জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ‘শান্তিরক্ষায় নারী’ বিষয়ক এক উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের নারী শান্তিরক্ষীদের তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের কথা তুলে ধরেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নারী শান্তিরক্ষীতে বাংলাদেশ এখন সৈন্য ও পুলিশ সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে পঞ্চম। আমরা ইতোপূর্বে কঙ্গো ও হাইতিতে দুটি পূর্ণাঙ্গ নারী ফরমড পুলিশ ইউনিট নিযুক্ত করেছিলাম। আইভোরিকোস্ট, হাইতি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক এবং কঙ্গোতে আমরা কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হিসেবে নারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছি। এছাড়া কঙ্গোতে আমাদের দু’জন নারী হেলিকপ্টার পাইলট কর্মরত রয়েছে”।
জাতিসংঘের প্রতি প্রতিশ্রতির অংশ হিসেবে এবং ‘শান্তি ও নিরাপত্তায় নারী’ বিষয়ক রেজুলেশন ১৩২৫ এর আলোকে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে নারী শান্তিরক্ষী বৃদ্ধি করছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত মাসুদ।
তিনি নিরাপত্তা পরিষদের ঐতিহাসিক রেজুলেশন ১৩২৫ প্রণয়ন ও গ্রহণে বাংলাদেশের নিবিড় সম্পৃক্ততার কথা স্মরণ করে বলেন, “২০০০সালে রেজুলেশনটি গ্রহণের সময় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ছিল মূল আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম”। নারী শান্তিরক্ষী নিয়োগে বাংলাদেশ গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিস্তারিত তুলে ধরেন স্থায়ী প্রতিনিধি।
যৌন নিপীড়ন ও এর অপব্যবহার রোধে জিরো টলারেন্সসহ জাতীয় উন্নয়নে নারীদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহীত পদক্ষেপসমূহের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, “নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন ১৩২৫ এবং সংশ্লিষ্ট পরবর্তী রেজুলেশনসমূহ অনুযায়ী বাংলাদেশ ‘নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা’ বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনার খসড়া প্রস্তুতের চূড়ান্ত পর্বে রয়েছে। শান্তিরক্ষীদের জন্য সকল ধরনের যৌন নিগ্রহ ও এর অপব্যবহার রোধে জাতিসংঘ মহাসচিবের জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি সর্বদাই বাংলাদেশের অকুন্ঠ সমর্থন রয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তিরক্ষীদের যৌন নিগ্রহ ও এর অপব্যবহার প্রতিরোধ সংক্রান্ত ‘সার্কেল অব লিডারশিপ’ এর একজন সদস্য। যৌন নিপীড়ন ও এর অপব্যবহার সংক্রান্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের ভলান্টারি কমপ্যাক্ট এরও আমরা সদস্য”।
রাষ্ট্রদূত মাসুদ মহাসচিবের ‘অ্যাকশন ফর পিস’ ও পিস কিপিং অপারেশন বিভাগের অভিন্ন লিঙ্গ সমতা কৌশলের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থনের পুনর্ব্যক্ত করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “কমব্যাট ফোর্সে নারীদের যোগদান বিষয়ে সরকার সব ধরনের বিধি-নিষেধ তুলে নিয়েছে। সরকারি চাকরিতে কর্মজীবী নারীর স্বামী যাতে একই এলাকায় কাজ করতে পারে আমরা তার ব্যবস্থা করেছি। শিশু যত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং নারী বান্ধব কর্ম-পরিবেশ আমরা নিশ্চিত করেছি। একজন নারী ব্রিগেডিয়ার জেনারেলকে আমরা সেনাবাহিনীতে অবদান রাখার জন্য জাতীয়ভাবে পুরষ্কার দিয়েছি।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, “বাংলাদেশ সামরিক ও অসামরিক উভয় নারী শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সর্বোত্তম পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। আমরা আমাদের জাতীয় নীতি-পরিকল্পনা ও অনুশীলনে এ সংক্রান্ত বৈশ্বিক সর্বোত্তম অনুশীলনের প্রতিফলন ঘটাতে আগ্রহী। পাশাপাশি আমরা আমাদের উত্তম অনুশীলন অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই।
৬০টিরও অধিক দেশ এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করে। নিরাপত্তা পরিষদের চলতি এপ্রিল মাসের সভাপতি জার্মানি এই উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করে।
বিডি প্রতিদিন/কালাম