১৭ মে, ২০২২ ১০:০২

অনুপ্রেরণার গল্প শোনালেন চ্যান্সেলর আবুবকর হানিপ

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

অনুপ্রেরণার গল্প শোনালেন চ্যান্সেলর আবুবকর হানিপ

স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর নানাবিধ কারণে যারা ক্লাসে যেতে ব্যর্থ হচ্ছেন তাদের সমস্যা নিয়ে খোলামেলা একটি আলোচনা হলো নিউইয়র্কে পিপলএনটেক ইন্সটিটিউটে। 

১৪ মে শনিবার সন্ধ্যায় বিশেষভাবে প্রয়োজন এ আলোচনা অনুষ্ঠানের সার্বিক সহায়তায় ছিল ‘ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি’ তথা ডব্লিউইউএসটি। আলোচনায় অংশ নিয়ে ডব্লিউইউএসটি’র চ্যান্সেলর তথ্য-প্রযুক্তিবিদ আবুবকর হানিপ বলেন, স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর অনেকেই পরিচিতজনদের পরামর্শে ভার্সিটিতে ভর্তি না হয়ে নগদ অর্থ উপার্জনের অভিপ্রায়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। অনেকে সে আবেদনের পরই স্টুডেন্ট ভিসা লংঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হন এবং গ্রীণকার্ডের প্রত্যাশাও ক্ষীণ হয়ে উঠেছে। আবার কেউ কেউ এসাইলামের আবেদন পেন্ডিং থাকার সুবাদে ওয়ার্ক পারমিট পেয়ে ট্যাক্সি ড্রাইভিংয়ে লিপ্ত হয়েছেন। এমন অবস্থায় থাকা স্টুডেন্টদের আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের পথ শুধু ধুলিসাৎ হয়নি, স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের প্রত্যাশাও সুদূর পরাহত হয়েছে। কারণ, তারা ভিসার নিয়ম লংঘন করেছেন। এ অবস্থায় যাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের আদেশ জারি হয়েছে বা হবে তারা সিটিজেনকে বিয়ে করেও গ্রীণকার্ড অতটা সহজে পাবেন বলে মনে হয় না। 

চ্যান্সেলর হানিপ পরামর্শ দিয়েছেন, স্টুডেন্ট ভিসা হারানোরা এখনও সঠিক পথে ফিরতে ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নিগণের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। একটি পথ বেছে নিয়ে সেই ভিসা পুনর্বহাল করতে পারলে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় স্বপ্ন পূরণে অন্যতম অবলম্বনে ব্যবহার করা যাবে ‘ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি’কে। উল্লেখ্য, ভার্জিনিয়ায় অবস্থিত এই ভার্সিটির মালিক এবং চ্যান্সেলর হলেন আবুবকর হানিপ। 

আবু হানিপ বলেন, স্টুডেন্ট ভিসার অমর্যাদা করে যারা অডজবে লিপ্ত হয়েছেন নগদ ডলারের ধান্দায় তারা বাকিটা জীবন কষ্টের মধ্যে নিপতিত হয়েছেন-এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। অপরদিকে যারা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছেন তারা কোর্স সম্পন্ন করে আমেরিকান কোম্পানীতে চাকরির অফার লোফে নিলেই গ্রীণকার্ডের পথ সুগম হবে। বার্ষিক বেতন লাখ ডলারের বেশী হবে। আবুবকর হানিপ বলেন, আমাদের ভার্সিটিতে ক্লাস চলছে গ্র্যাজুয়েশনের পরই চাকরিতে ঢোকা যাবে এমন পদ্ধতিতে। সুতরাং হতাশ হবার কিছু নেই। আমরা স্কলারশিপও দিচ্ছি বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসায় আগতদেরকে। 

নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স এলায়েন্সের অন্যতম সংগঠক টিপু সুলতানের সার্বিক সহায়তায় এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারি শিক্ষার্থীরা হতাশা থেকে মুক্তির দিশা পেয়েছেন বলে জানা গেছে। কারণ, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণার গল্প শোনিয়েছেন আবুবকর হানিপ। চ্যান্সেলর হানিপের নিজের গল্পটাই অনুপ্রেরণার এবং পথ দেখানোর গল্প। আর সে কারণে তিনি যে কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলে তার গল্পটাই সকলে শুনতে চান। আর শোনাতে চান আবুবকর হানিপ নিজেও। যুক্তরাষ্ট্রে কমিউনিটিতে একজন সফল বাংলাদেশি আমেরিকান এই ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ।  

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জ, সংগ্রাম ও সুযোগ নিয়ে আলোচনা ছিলো অনুষ্ঠানের মূল্য প্রতিপাদ্য। আবুবকর হানিপ ছিলেন এই আয়োজনের কি-নোট স্পিকার। 

পিপলএনটেকের কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠানে ছিলেন নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশি এবং অন্য দেশের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শিক্ষার্থী- প্রশিক্ষণার্থীরা। সেখানেই আবুবকর হানিপ তার নিজের জীবনের গল্পটি শোনান। উপস্থাপনায় তিনি জানাচ্ছিলেন, কি করে এখানকার বাংলাদেশি ডায়াসপোরার মধ্যে একটি স্বপ্ন বুনে দিতে সক্ষম হয়েছেন। যার পথ ধরে এখানে প্রতিটি পরিবারে একসময় ছিলো একজন ইয়ালো ক্যাব চালক; যা এখন ধীরে ধীরে প্রতি পরিবারে একজন করে আইটি প্রফেশনালে পরিবর্তিত হচ্ছে। এবং সে প্রক্রিয়ায় একটি বড় অবদান রেখে চলেছে তারই প্রতিষ্ঠিত পিপলএনটেক। যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অন্তত ৭০০০ বাংলাদেশি আজ আইটি প্রশিক্ষিত হয়ে চাকরির বাজারে ড্রিম জব করছে। যার প্রায় সবগুলোই সিক্সডিজিট প্লাসের চাকরি। 

আবুবকর হানিপ জানান, তার পরিচালনায় ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি- ডব্লিউইউএসটি-ও একটি দক্ষতানির্ভর শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে এগুচ্ছে-যা এখানকার সকল শিক্ষার্থীর একটি ডিগ্রির পাশাপাশি সময়ের সবচেয়ে আগুয়ান ও চাহিদাসম্পন্ন বিষয়গুলোতে দক্ষ করেই যুক্তরাষ্ট্রের কর্মবাজারে এগিয়ে দেবে। এতে করে এখানকার প্রতিটি শিক্ষার্থী সেই একই রকম সিক্সডিজিট আর্নার হতে পারবে তাদের শিক্ষাপরবর্তী কর্মজীবনের শুরু থেকেই। 

আবুবরক হানিপ বলেন, "নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মজগতকে যতটা বুঝতে পারি, যুক্তরাষ্ট্র এখন দক্ষ মানুষের দেশ। এখানে দক্ষদের সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। আর সেই সম্ভাবনা থেকেই ডব্লিউইউএসটি তার শিক্ষার্থীদের দক্ষ করেই কর্মজগতে পাঠানোর প্রয়াস নিয়েছে। এবং শিগগিরই এই ঘোষণায় যাচ্ছে যে- ‘নো জব নো ট্যুইশন’। অর্থাৎ ডব্লিউইউএসটির গ্র্যাজুয়েটরা চাকরিবাজারে সুযোগ না পেলে তাদের ট্যুইশান ফি-ই ফেরত দেবে বিশ্ববিদ্যালয়।" 

বিষয়গুলো যখন বলছিলেন একজন প্রত্যয়ী আবুবকর হানিপ, উপস্থিত দর্শকরা তা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছিলেন। 
অভ্যাগতদের মধ্যে ছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশি জনপ্রতিনিধি, কমিউনিটিতে প্রতিষ্ঠিত পেশাজীবী ও ব্যক্তিত্বরা। তারা তাদের বক্তৃতায় বলেন, আবুবকর হানিপ নিজেই এখন নিজের পরিচয় এবং তিনিই এখন প্রবাসী বাংলাদেশিদের অন্যতম অনুপ্রেরণা। তার নেতৃত্বে একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে, যা প্রতিটি বাঙালির গর্ব-উল্লেখ করেন বক্তারা। 

দুটি পর্বে বিভক্ত এই অনুষ্ঠানে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এর প্রেসিডেন্ট হয়েছেন শুয়েব আহমেদ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট-বাধন। অর্গানাইজারের দায়িত্বে রয়েছেন টিপু সুলতান পরে প্রথম প্যানেল আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন এশিয়ান অ্যামেরিকান লিগ্যাল ডিফেন্স অ্যান্ড এডুকেশন ফান্ড এর সিনিয়র স্টাফ অ্যাটর্নি স্টেইলি মার্ক। 

দ্বিতীয় প্যানেল আলোচনায় একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষা জীবনের সংগ্রাম এবং পরে আমেরিকান ড্রিম অর্জনে তার সাফল্যের গল্প তুলে ধরেন। এই পর্বে আলোচনা করেন আরও দুইজন শিক্ষার্থী যারা পিপলএনটেক থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে যে সফলতার পথ মাড়িয়ে চলেছেন তা নতুন শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেন। 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন থার্টিসিক্সথ অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-এর সদস্য জোহরান কে মামদানি, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণাণ, নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্সের নির্বাহী পরিচালক ভৈরবী দেশাই, নিউইয়র্ক ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার এ্যাট লার্জ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ এন মজুমদার, বাংলাদেশ সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, অ্যাস্টোরিয়া সোসাইটি ইউএসএ'র সাধারণ সম্পাদক মো. জাবেদ উদ্দিন প্রমুখ। এ সময় এশিয়ান আমেরিকান লিগ্যাল ডিফেন্স এ্যান্ড এডুকেশন ফান্ডের চীফ স্টাফ অ্যাটর্নি স্ট্যানলী মার্কও ছিলেন। 

ভিসা লংঘন করেছেন কিংবা কলেজ/ভার্সিটিতে ভর্তি হননি-এমন পর্যায়ে থাকা স্টুডেন্টদের যথাযথ পরামর্শ প্রদানের অঙ্গিকার করেছেন অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী এবং আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদার। তাদের সাথে যোগাযোগের আহবান জানানো হয়েছে এই অনুষ্ঠান থেকেই। 

উল্লেখ্য, পিপলএনটেকের ক্যাম্পাসে সমবেতদেরকে ঈদের খাবার পরিবেশনও করা হয়। অর্থাৎ ভিন্ন এক আমেজে অনুষ্ঠানটি হয়েছে ‘ঈদ-উৎসব’ ব্যানারে। পিপলএনটেকের দীর্ঘদিনের কর্মকাণ্ডের উচ্ছ্বাসিত প্রশংসা করেছেন সাপ্তাহিক বাঙালির সম্পাদক কৌশিক আহমেদ, কম্যুনিটি লিডার জাবেদ উদ্দিন, সাহানা মাসুম প্রমুখ।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর