শনিবার, ১৯ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
আশুতোষের স্বপ্নপূরণ

অফিস সহকারী থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি যাত্রা

জামশেদ আলম রনি

অফিস সহকারী থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি যাত্রা

আশুতোষ নাথ। অদম্য এক মেধাবী। ছোটবেলা থেকে বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। সেই সঙ্গে রসায়নে উচ্চতর গবেষণা নিয়েও ভাবতেন। সেই স্বপ্ন তিনি লালন করেছেন প্রতিনিয়ত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চট্টগ্রামের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন কলেজ থেকে রসায়নে বিএসসি (অনার্স) করেন। এর মাঝেই অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে চাকরি নেন। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে রসায়নে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আশুতোষ তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে চলেছেন। যদিও তাঁর এই যাত্রা মসৃণ ছিল না। আগামী আগস্টে বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি করতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত জীবনজয়ী সেই আশুতোষ নাথ। পিএইচডি করতে তিনি বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন। সেখানে তিনি মেডিসিন অ্যান্ড সিনথেটিক অরগানিক ক্যামেস্ট্রিতে পিএইচডি করবেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করবেন আশুতোষ। আগামী ১২ আগস্ট স্ত্রী গান্ধী দেবীসহ যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে তাঁর রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে মুদ্রাক্ষরিক পদ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি করতে যাওয়ার খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, আগামী ১২ আগস্ট তাঁর স্ত্রী গান্ধী দেবীসহ যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দেবেন। সেখানে বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন অ্যান্ড সিনথেটিক অর্গানিক ক্যামেস্ট্রির ওপর পিএইচডি করবেন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ে টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করবেন আশুতোষ। আশুতোষ নাথ খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার পান্নাবিল গ্রামের মিলন নাথের ছেলে। ২০০৮ সালে মানিকছড়ি রানী নীহার দেবী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও মানিকছড়ি গিরি মৈত্রী কলেজ থেকে ২০১০ সালে এইচএসসি পাস করেন। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর তিনটি আর্টিকেল প্রকাশ হয়েছে।

সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোতাহার হোসেন সাজু তাঁকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, একজন কর্মপাগল ও অনুসন্ধিৎসু প্রকৃতির মানুষ আশুতোষ। নিয়োগের সময় নিয়োগ কমিটির সদস্য হিসেবে আমিই তাঁর সৃজনশীলতা ও দক্ষতা দেখে একবাক্যে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তাঁকে নিয়োগ দিতে। আশুতোষ নাথ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবারের সবাই অত্যন্ত আনন্দিত। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল রসায়নে উচ্চতর গবেষণা করার। ঈশ্বরের কৃপায় সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলছে। সবার কাছে আশীর্বাদ চাই।’

বুয়েটে আশুতোষের সুপারভাইজার ছিলেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. ওহাব খান। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আশুতোষ অনেক পরিশ্রমী ও বিনয়ী একজন ছাত্র। ভালোমানের দুই-তিনটি গবেষণা করেছে সে। কম্পিউটার, আইটি, কম্পিটিশন ক্যামেস্ট্রিতে সে খুব দক্ষ। হাজী মুহাম্মদ মুহসীন কলেজের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শিক্ষার্থী হিসেবে আশুতোষ  খুবই ভদ্র এবং আন্তরিক। সবদিক দিয়ে তাঁর মধ্যে সহযোগিতামূলক মানসিকতা আছে। কম্পিউটারে তাঁর দক্ষতা রয়েছে।  যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর পিএইচডি যাত্রা সফল হোক, এই কামনা করি।’

সর্বশেষ খবর