই তদন্ত প্রক্রিয়ায় তারা এই সব তথ্য যেমন পেয়েছে, একই সঙ্গে চ্যারিটি কমিশনের একজন বলেছেন, তদন্ত অব্যাহত থাকবে, আরো নতুন নতুন তথ্য যোগ হবে এতে।
আইটিভির আন্ডার কভার রিপোর্টার অবগত হয়েছেন গ্লোবাল এইড কিভাবে সিরিয়ায় জিহাদি প্রেরণে সাহায্য করে, পরামর্শ দেয় জিহাদি ও টেররিস্ট কার্যক্রম করতে এই তথ্য পেয়েই চ্যারিটি কমিশন তদন্তে নামে। তদন্তে তারা প্রমাণও পেয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করেছেন ব্যারিস্টার রেজওয়ানকে চ্যারিটি কমিশন এক প্রকারের আটকই করেছিলেন জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে। সবশেষে সূত্র জানিয়েছেন, ব্যারিস্টার রেজওয়ানকে তারা গ্রেফতার না করে আন্ডার ইনভেস্টিগেশনে রেখে দিয়েছেন আরো অধিক তথ্য প্রমাণ হাতে পাওয়ার উদ্দেশ্যে বা সহায়তার শর্তে।
জানা গেছে, ন্যাশনাল টেরোরিজম ফাইন্যান্সিয়াল ইউনিটও বর্তমানে গ্লোবাল এইড চ্যারিটি, এর সাবেক সিইও ব্যারিস্টার রেজওয়ানের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে। আইটিভিতে ফুটেজে দেখানো হয়েছে, শফিক শাব্বার বলছেন, কিভাবে তার্কি হয়ে বর্ডার ক্রস করে আল কায়েদার সহায়তায় অতি সহজে সিরিয়ায় জিহাদি কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করা যায়। আইটিভি বর্তমানে ব্রিটেনের আরো অনেকগুলো মুসলিম চ্যারিটির কার্যক্রমের উপর রিপোর্ট তৈরি করছে এবং স্টিডফার্স্ট চ্যারিটি সহ আন্ডারকভার রিপোর্ট করছে।
শফিক শাব্বার আইটিভির আন্ডার কভার রিপোর্টারকে জানিয়েছেন, টেমস নদীর নৌকায় ভ্রমণের মাধ্যমে গ্লোবাল এইডের স্কলার দাঁওয়াহ বক্তৃতার সময়ে জুইশদের প্রতি ঘৃণা বিদ্বেষ পোষণ করে বলেছেন, সারা বিশ্বের বড় বড় ব্যাংকের মালিক জায়োনিস্টরা, এরা আমেরিকা, ব্রিটেন এই জায়োনিস্টদের জন্য মুসলমানদের পবিত্র ভূমি দখল করছে, শুধু মাত্র ইসরাইলের জায়োনিস্টদের জন্যে। সব সমস্যা এই ইসরাইল সন্তানদের দ্বারাই আসছে। আমেরিকা ইউরোপ ব্রিটেন এই ইসরাইল আর জায়োনিস্টদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তার এই বক্তব্যের জন্য বর্তমানে সে ইস্ট লন্ডন ইউনিভার্সিটির লেকচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে, বাধ দেয়া হয়েছে তাকে।
উল্লেখ্য, গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং তারা বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে বাংলাদেশসহ অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহে শিক্ষা ও দারিদ্র দূরীকরণে কাজ করে থাকে, ওপেন টেলিভিশন চ্যানেলে চ্যারিটি ইভেন্টের মাধ্যমে তারা ফান্ড সংগ্রহ করে, বর্তমানে হাফ মিলিয়নের মতো তাদের বাৎসরিক আয় রয়েছে বলে টেলিগ্রাফের তথ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট তাদের এক স্ট্যাটম্যান্টের মাধ্যমে শফিক শাব্বার ও তাদের এক্সটার্নাল স্পিকারের বক্তব্যকে খন্ডন ও প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, যে ঘটনাগুলো সংগঠিত হয়েছে সেজন্য তারা তাদের সংগঠনের সাংগঠনিক ব্যর্থতার সঙ্গে দুঃখও প্রকাশ করেছেন। গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট তাদের সিইও ব্যারিস্টার রিজওয়ানের পদত্যাগে ব্যাপারে তাদের সকল সহায়তাকারি, ডোনার, সাহায্যকারি ও সাপোর্টারদের কাছে এপোলজি দিয়ে বলেছেন যে ঘটনা ঘটেছে, তারা নিশ্চিত করছেন এধরনের ঘটনা আর ঘটবেনা। অবশ্য চ্যারিটি কমিশনের মুখপাত্র এটাকে সিরিয়াস রেগুলেটরি কনসার্ন হিসেবে অভিহিত করেছেন। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫/ রশিদা