স্থায়ীভাবে বসবাস ও নাগরিকত্বের জন্য কানাডা সব সময়ই অভিবাসীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষের দিকে থাকে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন পাওয়া দিন দিন কঠিন হতে থাকায় কানাডার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন অনেকেই। এই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য আছে সুখবর। সম্প্রতি কানাডায় নাগরিকত্ব আইন পরিবর্তন-সংক্রান্ত আইন ‘বিল সি-৬’ সিনেটে পাস হয়েছে।
নতুন এই বিলে কানাডার অভিবাসীরা দেশটির নাগরিকত্বের জন্য দ্রুত ও আরো সহজে আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া নতুন নিয়মে ২২ বছরের নিচের সন্তানরাও মা-বাবার সঙ্গে অভিবাসন নিয়ে কানাডায় স্থায়ী হতে পারেন।
এই বিল অনুযায়ী, সঠিক নিয়মে আবেদন করলে এক বছরের মধ্যেই কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব। চলতি বছরের ৪ মে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ড্র-তে তিন হাজার ৭৯৬ জন ৪২৩ সিআরএস পয়েন্ট পেয়েই গভর্নমেন্ট-আইটিএ পেয়েছেন, যা আগে কল্পনাও করা যেত না। এ থেকেই বোঝা যায়, এ বছর আরো বেশি লোকজন ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য ক্যাটাগরিতে কানাডায় যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
প্রাথমিকভাবে আবেদন করার যোগ্যতা যাঁদের রয়েছে, তাঁদের দেরি না করে একজন দক্ষ আইনজীবীর সহায়তায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে যথাসময়ে ও সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আবেদন করা উচিত। মনে রাখতে হবে, কানাডা সরকার ‘আগে আসলে, আগে পাবেন’ ভিত্তিতে কাজ করে।
‘বিল সি-৬’ অনুযায়ী নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের যোগ্য হতে কানাডায় স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে পাঁচ বছরের মধ্যে তিন বছর বসবাস করতে হবে। এর আগে ছয় বছরের মধ্যে চার বছর থাকার শর্ত ছিল। এ ছাড়া কানাডায় যাঁরা অস্থায়ীভাবে ছিলেন, তাঁরাও কানাডায় বসবাসের সময়টুকু তিন বছরের মেয়াদের একটি অংশ হিসেবে গণনা করতে পারবেন।
নতুন নিয়মে পিএনপি, এক্সপ্রেস এন্ট্রি, এফএসডব্লিউপি, এফএসটিপি, কিউএসডব্লিউপি, এআইপিএন, এসআইপিএন, এমপিএনপি, এনএসএনপি, বিসিপিএনপি, ওআইএনপি, আটলান্টিক ইমিগ্রেশন পাইলট প্রোগ্রাম, কেয়ারগিভার, বিজনেস, ফ্যামিলি স্পন্সরশিপ, এমপ্লয়মেন্টসহ নতুন নতুন বিভিন্ন প্রোগ্রামে সহজ নিয়মে পেশাজীবীদের ইমিগ্রেশন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
কানাডা সরকার পরিচালিত বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। যার মধ্যে রয়েছে :
১. এক্সপ্রেস এন্ট্রি
আমেরিকার সরকার এইচ-ওয়ানবি ভিসা নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করার পর বিপুলসংখ্যক দক্ষ ও যোগ্য পেশাজীবীদের মাইগ্রেশনের শেষ ভরসা এখন এক্সপ্রেস এন্ট্রি । প্রোগ্রামটি মূলত তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত। সেগুলো হলো—১. ফেডারেল স্কিলড ওয়ার্কার, ২. ফেডারেল স্কিলড ট্রেডার ও ৩. কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স ক্লাস। এই তিন শ্রেণিতে পেশার কোনো বাঁধাধরা তালিকা নেই। নেই কোনো কোটা ব্যবস্থা।
১. প্রভিন্সিয়াল নমিনি প্রোগ্রাম (পিএনপি)
কানাডার ১১টি প্রদেশে ইমিগ্রেশনের জন্য আবেদনকারীদের মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। একেক প্রদেশে একেক সময়ে তাদের উন্মুক্ত করে দেয়। সাধারণত প্রভিন্সিয়াল নমিনি প্রোগ্রামের শর্তগুলো আলাদা হয়। প্রার্থীদের তাঁদের যোগ্যতা অনুযায়ী আবেদন করা উচিত। তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হয় প্রোগ্রামের সময়কাল সম্পর্কে। অনেক শর্তই এ ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য। তবে কিছু কিছু নতুন শর্তও আরোপ করতে দেখা যায়।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রভিন্সিয়াল প্রোগ্রাম, সাসকাচুয়ান ইমিগ্র্যান্ট নমিনি প্রোগ্রাম ও অন্টারিয়ো ইমিগ্রান্ট নমিনি প্রোগ্রাম এখন চালু আছে। এ ছাড়া রয়েছে আটলান্টিক ইমিগ্রেশন পাইলট প্রোগ্রাম। এ ছাড়া ১৯ মে-২০১৭ তারিখ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে কুইবেক ইনভেস্টর প্রোগ্রাম।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রভিন্সিয়াল প্রোগ্রাম
আইইএলটিএসে ৫ দশমিক ৫ স্কোরসহ দুই বছর কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা স্নাতক ডিগ্রি থাকলেই কানাডার অন্যতম সুন্দর প্রদেশ ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় আবেদন করা যাবে। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রভিন্সিয়াল প্রোগ্রামটি চারটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। এক্সপ্রেস এন্ট্রি বিসি—স্কিলড ওয়ার্কার ও ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট এবং স্কিলস ইমিগ্রেশন : স্কিলড ওয়ার্কার ও এন্ট্রি লেভেল সেমি-স্কিলড। সর্বশেষ ড্রতে ৩৭৭ জন মনোনয়ন পেয়েছে শুধু ব্রিটিশ কলাম্বিয়া থেকে।
সাসকাচুয়ান ইমিগ্র্যান্ট নমিনি প্রোগ্রাম
কানাডার অন্যতম সেরা এবং উন্নত প্রদেশ সাসকাচুয়ানে কিছু বিশেষ পেশাজীবীরা খুব সহজ আবেদন করা ও দ্রুততম সময়ে সপরিবারে ইমিগ্রেশন ভিসা পেতে পারেন। পেশাগুলোর মধ্যে রয়েছে :
- কম্পিউটার বা ইনফরমেশন সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার বা অ্যানালিস্ট
- সিভিল ইঞ্জিনিয়ার
- মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার
- এনজিও কর্মকর্তা বা সোশ্যাল ওয়ার্কার বা প্রজেক্ট ম্যানেজার
- এগ্রিকালচার ম্যানেজার বা কৃষি কর্মকর্তা
- সাপ্লাইন চেইন বা পারচেজ ম্যানেজার
- ম্যাথমেটিশিয়ান বা স্টাটিসটিশিয়ান
অন্টারিও ইমিগ্র্যান্ট নমিনি প্রোগ্রাম
কানাডায় যাঁরা পড়াশোনা করেছেন, কানাডায় চাকরি করার যোগ্যতা রয়েছে, কানাডায় চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন বা ব্যবসা করতে ইচ্ছুক তাঁরাই এই নির্দিষ্ট প্রদেশে আবেদন করে স্থায়ী হতে পারেন।
আবেদন করার শেষ তারিখ :
প্রোফাইল তৈরি করার পর ১৪ দিন সময় থাকে যেকোনো ক্যাটাগরিতে আবেদন করার।
নোভা স্কটিয়া নোমিনি প্রোগ্রাম (এনএসএনপি)
২০১৫ সালের পর এই প্রোগ্রাম আগামী সপ্তাহের যেকোনো দিন চালু হতে পারে। ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টস, অ্যাডমিন অফিসার, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, কম্পিউটারে দক্ষ, নার্স ও এনজিও কর্মীরা প্রোগ্রামটিতে আবেদন করতে পারবেন।
আটলান্টিক ইমিগ্রেশন পাইলট প্রোগ্রাম
মার্চ-২০১৭ থেকে তিনটি ক্যাটাগরিতে আটলান্টিক ইমিগ্রেশন পাইলট প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। এর আওতায় দীর্ঘদিন কানাডায় কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়। যেহেতু প্রোগ্রামটিতে চাকরির অফার থাকে, তাই অনেকের পছন্দনীয় প্রোগ্রাম এটি। ২০১৭ সালে দুই হাজার পরিবার এ সুযোগ পাবে বলে আটলান্টিক সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
কিউবেক ইমিগ্রেশন
কিউবেক কানাডার একটি প্রদেশ হলেও এর ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া আলাদা ও স্বতন্ত্র। বছরের যেকোনো সময় নির্দিষ্ট কোটা উল্লেখ করে প্রোগ্রাম ঘোষণা করা হয়। সাধারণত এই প্রদেশের শর্ত বা যোগ্যতাগুলো অনেক সহজ ও শিথিল থাকে। কিউবেকের প্রোগ্রামগুলো মূলত তিনটি ক্যাটাগরিতে হয়ে থাকে। সেগুলো হলো—দ্য কিউবেক স্কলড ওয়ার্কার প্রোগ্রাম, এন্টারপ্রেনিয়ার প্রোগ্রাম ও কিউবেক এক্সপেরিয়েন্স ক্লাস। প্রতিটি প্রোগ্রামের নিজস্ব শর্ত রয়েছে। আগামী ১২ মাসের মধ্যে আরো পাঁচ হাজার অভিবাসী নেবে এই প্রদেশ। যেকোনো সময় প্রোগ্রামটি চালু হতে পারে।
কিউবেক ইনভেস্টর প্রোগ্রাম
আগামী ২৯ মে-২০১৭ কিউবেক ইনভেস্টর প্রোগ্রাম আবার চালু হতে যাচ্ছে। সবচেয়ে দ্রুত ও কম সময়ে পরিবারসহ স্থায়ী নাগরিক হওয়ার সুযোগ রয়েছে এই প্রোগ্রামের আওতায়। আট লাখ কানাডিয়ান ডলার বিনিয়োগ করে এই প্রোগ্রামে আবেদন করা যায়। বিনিয়োগটি শতভাগ নিরাপদ।
ফেডারেল স্কিলড ট্রেডারস প্রোগ্রাম (এফএসটিপি)
কার্পেন্টার, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, ওয়েল্ডারসহ কয়েকটি পেশাজীবীরা এই প্রোগ্রামের আওতায় আবেদন করে চাকরিসহ ইমিগ্রেশন করতে পারেন। তবে তাদের বিদেশি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে ‘ট্রেড স্কিল সার্টিফিকেট’ থাকতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞতাও থাকতে হবে। এ ছাড়া কনস্ট্রাকশন, চিফ কুক, বেকার, ফিস প্রসেসিং, ইলেকট্রিক্যাল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল, যন্ত্রপাতি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ, প্রাকৃতিক সম্পদ পরিচালনা, কৃষিকাজ ইত্যাদি কাজেরও প্রচুর চাহিদা রয়েছে কানাডায়। পরিবারের যোগ্য সদস্যরা এই প্রোগ্রামের আওতায় কানাডায় যেতে পারবেন। বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছর হলেই আবেদন করা যাবে।
ফ্যামিলি ইমিগ্রেশন
ফ্যামিলি স্পন্সরশিপের আওতায় কানাডার ইমিগ্রেশন পাওয়া সবচেয়ে সহজ ও দ্রুত হয়। তবে যাঁদের নিকটাত্মীয় নেই, তাঁরা এই সুযোগ পাবেন না।
কেয়ারগিভারস প্রোগ্রাম
এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে পরিবারসহ কানাডায় স্থায়ী হওয়া যায়। শুধু সনদপ্রাপ্ত নার্সরা আবেদন করতে পারবেন। অন্য প্রচলিত প্রোগ্রামের মতো ৬৭ পয়েন্ট বা এক হাজার ২০০ সিআরএস পয়েন্টের প্রয়োজন নেই। নার্সিংয়ে ডিপ্লোমা বা বিএসসি পাস ও আইইএলটিএসে ন্যূনতম স্কোর পাঁচ থাকলেই আবেদন করে চাকরিসহ কানাডায় যাওয়ার সুযোগ থাকছে লাইভ ইন কেয়ারগিভার (এলপিসি) প্রোগ্রামের মাধ্যমে। শিশু শিক্ষা ও যত্ন, গেরিয়াট্রিক কেয়ার, পেডিয়াট্রিক নার্সিং বা বয়স্কদের বা প্রাথমিক শিক্ষা ইমিগ্রেশনপ্রাপ্তদের প্রধান কাজ হবে।
ইনভেস্টর প্রোগ্রাম ইন কানাডা
এই প্রোগ্রামে আবেদন করার সুবিধাগুলো হলো :
• দুই লাখ ২০ হাজার কানাডীয় ডলার বিনিয়োগ করার সামর্থ্য।
• পরিবারসহ স্থায়ীভাবে বসবাস।
• শিক্ষাগত যোগ্যতা বা আইইএলটিএসের কোনো শর্ত নেই।
• এর দশমিক ৬ মিলিয়ন কানাডীয় ডলারের সম্পদ থাকলেই এই প্রোগ্রামের আওতায় কানাডায় স্থায়ী হওয়া যায়।
এ ছাড়া আইট প্রফেশনাল, ইঞ্জিনিয়ার, ম্যানেজার, এইচআর, অ্যাডমিন, ফিন্যান্স, অ্যাকাউন্টিং, সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং, অ্যাডমিন (এইচআর), ইনফরমেশন সিস্টেম অ্যানালাইসিস অ্যান্ড কনসালট্যান্ট, মিডিয়া ডেভেলপারস, মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ, ইউনিভার্সিটি প্রফেসর অ্যান্ড লেকচারার, রিটেইলস সেলস সুপারভাইজার, গ্রাফিক ডিজাইনার অ্যান্ড ইলাসট্রেটর, ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট, ব্যাংকারসহ বিভিন্ন পেশার প্রার্থীরা আবেদন করতে
কানাডায় ভিসার বিষয়ে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে লেখক, কলামিস্ট, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, আন্তর্জাতিক অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ রাজুর। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে যাঁরা যোগ্যতা রাখেন, তাঁদের আর দেরি করা ঠিক হবে না।’
‘অযোগ্য ব্যক্তিরা অযথা আবেদন করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবেন না’ বলেও সতর্ক করেন রাজু।
এ বিষয়ে সাহায্য প্রয়োজন হলে আগ্রহীরা ওয়ার্ল্ডওয়াইড মাইগ্রেশন কনসালট্যান্টস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ রাজুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্ত পাঠানো যাবে [email protected] ই-মেইল ঠিকানায়। এ ছাড়া যোগাযোগ করা যাবে হোয়াটসঅ্যাপ অথবা ভাইবারে +৬০১৪৩৩০০৬৩৯ নম্বরে। এ ছাড়া ভিজিট করা যাবে www.wwbmc.com. ওয়েবসাইটে।
এ ছাড়া ঢাকার উত্তরায় ৭ নম্বর সেক্টরের ৫১ সোনারগাঁও জনপথে অবস্থিত খান টাওয়ারে ওয়ার্ল্ডওয়াইড মাইগ্রেশন লিমিটেডের অফিসেও খোঁজ নেওয়া যেতে পারে। ফোনে প্রাথমিক তথ্যের জন্য কথা বলতে পারেন ০১৯৬৬০৪১৫৫৫, ০১৯৯৩৮৪৩৩৪০।