সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

খেলা দেখতে গিয়ে

জোবায়ের রাজু

খেলা দেখতে গিয়ে

টেলিভিশন নষ্ট হওয়ার পর শাকিলদের আর টেলিভিশন কেনা হয়নি। এদিকে বিশ্বকাপ জ্বরে সারা বিশ্ব কাঁপছে। শাকিল আর্জেন্টিনা সমর্থক। রাতে আর্জেন্টিনার খেলা আছে। ফলে সে খেলা দেখতে মরিয়া হয়ে উঠছে। পাড়ার দোকানে দোকানে অবশ্য খেলা দেখার যথেষ্ট সুব্যবস্থা থাকলেও সে সুযোগ পাবে না। কারণ নাজিম সাহেব মনে করেন তার সুবোধ ছেলে বখাটে ছেলেদের পাল্লায় পড়ে সিগারেটে সুখটান দিতে পারে। এ সুযোগ তিনি ছেলেকে কখনো দেবেন না। চারদিন আগে শাকিল যখন ইশারা ঈঙ্গিতে বাবাকে বোঝাচ্ছিল যে সে পাড়ার ওইসব টং দোকানে বিশ্বকাপ খেলা দেখতে ইচ্ছুক, নাজিম সাহেব একবাক্যে বললেন, ‘ইম্পসিবল!’ শাকিল আর কথা বাড়ায় না।

আজ রাতে আর্জেন্টিনার খেলা। সন্ধ্যায় শাকিল তার বাবাকে বলল, ‘চলুন, আমরা খেলা দেখতে পলি খালাদের বাড়ি যাই।’ নাজিম সাহেব ভেবে দেখলেন ছেলে তার মন্দ আবদার করেনি। বিশ্বকাপ খেলা তিনিও পছন্দ করেন। ছেলে যেহেতু পলিদের বাড়ি যাওয়ার প্রস্তাব রেখেছে, সে প্রস্তাব গ্রহণ করা যায়। পলি নাজিম সাহেবের মামাতো শালী। এই গ্রামেই তার বিয়ে হয়েছে। নাজিম সাহেবদের বাড়ি থেকে সে বাড়ির দূরত্ব হেঁটে গেলে মিনিট দশেকের পথ।

সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর নাজিম সাহেব শাকিলকে নিয়ে রওনা দিলেন পলিদের বাড়ির উদ্দেশে। উঠোনে আসার পর মনে হলো তিনি ভুল করে প্রেসারের ওষুধ খেয়ে বের হননি। পরে ঘরে গিয়ে প্রেসারের ট্যাবলেট খেয়ে আবার রওনা দিলেন। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। বাবার হাত ধরে পলি খালাদের বাড়ি যাচ্ছে শাকিল। ভয় ভয় লাগছে তার। মনে হচ্ছে এখনই ভূত এসে তাদের হানা দেবে। নাজিম সাহেব ছেলের মনের অবস্থা টের পেয়ে অভয় দিয়ে বললেন, ‘ভয় পাসনে খোকা। বুকে সাহস রাখ আমার মতো। এখন যদি চোর-ডাকাত এসেও আক্রমণ করে, আমি তাদের সঙ্গে একা লড়বো।’ হঠাৎ মুখোশধারী দুটো ছেলে ছুরি হাতে নিয়ে তেড়ে এসে বলল, ‘যা যা আছে বের করুন।’ এ ঘটনায় শাকিল যতখানি ভয় পাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছেন নাজিম সাহেব। ছুরির দিকে তাকিয়ে তিনি কাঁপতে কাঁপতে পকেটের মানিব্যাগটি বের করে দিলেন। ছিনতাইকারীরা চলে যাওয়ার পর শাকিল বলল, ‘বাবা, একটু আগে না বললেন কেউ এখন আক্রমণ করলে একা লড়তে পারবেন। এই আপনার একা লড়া?’ নাজিম সাহেব কোনো কথা না বলে দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগলেন। খেলা হয়তো এতক্ষণে শুরু হয়ে গেছে!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর