সোমবার, ৩১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

আলু কাহিনি

তানভীর আহমেদ

আলু কাহিনি

মেসে আমরা আটজন। একেকজন একেক কাজে ব্যস্ত। রাতে ঘরে ফিরে খাবার নিয়ে বাধে গ-গোল। কেউ গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে খেয়ে এসেছে, কেউ টিউশনি করতে গিয়ে খেয়ে এসেছে, কেউ গিয়েছিল আত্মীয়ের বাসায়। কোনো কোনো দিন সবাই দুপুর থেকে অভুক্ত। ‘মিল সিস্টেম’ তাই হযবরল। বুয়া পড়েছেন বিপাকে। কোনো দিন দুজনের রান্না করে খাবার নষ্ট হয়। কোনো দিন আটজনের খাবারেও কুলোয় না, কারও সঙ্গে সেদিন বন্ধু এসেছে মেসে! মাস শেষে খরচ বাড়ে। আমাদের মেসে এ ধরনের সংকটে এগিয়ে আসে মতি। সে বুয়াকে ডেকে আনল। ‘শোনেন, আমরা প্রতিদিন সকালে এই খাতায় লিখে যাব আজ কয়জনের রান্না হবে।’ বুয়া বলল, আচ্ছা। মতি লিখল, পাঁচ। ‘বলেন তো, আজ কয়জনের রান্না হবে?’ বুয়া খাতার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আপনাগো সবার লেইগা রান্না হইব।’ মতি ঘটনা আকস্মিকতায় কিছু বুঝে উঠতে পারল না। আমি বললাম, ‘মতি, বুয়া তো পড়ালেখা জানে না।’ মতি খেপে গিয়ে বলল, ‘মাস শেষে টাকা তো দেখি ঠিকই গুইনা নেয়, তখন পড়াশোনা শিখে কই থেইকা?’ যাই হোক, এ পথে ব্যর্থতার পর মতি দ্বিতীয় পদ্ধতি বের করল। এ পদ্ধতির নাম আলু পদ্ধতি। সকালে আমরা মেস থেকে বের হওয়ার সময় টেবিলে আলু রেখে যাব। যে কয়টা আলু ততজনের জন্য রান্না। বুয়া সহজেই আলু পদ্ধতি বুঝে নিলেন। আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। তবে এ বাঁচা সপ্তাহ পেরোল না। গত রাতে ঘরে ফিরে দেখি পাতিল-পাতিল রান্না। চাইলে সীমিত পরিসরে দুই, তিনজনের বিয়ের অনুষ্ঠান সেরে ফেলা যায়। এত রান্না হঠাৎ? ওদিকে মতির সঙ্গে বুয়ার তীব্র বাকবিতন্ডা চলছে। ঘটনা কিছুক্ষণ পরেই বুঝলাম। ঘটনা সামান্য। মতির খুব আলুভর্তা খেতে ইচ্ছা করছিল। তাই সকালে বাইরে বের হওয়ার সময় কিছু আলু বের করে টেবিলে রেখে গিয়েছিল মতি। সেই আলু গুনে গুনে ততজনের জন্য রান্না করেছেন বুয়া। আপাতত বাসায় রান্নার অভাব নেই। মতির পক্ষ থেকে আপনাদের নিমন্ত্রণ রইল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর