‘ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো, দীপালিকায় জ্বালাও আলো, জ্বালাও আলো, আপন আলো, সাজাও আলো ধরিত্রীরে’- এই স্লোগানে নিউইয়র্ক, আটলান্টিক সিটিসহ সমগ্র আমেরিকায় ৩১ অক্টোবর পালিত হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ‘শ্যামাপূজা ও দীপাবলি’ উৎসব। শাস্ত্রমতে কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে দীপান্বিতা পার্বণ শ্রাদ্ধ ও শ্যামা পূজা করা হয়। প্রতি বছরই দুর্গাপূজার আনন্দ মিইয়ে যাবার আগেই দীপাবলি আসে। বিজয়ার ভাসানে পাঁচদিনের আনন্দ বিদায়ে অবচেতনে হলেও যে বিয়োগবিধূর চেতনায় আবিষ্ট হয় মন, সেই মন দীপাবলিকে সামনে রেখেই আবার আনন্দের স্বপ্ন দেখে। শ্যামা দেবি হলো শান্তি, সংহতি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতীক। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের লালনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ভক্তের জীবনে অবারিত কল্যাণের অঙ্গীকার নিয়ে ধরণীতে আগমন ঘটে দেবী শ্যামার।
সম্পূর্ণ শাস্ত্রীয় মতে নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকায় শ্রীকৃষ্ণ ভক্তসংঘের মন্দিরে সংগঠনের চেয়ারম্যান ডা. প্রভাত চন্দ্র দাস, পরিচালক রূপকুমার ভৌমিক এবং সুশীল সাহা সমবেত পূজারিগণকে সুন্দর দিনের প্রত্যাশায় পরস্পরের সহযোগী হয়ে কাজকর্মে মনোনিবেশের উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন। এ সময় শ্রীকৃষ্ণ ভক্তসংঘের পরিচালক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠক সবিতা দাসের নেতৃত্বে সমবেত ধর্মীয় সঙ্গীতে পূজারিগণকে উজ্জীবিত করেন। চলে উলুধ্বনি। পুষ্পাঞ্জলি ও ষোড়শ উপচারে দেবী কালির পূজার মধ্য দিয়ে অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে কল্যাণের শক্তি লাভ করার লক্ষ্যে সন্ধ্যার পর হিন্দুরা শ্যামা পূজা উদযাপনের জন্য প্রার্থনা হলে সমবেত হন। শ্যামাপূজা ও দীপাবলি উপলক্ষে প্রবাসী সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের বাড়িতে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন। প্রবাসে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের মধ্যে এ ব্যাপারে যথেষ্ট উৎসাহ-উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়েছে।
আটলান্টিক সিটি থেকে সংবাদদাতা সুব্রত চৌধুরী জানান, নিউজার্সি স্টেটের এবসিকন শহরের ৬১১, দক্ষিণ শোর রোডে অবস্থিত রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে সম্পূর্ণ শাস্ত্রীয় মতে ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে শ্যামাপূজা ও দীপাবলি উৎসব উদযাপিত হয়েছে। অধিবাসের মাধ্যমে শ্যামাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। অনুষ্ঠানে পশ্চিম ভার্জিনিয়াস্থ নতুন বৃন্দাবনের ব্রম্মচারি শুভানন্দ দাস উপস্থিত থেকে ভক্তদের কৃতার্থ করেন এবং শ্যামা পূজার তাৎপর্য তুলে ধরেন।
শক্তি ও শান্তির দেবী শ্যামা দেবীর আগমন উপলক্ষে আটলান্টিক কাউন্টির হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মনে-প্রাণে ও ঘরে ঘরে উৎসাহ-উদ্দীপনা, আনন্দ-উচ্ছ্বাস পরিলক্ষিত হয়েছে। ওইদিন ঢাক-ঢোল, কাঁসর আর উলু ধ্বনিতে মুখরিত ছিল মন্দির প্রাঙ্গণ। ভক্তকুলের মহাপ্রসাদ আস্বাদনের মাধ্যমে শ্যামাপূজার কর্মসূচিও সমাপ্তি ঘটে। রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের পক্ষে লিটন ধর ও সুনীল দাশ ভক্তদের শ্যামা পূজা ও দীপাবলির শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/এএ