প্যারিস রুলবুক খ্যাত ‘কপ-২৪’ এর সিদ্ধান্তসমূহ সকল অংশীজনকে অবশ্যই মেনে চলার আহ্বান জানালেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম এমপি।
শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ আয়োজিত ‘সকলের জন্য জলবায়ু ও টেকসই উন্নয়ন’ শীর্ষক জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের সভায় বক্তব্য প্রদানকালে এই আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী।
প্রতিমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, “বৃহৎ কার্বন উদগীরণকারী দেশগুলোকে অবশ্যই দ্রুততার সাথে গ্রীন হাইজ গ্যাস উদগীরণ বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোকে ২০২০ সালের মধ্যে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল সরবরাহের প্রতিশ্রুতি এবং ২০১৯ এর মধ্যে গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড অবশ্যই পুনর্ভরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। আর্থিক তহবিল সরবরাহ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে নাজুক উন্নয়নশীল দেশসমূহের অভিযোজন প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই পাশে দাড়াঁতে হবে যাতে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলো সক্ষমতা বিনির্মাণ করতে পারে”।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বৃতি উল্লেখ করে শাহরিয়ার বলেন, “বাংলাদেশ কখনোই উন্নয়নশীল দেশের জন্য প্রযোজ্য কার্বনের মাথাপিছু উদগীরণ অতিক্রম করবে না”। তিনি জলবায়ু সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তির প্রতি শেখ হাসিনা সরকারের প্রতিশ্রুতি পূনর্ব্যক্ত করেন। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন রোধ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো বাংলাদেশ তার জাতীয় পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন কৌশলের মূলধারায় সন্নিবেশিত করেছে আর এক্ষেত্রে জিডিপি’র এক শতাংশেরও বেশি ব্যয় করছে মর্মে সভাকে জানান প্রতিমন্ত্রী।
জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়ানো এবং টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নের সক্ষমতা বিনির্মাণে শেখ হাসিনা সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ ‘কার্বন বাজেটিং’, ‘কার্বন বিহীন উৎপাদন পথ’ এবং ‘নিম্ন-কার্বন শিল্পায়ন’ এর মতো বিশেষ পরিকল্পনাসহ জলবায়ু ও দুর্যোগ সৃষ্ট বহুমাত্রিক ঝুঁকির কথা বিবেচনায় রেখে সম্প্রতি যুগান্তকারী ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ গ্রহণ করেছে যা পরবর্তী ১০০ বছরের টেকসই উন্নয়নে আমাদেরকে পথ দেখাবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা কৃষি খাতকে জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল কৃষিখাতে রূপান্তরিত করছি। সারাদেশে বৃক্ষ আচ্ছাদ্দন শতকরা ২২ থেকে ২৪ ভাগে উন্নীত করার পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে। ইউনেস্কোর ঐতিহ্য বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনভূমি ‘সুন্দরবন’ এর সংরক্ষণে আমরা ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি”।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা এজেন্ডাসমূহ এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ সর্বদাই সহায়ক ভূমিকা পালন করে চলেছে। প্রকৃতিগতভাবে শান্তি বিনির্মাণকারী হিসেবে নারীর ভূমিকা বৃদ্ধিতে সম্প্রতি আমরা জাতীয়ভাবে একটি কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন করছি।
উল্লেখ্য, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম শক্তিশালীকরণের চলমান পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের অ্যাকশান ফর পিসকিপিং ইনিশিয়েটিভ, ২০১৪ সালে নিউইয়র্কস্থ পিসকিপিং মিনিস্ট্রিয়াল, ২০১৫ সালে নিউইয়র্কে, ২০১৬ তে প্যারিসে এবং ২০১৭তে ভ্যাঙ্কুভারে অনুষ্ঠিত দ্যা লিডার সামিট অন পিসকিপিং অনুযায়ী জাতিসংঘ এই মন্ত্রী পর্যায়ের সভার আহ্বান করে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ উদ্বোধনী ভাষণ দেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলমের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, পুলিশ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধিদল এ সভায় যোগ দেন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন