শিরোনাম
সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশ্বকাপ নাকি বিশ্বচাপ

ভাবি বললেন, না, মানে খেলা চলাকালীন আমি যদি টিভি বন্ধ করে দিয়ে আপনার ভাইকে বলি, আমার জন্য দামি শাড়ি কিনে দিতে হবে, সে রাজি হয়ে যায়। বলে, যা চাও, সব পাবে। তবু দয়া করে টিভিটা চালাও...

ইকবাল খন্দকার

বিশ্বকাপ নাকি বিশ্বচাপ

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ► কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক ছোটভাই বললো, ব্যাপারটা ভালো লেগেছে। ঠিকই তো, বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রভাব শুধু জার্সির দোকানগুলোতে পড়বে কেন? কেন শুধু টেলিভিশনের দোকানগুলোতে পড়বে? পাশাপাশি চায়ের দোকানেও পড়েছে, এটা খুবই ভালো লক্ষণ। আমি বললাম, চায়ের দোকানে বিশ্বকাপের প্রভাব সব সময়ই পড়ে। যেহেতু খেলার আলোচনাটা চা-স্টলেই বেশি হয়। সুতরাং এটা নতুন কিছু না। অতএব নতুন করে ভালো লাগার কিছু নেই। ছোটভাই বললো, আছে ভাই, নতুন করে ভালো লাগার মতো ব্যাপার অবশ্যই আছে। কারণ, আপনি যে বললেন খেলার আলোচনাটা চা-স্টলে বেশি হয়, আমি কিন্তু এই দিকটা বিবেচনা করে বলিনি চায়ের দোকানে বিশ্বকাপের প্রভাব পড়েছে। আমি বলেছি অন্য কারণে। আমি জানতে চাইলাম, কারণটা কী? ছোটভাই বললো, আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি, আমাদের পাড়ায় যতগুলো চায়ের দোকান আছে, বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে প্রত্যেকটা দোকানে নতুন কাপ কেনা হয়েছে। বিশ্বকাপে এর চেয়ে বড় প্রভাব আর কী হতে পারে? আমি চমকিত হয়ে বললাম, তাই তো! এবার পাশ থেকে একজন কানে কানে বললো, ভাই, ওইসব চায়ের দোকানে নতুন কাপ কিন্তু এমনি এমনি কেনা হয়নি। নিজের প্রিয় দল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আর অপ্রিয় দলকে পচাতে গিয়ে অনেকেই উত্তেজিত হয়ে যায় তো, আর উত্তেজিত হয়ে কাপ ছুড়ে মারে তো! আগের বিশ্বকাপের সিজন বিবেচনা করে দেখা গেছে, এক সিজনেই অনেকগুলো কাপ ভেঙেছিল। এবার যাতে আর সেই ঘটনা না ঘটতে পারে, এ জন্য কাচের কাপের পরিবর্তে টিনের কাপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আছাড় একটা কেন, তিনটা করে দিলেও ভাঙবে না। বড়জোর ভচকাইতে পারে। ভাঙার চেয়ে ভচকানো উত্তম নয় কি? আমি বললাম, উত্তম মানে? একেবারে যথার্থ। আমার আরেক ছোটভাই বললো, গত চার বছর ধরে অপেক্ষা করছি কবে আবার বিশ্বকাপ ফুটবলের সিজন আসবে। সেই তো এলো, এসে আমার সর্বনাশ করলো। আমি অবাক হয়ে বললাম, বিশ্বকাপ ফুটবল তোর সর্বনাশ করেছে? কিন্তু কীভাবে? ছোটভাই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, কীভাবে আবার! অনেক খুঁজেটুঁজে একটা ভালো বাড়িওয়ালা পেয়েছিলাম। যে কিনা ছাদে যেতে বাধা দেয় না। ব্যস, ভালোই যাচ্ছিলাম ছাদে। যেতে যেতে একটা প্রেমও হয়ে গিয়েছিল পাশের বিল্ডিংয়ের একটা মেয়ের সঙ্গে। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। তারপর যেই বিশ্বকাপ ফুটবলের সিজন এলো আর ছাদ ভরে গেল বিভিন্ন দেশের পতাকায়, আমার কপাল পুড়লো। কারণ, পতাকার জন্য মেয়েটাকে দেখতে পারি না। নিতান্তই যদি দেখতে চাই, পতাকা টেনেটুনে হালকা সরিয়ে তবেই দেখতে হয়। এখানেও আবার রিস্ক আছে। যেমন গতকাল পতাকার চিপা দিয়ে মাথা বের করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ছিলাম। পরে জানলাম, এটা মেয়েটা ছিল না। ছিল তার খালা। বোঝেনই তো, চিপাচাপা দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে দেখলে এত কিছু খেয়াল করা যায়? আচ্ছা ভাই, বিশ্বকাপ কবে শেষ হবে? আমার এক বড়ভাই বললেন, বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার কারণে কে কতটা সুবিধা পাচ্ছে, জানি না। তবে আমি বিস্তর সুবিধা পাচ্ছি। কীভাবে, সেটা একটু বলি। আমার অফিস কখন ছুটি হবে, কোনো টাইম-টেবিল নেই। বিকেলেও হতে পারে, আবার রাত ১০টাও বাজতে পারে। যে কারণে আমি দ্বিধায় ভুগি, শীতের কাপড় নিয়ে বের হবো, নাকি খালি হাতে বের হবো। যদি শীতের কাপড় নিয়ে বের হই আর যদি বিকেলে অফিস ছুটি হয়ে যায়, তাহলে কাপড় নেওয়াটাই বৃথা হয়ে যায়। আর যদি শীতের কাপড় না নিয়ে বের হই, আর ছুটি হতে রাত ১০টা বাজে, তখন আবার কাঁপতে হয় শীতে। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরু হয়ে যাওয়ায় এখন এই সংক্রান্ত আর কোনো সমস্যাই নেই। এখন শীতের কাপড় সঙ্গে নিয়ে বের না হলেও চলে। হোক না রাত ১০টায় ছুটি, তবু কোনো সমস্যা নেই। কেন জানিস? কারণ, রাস্তাঘাটে এখন আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের প্রচুর পতাকা। সুতরাং শীতের কাপড় না থাকলেও চলে। শীত লাগছে? একটা ধরে টান মারো আর গায়ে জড়িয়ে নাও। ঠিক আছে না?

আমার এক বন্ধু বললো, বিশ্বকাপ নিয়ে আমরা মনে হয় একটু বেশিই মাতামাতি করি। এই মাতামাতিতে ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই। আমি জানতে চাইলাম সে কী ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বন্ধু বললো, এমনিতেই আমার বউ সারা দিন কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করে। কিন্তু বিশ্বকাপের সিজনে ঘ্যানর ঘ্যানর না, ‘গোল’ বলে এমন চিৎকার মারে যে, কানের ডাক্তারের মোবাইল নাম্বারটা সব সময় আমাকে হাতের কাছে রাখতে হয়। আমি খুব লসে আছিরে ভাই! আমার এক ভাবি জানতে চাইলেন, বিশ্বকাপ কতদিন চলবে? আমি বললাম, মাসখানেক। ভাবি বললেন, টাইমটা আরেকটু বাড়ানো যায় না? এই ধরেন মাস ছয়েক? আমি বললাম, কেন? ভাবি বললেন, না, মানে খেলা চলাকালীন আমি যদি টিভি বন্ধ করে দিয়ে আপনার ভাইকে বলি, আমার জন্য দামি শাড়ি কিনে দিতে হবে, সে রাজি হয়ে যায়। বলে, যা চাও, সব পাবে। তবু দয়া করে টিভিটা চালাও। না, মানে হয়েছে কী, খেলা যত বেশি দিন চলবে, তত বেশি দিন আপনার ভাইয়ের কাছ থেকে শখের জিনিসপত্র আদায় করতে পারতাম আর কি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর