অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আক্ষেপ করে বললেন, কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছি। বার্ষিক ৪ লাখ ডলারের বেতন আমার। কিন্তু একটি পেনিও নিচ্ছি না। আমার এই যে ত্যাগ, তার জন্যে আজ পর্যন্ত কেউই আমাকে ধন্যবাদ জানায়নি।
তিনি বলেন, তাই বলে আমি থেমে থাকিনি, হতাশও হইনি। এমন একটি যুদ্ধে জয়ী হতে পুরো টিম নিয়ে আমি মাঠে রয়েছি। এতে জয়ী হতেই হবে।
২২ মার্চ রবিবার বিকালে হোয়াইট হাউজে করোনা পরিস্থিতির ওপর প্রতিদিনের প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন আক্ষেপ করলেন। করোনাভাইরাসের আক্রমণকে ভয়ঙ্কর হিসেবে অভিহিত করে ট্রাম্প বলেন, এখন ইরান, নর্থ কোরিয়ার মত দেশকেও আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে। আমি সকলের সাথেই যোগাযোগ রাখছি। কারণ, এটি হচ্ছে নিতান্তই মানবিক একটি সমস্যা।
এই প্রথম অবৈধভাবে বসবাসরত অভিবাসীদের মানবিক সমস্যায় মাথানত করলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। করোনাভাইরাসের টেস্ট করতে গেলে অবৈধ অভিবাসীদের আইসের (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) কাছে তাদের সোপর্দ করা হবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বললেন, এ চিকিৎসা নিতে অভিবাসনের স্ট্যাটাস বিবেচনা করা হবে না। সকলেই সমান সুযোগ পাবেন। কারণ, এটি একটি ভয়ংকর সমস্যা, যা প্রতিটি মানুষের জন্যেই হুমকি।
আর অভিবাসনের স্ট্যাটাসের কারণে কোনো মানুষকে মহাবপিদে ঠেলে দিতে পারি না। এ সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, কয়েকদিন আগে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট একটি বিবৃতি দিয়েও এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছে। সুতরাং করোনার কারণে কোনো অভিবাসীকে বিব্রত করার সুযোগ নেই। সকলেই যেন নির্ভয়ে টেস্ট করতে যান।
৮ রাজ্যের কোটি আমেরিকান অবরুদ্ধ:
করোনা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটায় সারা আমেরিকায় জরুরি অবস্থা জারির পর নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, ওয়াশিংটন, ডেলওয়ারে, কেন্টাকি, ওহাইয়ো, ইলিনয়, লুইঝিয়ানা অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইধরনের নির্দেশ জারির কথা বলা হয়েছে পেনসিলভেনিয়া রাজ্যের ফিলাডেলফিয়া সিটি, মিজৌরি রাজ্যের সেন্ট লুইস ও ক্যানসাস সিটি, কলরাডো রাজ্যের সেন মাইগুয়েল সিটি, জর্জিয়া রাজ্যের এথেন্স ক্লার্ক কাউন্টি এবং আইডাহো রাজ্যের ব্লেইন কাউন্টিতে।
উল্লেখ, ঘরে থাকার নির্দেশের অর্থ কার্ফিউ জারি করা নয়। অপ্রয়োজনীয় কারণে কেউ বাসার বাইরে যেতে পারবেন না। বিশেষ জরুরি যেমন ওষধ ক্রয়, ডাক্তার/হাসপাতালের এপয়েন্টমেন্ট, খাদ্য-সামগ্রি ক্রয়ের জন্যে গ্রোসারি স্টোর, রান্না করার খাবার কিনে আনতে (রেস্টুরেন্টে বসে খাবার অনুমতি নেই), জগিং করা যাবে কমপক্ষে ৬ ফুটের ব্যবধানে, পালিত কুকুর নিয়েও বাইরে যাওয়া যাবে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে, অনলাইনে কাজের সামগ্রী ক্রয় করতে বাসার বাইরে যাওয়া যাবে।
এই নির্দেশের বাইরে রয়েছেন যথারীতি, এ্যাম্বুলেন্স, পুলিশ, সাংবাদিক, চিকিৎসক, নার্স। তবে সকলের সাথেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের আইডি থাকতে হবে।
এভাবেই প্রবাসীরাও স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন। সকলেই করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা জানতে টিভির প্রতি দৃষ্টি রেখেছেন। কারণ, কিছুৃক্ষণ পরপরই প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, স্টেট গভর্ণর, সিটি মেয়রসহ কংগ্রেসের শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রেস ব্রিফিং দিচ্ছেন। উল্লেখ্য, রবিবার রাত ১১টা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৩৩৫৪৬ জন এ রোগে আক্রান্ত হয় এবং মারা গেছে ৪১৯ জন। নিউইয়র্ক রাজ্যে গত ২৪ ঘন্টায় ৪৭৯৬ আক্রান্ত মোট ১৫৭৯০। মারা গেছেন ১১৪ জন। জোন্স হোপকিন্স ইউনিভার্সিটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন