১৭ অক্টোবর, ২০১৯ ১৯:৫৮

বাংলাদেশি কর্মীদের প্রশংসায় মালয়েশিয়া ন্যাচারাল রিসোর্স মিনিস্টার

মালয়েশিয়া প্রতিনিধিঃ

বাংলাদেশি কর্মীদের প্রশংসায় মালয়েশিয়া ন্যাচারাল রিসোর্স মিনিস্টার

মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহ. শহীদুল ইসলাম মালয়েশিয়ার ওয়াটার, ল্যান্ড অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেস মিনিস্টার ড. জেভিয়ার জয়কুমারের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। গতকাল বুধবার এ সৌজন্য সাক্ষাতে দু'জন দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন।  

মন্ত্রী এসময় বাংলাদেশি কর্মীদের দ্বারা সুন্দরভাবে তার বাড়ি নির্মানের উদাহরণ দিয়ে বলেন বাংলাদেশি কর্মীদের দক্ষতা অপ্রতিদ্বন্দ্বী এবং চমৎকার বলে প্রশংসা করেছেন। মানবিক বিপর্যয় বা মানবতার পাশে নিজের ভূমিতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভুয়সী প্রশংসা করেন।  

তিনি বলেন, রোহিংগা বিষয়ে মালয়েশিয়া শুরু থেকেই বাংলাদেশের সাথে আছে, কক্সবাজারে ফিল্ড হসপিটাল পরিচালনাসহ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশেষ করে জাতিসংঘে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহম্মদের স্পষ্ট  ও কঠোর অবস্থানের কথা বলেন।  তিনি বলেন রোহিঙ্গা মায়ানমারের নিজস্ব অভ্যন্তরীন সমস্যা এবং তাদেরকেই এর সমাধান করতে হবে। রোহিংগা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পক্ষে মালয়েশিয়ার সমর্থন আছে এবং থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

মালয়েশিয়ার অকুন্ঠ সমর্থনের জন্য হাইকমিশনার মালয়েশিয়া সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ধন্যবাদ জানান। হাইকমিশনার বলেন বর্তমানে বাংলাদেশ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে পৃথিবীর অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় সরকার ২০০৯ সালে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। 

উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম এই ধরণের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (সিসিটিএফ) গঠন করে যা বিশ্বে প্রথম এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রসংশিত হয়েছে। এছাড়াও জলবায়ু ট্রাস্ট আইন-২০১০ করেছে যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। জলবায়ু পরিবর্তজনিত কারণে মানুষ, জীববৈচিত্র ও প্রকৃতির উপর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় অভিযোজন, প্রশমন, প্রযুক্তি উন্নয়ন ও হস্তান্তর, সক্ষমতা বৃদ্ধি, জনসাধারণে বা জনগোষ্ঠীর খাপ খাওয়ানোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে।  

ক্লাইমেট চেঞ্জ অভিঘাত মোকাবেলায়  অনন্য ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে জাতিসংঘের চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।  মাননীয় মন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া মোকাবেলায় এক সাথে কাজ করার কথা জানান।  

হাইকমিশনার বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল পদ্ধতি প্রয়োগের বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জমির মালিকানা স্বত্ব, ভূমির প্রকৃতি এবং ভূমি ব্যবহার বিষয়ে ব্যাপক কাজ করছে। 

এসময় মন্ত্রী জয়কুমার বলেন, মালয়েশিয়া ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাইজেশন সম্পন্ন করেছে। তিনি মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশকে প্রশিক্ষণ ও  ট্যাকনিকেল সাপোর্ট প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। মান্যবর হাইকমিশনার উভয় দেশের মধ্যে প্রশিক্ষণ ও টেকনিকেল ইস্যু বিনিময়ের প্রস্তাব দেন। মাননীয় মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তারা মালয়েশিয়া থেকে ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে, বাংলাদেশ এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারে এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রস্তাব দেন। 

তিনি পানি ব্যবস্থাপনায় বিশেষ করে খাবার পানি এবং সুয়ারেজ ব্যবস্থাপনায় মালয়েশিয়ার অনন্য পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে বলেন বাংলাদেশ চাইলে মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারে। তিনি বলেন, মালয়েশিয়া নিজস্ব প্রযুক্তি ও পদ্ধতিতে যানবাহন চলাচল, পানি সরবরাহ এবং সুয়্যারেজ ব্যবস্থা অর্থাৎ ত্রিস্তর বিশিষ্ট মাল্টিপারপাস টানেল নির্মান করেছে। বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিতে পারে।
 
বাংলাদেশ হাইকমিশনার তখন বাংলাদেশের গ্যাস, কয়লা,চুনাপাথর, তেল এবং নদী ও সমুদ্রের বালিতে থাকা মূল্যবান খনিজ সম্পর্কে ধারণা দেন। বর্তমানে এশিয়ার প্রধানতম দ্রুত অর্থনীতির বাংলাদেশ সম্পর্কে অধিকতর জানার এবং সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্য হাইকমিশনার মন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। মন্ত্রী উভয় দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র চিহ্নিত করার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম নিয়ে শীঘ্রই বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানান। 

আলোচনাকালে হাইকমিশনের কাউন্সের (শ্রম ২) জনাব মোঃ হেদায়েতুল ইসলাম মন্ডল এবং প্রথম সচিব (পলিটিকাল) জনাব রুহুল আমিন এবং মালয়েশিয়ার ওয়াটার, ল্যান্ড এন্ড মিনারেল রিসোর্সেস মন্ত্রণালয়ের ওয়াটার সার্ভিস ও সুয়ারেজ ডিভিশনের আন্ডার সেক্রেটারি  ড. চিং থো কিম, ওয়াটার সাপ্লাই ডিভিশনের মহাপরিচালক দাতো আব্দুল করিম বিন মোহামদ তাহির, সুয়ারেজ সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের ডিজি সাইয়েদ জাফর ইদিদ বিন সাইয়েদ আব্দিল্লাহ ইদিদ, স্পেশাল অফিসার এড্রিয়েন ইও এবং স্ট্রাটেজিক প্লানিং এন্ড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিটের প্রধান মোহামদ ইরওয়ান মিসরান উপস্থিত ছিলেন।

 

বিডি-প্রতিদিন/ সিফাত আব্দুল্লাহ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর