সোমবার, ৩০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

বাজার করতে গিয়ে

রাফিউজ্জামান সিফাত

বাজার করতে গিয়ে

আজকেও বাজারের টাকা থেকে পিন্টু একটা টাকাও সরাতে পারেনি। রাগে দুঃখে তার শরীর জ্বালা করছে। এভাবে পরপর চার সপ্তাহ বাজারের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা থেকে কেয়ারটেকার পিন্টু টাকা মারতে পারল না। এতে তার প্রেমিক জীবনের  ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। শেফালীর সঙ্গে তার সদ্য গজিয়ে ওঠা প্রেম প্রায় ভাঙে ভাঙে অবস্থা। প্রতি মাসে বেতনের বাইরে বাজার থেকে চুরির এই বাড়তি টাকা তার প্রেম টিকিয়ে রেখেছে। বাজারের টাকা থেকে প্রতি সপ্তাহে সে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সরিয়ে ফেলে। সেই টাকা সে শেফালীর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলায় খরচ করে। তাকে স্নো, পাউডার, লিপস্টিক, নেলপলিশ কিনে দেয়। মাসে একবার দুজনে রেস্টুরেন্টে খেতে যায়। কিন্তু গত এক মাস ধরে পিন্টু এসব কিছুই করতে পারছে না। কারণ বাজারে আগুন। যা-ই কিনতে যায়, তাতেই দোকানিরা বাড়তি দাম হাঁকায়। শাকসবজি থেকে শুরু করে তেল, মাছ, মাংস সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। বাড়তি দামের অজুহাতে পিন্টু যখন তার বসের কাছে দ্বিগুণ টাকা আদায় করে বাজারে যায় সেদিনই সে দেখতে পায় জিনিসপত্রের দাম আগের চাইতে তিনগুণ বেড়ে গেছে। ফলে তার পক্ষে বাজারের টাকা থেকে চুরি আর সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে শেফালী চলে যাবে। এসব  ভাবতে ভাবতে সে বাজারের থলি হাতে রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরছিল। তখন সে দেখতে পায় একদল লোক রাস্তায় হইচই করছে। মিছিল বের করেছে কি না কে জানে? তার ইচ্ছে ছিল তিন চার মিনিট হেঁটে সে সটকে পড়বে। কারণ দেরি হয়ে যাচ্ছে। বেলা ১২টার মধ্যে বাজার নিয়ে বাসায় পৌঁছতে না পারলে কাজের মেয়েটা রাগারাগি করবে। সূর্যের চেয়ে যেমন বালির তাপ বেশি তেমনি বসের চাইতে বাসার কাজের মেয়ের রাগ বেশি। হঠাৎ কোথা থেকে ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু হলো। পিন্টু পুরোদস্তুর হকচকিয়ে গেল। এমন অভিজ্ঞতা তার জীবনে প্রথম। যে যেদিকে পারল ছুটে পালাল। ভারী বাজারের ব্যাগের কারণে পিন্টু জোরে দৌড়াতে পারল না। সে আছাড় খেয়ে পড়ে গেল। হাতে থাকা বাজারের ব্যাগ থেকে সব জিনিস ছিটকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। কিছু জিনিস পড়ল ড্রেনে, কিছু গিয়ে পড়ল ডাস্টবিনে। আশপাশে কেউ নেই, রাস্তায় একা পিন্টু গড়াগড়ি খাচ্ছে। হাতের ঘড়ির দিকে সে তাকিয়ে দেখল ১২টা বাজতে বেশি দেরি নেই। তাকে  যেভাবেই হোক বাজার নিয়ে যেতে হবে। নইলে তার কপালে ১২টা বাজবে। কিন্তু কী আর করার? রাস্তা ছেড়ে সে উঠে দাঁড়াল। ভগ্ন হৃদয়ে সে খালি থলি হাতে বাজারের দিকে রওনা দিল। মাসের পর মাস ধরে বাজারের টাকা সরিয়েছে সে। এবার এ মাসের বেতনের অধিকাংশ টাকা বাজার করতেই চলে যাবে। এজন্যই জ্ঞানীজন বলেন, চোরের ১০ দিন, গেরস্থের একদিন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর