আমার এক বড়ভাই বললেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আসলেই খুব জিনিয়াস ছিল। নইলে এত বছর আগে কীভাবে এই কথাগুলো লিখে যায়! সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, সে সময়ে মোবাইল ফোন ছিল না। তারপরও মেসেজের ব্যাপারে এরকম দুর্দান্ত একটা কথা... সত্যি, ভাবা যায় না। একটা মানুষ সুপার জিনিয়াস না হলে এমন কথা লিখে যাওয়া অসম্ভব। আমি বড়ভাইয়ের কথাগুলো শুনে কিছুক্ষণের জন্য নীরবতা পালন করলাম। বোঝার চেষ্টা করলাম তিনি মূলত কী বোঝাতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমার চেষ্টা ব্যর্থ হলো। তাই তাকে অনুরোধ করলাম ব্যাপারটা খুলে বলার জন্য। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ মেসেজের ব্যাপারে কী বলে গেছেন, সেটা জানানোর জন্য। বড়ভাই বললেন, নতুন করে জানানোর কিছু নেই। এটা সবারই জানা। তোরও জানা। রবীন্দ্রনাথ বড় একটা ডায়ালগ দিয়ে গেছেন। ডায়ালগটা হচ্ছে- ‘যাহা চাই, তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই, তাহা চাই না’। এই ডায়ালগের প্রথম অংশ কোন প্রসঙ্গে বলে গেছেন আমার ঠিক ধারণা নেই। তবে শেষের অংশ, মানে ‘যাহা পাই তাহা ভুল করে পাই’ এই অংশটা বলে গেছেন মেসেজের প্রসঙ্গে। কীভাবে? আপনি খেয়াল করবেন, আমরা দরকারি মেসেজগুলো সেভাবে পাই না। পেলেও দেরিতে পাই। অথচ বেহুদা মেসেজে আমাদের ইনবক্স ভরে থাকে। তার মানে যেসব মেসেজ পাই সেগুলো চাই না। রবীন্দ্রনাথ কথাটা এত স্পষ্টভাবে না বলে বলে গেছেন এভাবে- ‘যাহা পাই, তাহা চাই না’। আমার কথা হচ্ছে, যেই আমলে মেসেজের প্রচলন ছিল না, সেই আমলে রবীন্দ্রনাথ মেসেজ সম্পর্কে এত সুন্দর একটা কথা কীভাবে লিখলেন? বড়ভাইয়ের উদ্ভট প্রশ্ন শুনে আমার মুখ দিয়েও উদ্ভট একটা কথা বের হয়ে গেল। বললাম, রবীন্দ্রনাথের আমলে টিঅ্যান্ডটি ফোনেই মেসেজ লেখা যেত। আমার কথা শুনে বড়ভাইয়ের মুখ হাঁ হয়ে গেল। এই সুযোগে আমি কেটে পড়লাম। তবে খুব বেশিদূর যেতে পারলাম না। তার আগেই পড়ে গেলাম আমার এক ছোটভাইয়ের সামনে। সে বলল, ভাই, সারা দিন এত অদরকারী মেসেজ আসে! কী আর বলব। অথচ সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা করেও দরকারী মেসেজ পাওয়া যায় না। কী একটা যন্ত্রণা। আচ্ছা, এই যন্ত্রণা থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই? আমি বললাম, থাকবে না কেন, অবশ্যই আছে। তুই যদি আমার বন্ধুকে ফলো করতে পারিস তাহলে দেখবি তোর আর কোনো যন্ত্রণাই থাকবে না। ছোটভাই বলল, আপনার বন্ধুকে কোথায় ফলো করব? ফেসবুকে? নাকি টুইটারে? আমি বললাম, আরে না, ওই ফলো করার কথা বলিনি। আমি বলেছি, সে তার মোবাইল নিয়ে যা করেছে তুইও যদি সেটা করিস তাহলে অদরকারী মেসেজের কারণে তোকে আর যন্ত্রণা পোহাতে হবে না। ছোটভাই জানতে চাইল আমার বন্ধু মোবাইল নিয়ে কী করেছে। আমি বললাম, মোবাইল হাতে নিয়ে সে ঝুম বৃষ্টির মধ্যে ভিজেছে। এরপর থেকে তার মোবাইলে অদরকারী মেসেজ আসবে দূরের কথা, দরকারী মেসেজও আসে না। আরে মেসেজ আসবে কি, ফোনই তো আসে না। তুইও তাহলে মোবাইল হাতে নিয়ে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য রেডি হয়ে যা। আমি একটু আবহাওয়া অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখি কবে নাগাদ বৃষ্টি নামতে পারে।
আমার এক চাচাতো ভাই বলল, কেন যে ১০ বছর আগে বিয়ে করে ফেললাম! আজকাল যদি বিয়ে করতাম তাহলে অনেক খরচ বেঁচে যেত। আমি জানতে চাইলাম, কীভাবে? চাচাতো ভাই বলল- আরে তখন মোবাইলে অত মেসেজ লিখতাম না। ফলে আঙুলেরও ব্যায়াম হতো না। তাই আঙুল ছিল মোটা। ব্যস, বিয়ের আংটি বানাতে গিয়ে বেশি স্বর্ণ লেগেছে। এখন সারা দিনই বলতে গেলে মেসেজ লিখি। মানে ব্যায়ামে ব্যায়ামে আঙুল স্লিম হয়ে গেছে। হিসাব করে দেখলাম, এই স্লিম আঙুলের জন্য আংটি বানাতে খরচ হতো আগের খরচের অর্ধেক। অত্যন্ত আফসোসের ব্যাপার।
আমার এক ভাবী অভিযোগ করলেন- মোবাইলে বেশি বেশি মেসেজ আসার কারণে নাকি তার সংসার ভাঙতে চলেছে। আমি বললাম, তার মানে ভাই সাহেব কোনো মেয়ের সঙ্গে মেসেজ লেনদেন করছে? ভাবী বললেন, আরে না। সে অলস প্রকৃতির তো! এই জন্য তার মোবাইলে সারা দিনে যত মেসেজ আসে সে নিজে পড়ে শেষ করতে পারে না। শুধু মেসেজ পড়ে শোনানোর জন্য সে একজন সুন্দরী সেক্রেটারি নিয়োগ দিয়েছে। ব্যস, এখন এই সুন্দরী সেক্রেটারির সঙ্গে তার মহব্বত।