আফগানদের স্থায়ীভাবে বসবাসের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের ‘উদ্বাস্তু আশ্রয় দানের সংখ্যা’ বৃদ্ধির আহবান জানিয়েছেন প্রগতিশীল শিবিরের বামপন্থি সদস্য হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্কের কংগ্রেসওম্যান আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো করটেজ, ক্যালিফোর্নিয়ার বারবারা লী-সহ ৬৬ জন সংগ্রেসম্যান।
বৃহস্পতিবার যুক্ত স্বাক্ষরের এক পত্রে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে আহবান জানানো হয়েছে যে, চলতি বছর উদ্বাস্তু গ্রহণের সংখ্যা ৬২৫০০ থেকে বাড়িয়ে দু’লাখে উন্নীত করা হোক। আফগানিস্তানে মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়ায় মার্কিন বাহিনীকে সহায়তাকারিরা নিরাপদ বোধ করছেন না। তালেবানের সশস্ত্র সদস্যরা তন্ন তন্ন হয়ে সকলকে খুঁজছে হত্যার মধ্য দিয়ে প্রতিহিংসাপরায়ণ চরিতার্থের জন্য।
উল্লেখ্য, নানাবিধ কারণে নিজ নিজ বাড়ি ত্যাগে বাধ্য হওয়া লোকজনকে স্থায়ীভাবে বসবাসের রীতি অনুযায়ী চলতি বছর সর্বোচ্চ ৬২ হাজার ৫০০ জন উদ্বাস্তুকে গ্রহণের সীমা নির্ধারণ করেছে বাইডেন প্রশাসন। ট্রাম্পের আমলে তা কমিয়ে ১৫ হাজার করা হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট বাইডেন সামনের বছর উদ্বাস্তু গ্রহনের সংখ্যা সোয়া লাখে উন্নীত করার কথা বলেছিলেন। এমনি অবস্থায় আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থান ঘটায় মার্কিন বাহিনীকে নানাভাবে সহায়তা প্রদানকারিরা যতদ্রুত সম্ভব আফগানিস্তান ত্যাগের চেষ্টা করছেন।
বাইডেনকে প্রেরিত কংগ্রেসম্যানদের পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, আফগানের মিত্ররা যেহেতু কঠিন এক পরিস্থিতিতে নিপতিত হয়েছে। তারা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তালেবানরা পেলেই হত্যা করবে। ইতিমধ্যেই সে ধরনের হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েও গেছে। এমন অবস্থায় বিপদগ্রস্ত আফগানদের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা ওপেন করা জরুরী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ ৪০ বছরের যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং গত ২০ বছর মার্কিন বাহিনীকে সহায়তাকারিরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্যে আমেরিকাকে বেছে নিতেই পারেন। এ অবস্থায় তাদেরকে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মহানুভবতার প্রমাণ রাখতেই হবে।
পত্রে স্বাক্ষরকারিরা সকলেই ডেমক্র্যাট। তারা উল্লেখ করেছেন, ইথিয়পিয়া, লেবানন, হাইতির লোকজনও চরম সংকটে রয়েছে। তাদের কথাও ভুলে গেলে চলবে না। আরো উল্লেখ করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন স্থানে বিরূপ পরিবেশ তৈরী হয়েছে, শস্য জ্বলে পুড়ে ছারখার হচ্ছে। বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হচ্ছে। আগ্নেয়গিরি অগ্নুৎপাতের মত পরিস্থিতি অবলোকন করতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, আফ্রিকা অঞ্চলে। লাখ লাখ মানুষের সহায়-সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। এসব দিকও বিবেচনায় রাখতে হবে সবচেয়ে মানবিকতাপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে।
পত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, আফগানিস্তানের নারী সংগঠক, মানবাধিকার কর্মী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, উভয়লিঙ্গের মানুষ, সাংবাদিকতায় নিয়োজিতরাও নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছেন। এদের কথাও ভাবতে হবে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৪ আগস্ট থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক লাখ ৫ হাজার আফগানকে স্থানান্তর করেছেন মার্কিন বাহিনীসহ মিত্র বাহিনীর বিমানগুলো। এরমধ্যে ৪৫০০ জন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেন। আর কত আফগানকে সরাতে হবে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা মনে করছেন, গত ২০ বছর মার্কিন বাহিনীর সহায়তাকারি হিসেবে এক থেকে তিন লাখ আফগান কাজ করেছেন। তারাই রোষানলে পড়েছেন তালেবান প্রশাসনের।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন