শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নদী-বৃক্ষ ও পাখির মানুষ

৩৫ হাজারের অধিক গাছ রোপণ করেন তিনি। এ ছাড়া প্রায় ২৫০ প্রজাতির পাখির ছবি তোলেন

নজরুল মৃধা, রংপুর

নদী-বৃক্ষ ও পাখির মানুষ

শিক্ষকতার পাশাপাশি নদী-বৃক্ষ ও পাখি নিয়ে যার সাধনা তিনি হলেন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ।  নদী, পাখি ও গাছ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১০ সালে রিভারাইন পিপল নামের একটি সংগঠনের শুরুতেই সিনেটর হিসেবে যুক্ত হন। এরপর থেকে শুরু হয় নদী নিয়ে সাংগঠনিক কাজ। নদী নিয়ে কাজ করতে গিয়ে মাঠ পর্যায়ে নদী বিষয়ক তথ্যের অভাব দেখে তাত্ত্বিক লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাঠপর্যায়ে নদীর অবস্থা সম্পর্কে খবর নিতে শুরু করেন। বাংলাদেশে নদ-নদীর সংখ্যাগত ধারণাটা ভুল। নদীর প্রকৃত তথ্য মানুষের কাছ পৌঁছে দেওয়ার জন্য শুরু করেন নদীর মাঠপর্যায়ের তথ্য অনুসন্ধানে। ‘রংপুর অঞ্চলের নদ-নদী’ শীর্ষক একটি গ্রন্থও রচনা করেন। এটি একটি আকর গ্রন্থ। তার তোলা ১৫০ নদীর ছবি নিয়ে একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী রংপুর, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা এবং নীলফামারীতে প্রদর্শন করা হয়। নদী থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধকরণে সফল আন্দোলন করে যাচ্ছেন।

গাছ রোপণের নেশা তার শৈশব থেকে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ হাজারের অধিক গাছ রোপণ করেছেন। যা এখন তার নিজের কাছে বিস্ময় মনে হয়। বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা, প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গাছের চারা সংগ্রহ করে রোপণ করা শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী এবং কয়েকজন কর্মচারী এ বৃক্ষ রোপণে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শাহা ফরিদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ক্যাম্পাসে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক প্রজাতির বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। তার ইচ্ছে রয়েছে ক্যাম্পাসকে দুর্লভ বৃক্ষের উদ্যানে পরিণত করার। এ ক্যাম্পাস যেন বৃক্ষপ্রেমীদের কাছে বৃক্ষের জাদুঘর হিসেবে বিবেচিত হয়। ক্যাম্পাসে দুর্লভ বৃক্ষের মধ্যে একাডেমিক ভবন চত্বরে সফেদা, আলুবুখারা, আমলকী, বট, বিলাতিগাব, জাতনিম, বুদ্ধ নারিকেল, পাকুড়, হরীতকী, শাল, দেবদারু, পলাশ, কাউফল, আঁশফল, বহেরা, অর্জুন, কাইজেলিয়া, রাবার, সোনালু, কাঠ বাদাম লাগানো হয়েছে। এ ছাড়াও ঝুমকোলতা, নীলমণিলতা, পারুল হৈমন্তী, উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকায় আছে গুস্তাভা, তেজমাটাম, ধারমারা, ঝুমকাভাদি, রসকাউ, কণকচাঁপা, পাদাউক, বাজনা, সিন্দুরী, রক্তন, বনআশরা, উদাল, জ্যাকারান্ডা মণিমালা, কুসুম, ভুঁইকদম, গজারি, গর্জন, সুলতানচাপা, বাজনা, জংলিবাদাম, লোহাকাঠ।

দীর্ঘদিন ধরে পাখির ছবি তুললেও বিশেষত করোনাকালীন পাখির ছবি তোলায় বিশেষ মনোযোগ দেন তিনি। রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন রকম পাখির ছবি তুলেছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ২৫০ প্রজাতির পাখির ছবি তুলেছেন। এসব পাখির মধ্যে আম্বার চুটকি, আবাবিল, কুড়াঈগল, কমলাদামা, করুণপাপিয়া, কসাই, কাদাখোঁচা, কাবাসি (বড়), কালাঘাড়রাজন, গাঙচিল, চাতক, জলময়ূর, দলপিপি, উল্লেখযোগ্য। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কারে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর