সোমবার, ২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বপ্ন দেখতে গিয়ে

রাফিউজ্জামান সিফাত

স্বপ্ন দেখতে গিয়ে

ঘরে ঢুকে চৌকির নিচে ব্যাগ রাখার সঙ্গে সঙ্গে পল্টুর মনে হলো ইশশ... ভুল হয়ে গেল। এভাবে ফেসবুকে চাকরিজীবী বন্ধুদের পোস্ট দেখে ঝোঁকের মাথায় বাড়ি থেকে চলে আসাটা ঠিক হয়নি। লকডাউনে গ্রামের বাড়িতেই সে ভালো ছিল। শুয়ে-বসে দিন কাটানো। ঘুমায়, ফেসবুক মিম শেয়ার করে, সিনেমা দেখে, আবার মিম শেয়ার করে, ঘুমানো। তিন বেলা চাওয়ার আগেই গ্রাহকের মুখের সামনে ভাত-তরকারি চলে আসে, ঢাকায় সেই সৌভাগ্য নেই। সেখানে সকালে ঘুম থেকে জেগে আগে বুয়াকে ফোন দিতে হয়। অধিকাংশ সময়েই বুয়া কল রিসিভ করেন না। যেদিন বুয়া কল ধরেন না সেদিন নিজেদেরই রান্না চড়াতে হয়। কেউ কেউ হোটেল থেকে খেয়ে আসে। সেটাও খরচের বিষয়। খাবারের পেছনে সব খরচ করে ফেললে দৈনিক ইন্টারনেটের বিলের জোগান আসবে কীভাবে? একবেলা ভাত না খেয়ে কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব কিন্তু মেগাবাইট ছাড়া এক মুহূর্ত টিকে থাকা সম্ভব নয়। বাকিরা কেউ আসেনি, সে একা চলে এসেছে। গত দুই দিন ধরে গ্রুপ চ্যাটে তার চাকরিজীবী বন্ধুরা আলোচনা করছিল, শহরে ফিরে আসবে। কারণ অধিকাংশ অফিস খুলে দেওয়া হয়েছে। ওদের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে পল্টুও শহরে চলে এলো। যদিও অন্যদের মতো পল্টুর শহরে কোনো কাজ নেই। অন্যদের অফিস আছে, কারও টিউশনি আছে অথবা গার্লফ্রেন্ডকে সময় দিতে হয়। পল্টুর এসব কিছুই করতে হয় না। সে পুরোদস্তুর বেকার। লকডাউনের আগে একটা অফিসে অবশ্য সে জয়েন করেছিল। দুই দিন সকাল সকাল অফিসে যাওয়ার পর অফিস কর্তৃপক্ষ বুঝেছে তার আসলে অফিস অপেক্ষা সকালের ঘুমটা জরুরি। তৃতীয় দিন তাকে বের করে দেওয়া হয়। আজ সকালে বুয়াকে ফোন দিয়ে পল্টু শুনল বুয়া বাড়িতে চলে গেছে। এক মাস আর ফিরবেন না। ওদিকে মোড়ে কালামের খাবারের হোটেলও বন্ধ। কালাম বাবুর্চি নিজেই শাটার ফেলে বাড়ি চলে গেছে। দুই রুমমেট মেসে না ওঠে আত্মীয়দের বাসায় উঠেছে। লকডাউন সময়টা তারা ওখানেই কাটাবে। পল্টু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কিছু সময় চিৎ হয়ে শুয়ে থাকে আচমকা সে লাফ দিয়ে ওঠে বসল। লকডাউনের আগে মেসের বিপরীত দিকের বাড়ির জানালার ধারে এক তরুণীর সঙ্গে তার কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে। প্রতিদিন বিকালে সেই তরুণী বই নিয়ে জানালার কাছে টেবিলে পড়তে বসে। ঘটনা আগানোর আগেই লকডাউনের কারণে তাকে বাড়ি চলে যেতে হয়। এখন এসেই যখন পড়েছে সে ঠিক করল, প্রেমটা এবার করেই ফেলবে। উত্তেজিত পল্টু জানালার কাছে এসে দাঁড়ায়। কাউকে দেখা যাচ্ছে না। পল্টু চেয়ার টেনে জানালার ধারে বসেছে। এরই মধ্যে সে একটা কাগজে নিজের মোবাইল নম্বর লিখে এক টুকরো ইটের সঙ্গে কাগজটা বেঁধে ফেলেছে। তরুণীকে জানালার ধারে দেখলেই তার দিকে ইট ছুড়ে মারবে। তারপর ফোনে প্রেম। দুপুর গড়িয়ে বিকাল, বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা, তরুণীর দেখা নেই। ঘুমে তার চোখটা লেগে আসতে লাগল। সন্ধ্যার পর তরুণীদের বাসার ছাদে আলো জ্বলে ওঠে, ছাদভর্তি লোক, সেখানে স্টেজ সাজানো হচ্ছে, চার ধারে সাজ সাজ রব। সেই তরুণী বিয়ের সাজে স্টেজে বসে আছে। মুখে হাসির বন্যা। পাশেই জামাই বেশে এক লোক নাকে রুমাল চেপে ধরে আছে। তাদের পেছনে স্টেজের দেয়ালে বড় করে লেখা, ‘শুভ বিবাহ’। কিন্তু এ সময় তো জনসমাগম করা ঠিক না। কাজটা ঠিক হলো না। পল্টু স্বপ্ন দেখছে কিনা কে জানে? স্বপ্ন না দেখলে তার একটা মাইক নিয়ে বিষয়টা জানানো দরকার, তাই না?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর