শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

কোটি মানুষের পত্রিকা

ইমদাদুল হক মিলন

কোটি মানুষের পত্রিকা

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকাটির নাম ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’। পত্রিকার সম্পাদক আমার অনুজপ্রতিম নঈম নিজাম। তাঁর মেধা ও মননে পত্রিকাটিকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে গেছেন। ১১ বছরপূর্তি উপলক্ষে নঈম নিজামকে আন্তরিক অভিনন্দন। এই পত্রিকার সঙ্গে অন্য যাঁরা যুক্ত আছেন তাঁদের প্রত্যেককে অভিনন্দন। পত্রিকা একটি টিমওয়ার্কের ব্যাপার। নেতৃত্বে থাকেন একজন আর তাঁর সঙ্গে থাকেন বহুজন। বহুজন মিলে তৈরি হয় একটি সার্থক পত্রিকা। কিন্তু সার্বিক কৃতিত্ব প্রকৃত অর্থে সম্পাদকের। তিনি হচ্ছেন নেতা। নেতার নেতৃত্বেই হয় সবকিছু। বাংলাদেশ প্রতিদিনে আছেন একঝাঁক তরুণ মেধাবী সাংবাদিক। তাঁদের সাহসী পদযাত্রা এই পত্রিকাকে কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। মাত্র ১২ পৃষ্ঠার পত্রিকাটিতে থাকে প্রচুর সংবাদ। ৫ টাকা দামের পত্রিকাটি হাতে নিয়ে ছোট ছোট প্রচুর সংবাদের মধ্য দিয়ে পাঠক পেয়ে যাচ্ছেন দেশ ও পৃথিবীর প্রায় সব খবর। এখন টেলিভিশন আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগ। যে কোনো ঘটনা ঘটলে তৎক্ষণাৎ বিভিন্ন মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে। তারপরও ছাপা মাধ্যমটি এখনো কেন জনপ্রিয়? ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ কেন কোটি পাঠকের মন জয় করেছে? আমি মনে করি, এর পিছনকার কারণ হচ্ছে ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ সংবাদের পিছনের সংবাদ খুঁজে বের করে, যা টেলিভিশন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসে না। আর যে ব্যস্ত সময়কালের মধ্যে আমরা বসবাস করছি, এই সময়ে মানুষের হাতে এত সময় নেই যে, দীর্ঘক্ষণ ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খবরের কাগজ পড়বেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের বেশির ভাগ সংবাদই ছোট ছোট। এক-দুই মিনিটের মধ্যে বহুকিছু জেনে যাচ্ছে মানুষ। আমি মনে করি, পত্রিকাটির জনপ্রিয়তার মূল কারণ এখানে। যত দিন যাবে এই জনপ্রিয়তা বাড়তেই থাকবে বলে আমার ধারণা।

প্রিয় পাঠক, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন বাংলাদেশ প্রতিদিন দেশের প্রধানতম শিল্প-পরিবার বসুন্ধরার মালিকানায় প্রকাশিত হয়। শুধু একটি পত্রিকাই বসুন্ধরা প্রকাশ করে না। প্রকাশিত হয় তিনটি দৈনিক পত্রিকা ‘কালের কণ্ঠ’, ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ আর ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি সান’। দুটো টেলিভিশন আছে বসুন্ধরা গ্রুপের। ‘নিউজ টোয়েন্টিফোর’ ও ‘টি-স্পোর্টস’। নিউজ টোয়েন্টিফোর শুধুই সংবাদ পরিবেশন করে আর টি-স্পোর্টস শুধু স্পোর্টস বিষয়ক চ্যানেল। একটি রেডিও আছে এই গ্রুপের। ‘রেডিও ক্যাপিটাল’। একটি নিউজ পোর্টাল আছে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম। বসুন্ধরা গ্রুপ যেখানে হাত দিয়েছে সেখানেই সোনা ফলেছে। এই গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এখন থেকে ১২ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করলেন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ। সেই গ্রুপ থেকে প্রথমে প্রকাশিত হলো কালের কণ্ঠ, তারপর বাংলাদেশ প্রতিদিন। প্রকাশিত হলো ইংরেজি দৈনিক ডেইলি সান। রেডিও টেলিভিশন হলো। মাত্র একযুগের মধ্যে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ হয়ে উঠল বাংলাদেশের মিডিয়া জগতের বৃহত্তম মিডিয়া হাউস। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় দৃষ্টিনন্দন বিশাল ভবনে সাতটি মিডিয়ার কর্মকান্ড চলছে। বাংলাদেশে এরকম নজির আর নেই।

বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের চার পুত্র হয়েছেন বাবার মতোই মেধাবী ও সৃজনশীল। এই গ্রুপের মান্যবর এমডি সায়েম সোবহান আনভীর তাঁর তীক্ষè মেধায় বসুন্ধরা গ্রুপকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। জ্যেষ্ঠপুত্র সাদাত সোবহান তানভীর এই প্রতিষ্ঠানের কো-চেয়ারম্যান। সাফিয়াত সোবহান ও সাফওয়ান সোবহান এই দু-জন ভাইস চেয়ারম্যান। তাঁরা প্রত্যেকেই যে যাঁর জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত বসুন্ধরা গ্রুপকে বড় করে তুলছেন। তাঁদের মেধা, মনন ও বুদ্ধিমত্তায় বসুন্ধরা গ্রুপ এখন দেশের শ্রেষ্ঠতম শিল্প পরিবার।

প্রকাশের সময় থেকেই বাংলাদেশ প্রতিদিনে আমি মাঝে মাঝে লিখি। প্রত্যেক ঈদ সংখ্যায় উপন্যাস লিখেছি। সাহিত্য পাতায় মাঝে মাঝে গল্প লিখেছি। কোনো কোনো বিশেষ সংখ্যায় স্মৃতিচারণামূলক রচনা, ব্যক্তিগত রচনা ছাড়াও অন্যান্য বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেছি। আমার লেখালেখির বয়স ৪৮ বছর। এই এতগুলো বছরে বাংলাদেশ এবং ভারতের বহু পত্রিকায় আমি লিখেছি। কিন্তু বাংলাদেশ প্রতিদিনে যখনই যে লেখা আমার প্রকাশিত হয়েছে সেই লেখার যে পরিমাণ সাড়া আমি পেয়েছি, এই এতদিনকার লেখক জীবনে কোনো পত্রিকার লেখার জন্য এমন সাড়া পাইনি। যাঁরা ঠিক সাহিত্যের পাঠক নন, পত্রপত্রিকাও কম পড়েন সেই ধরনের বহু মানুষ বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত আমার লেখা নিয়ে কথা বলেছেন বা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। ব্যাপারটি অবাক হওয়ার মতো।

নঈম নিজামের মাথাভর্তি নানা রকমের আইডিয়া। বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদনার পাশাপাশি তিনি ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের আরও দুটি প্রতিষ্ঠানের সিইও। নিউজটোয়েন্টিফোর টেলিভিশন ও রেডিও ক্যাপিটাল। নিউজ টোয়েন্টিফোর শুরু হওয়ার পর প্রায়ই তিনি আমাকে দিয়ে নানা রকমের অনুষ্ঠান করাতেন। বিভিন্ন ধরনের আলোচনা অনুষ্ঠান। সাক্ষাৎকার ধরনের অনুষ্ঠান ইত্যাদি। নিয়মিত একটি সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান করেছি অনেক দিন। সেই অনুষ্ঠানের নাম ছিল ‘হে বন্ধু হে প্রিয়’। রেডিও ক্যাপিটাল শুরু হওয়ার পর নঈম আমাকে রেডিওর একটি অনুষ্ঠানের সঙ্গেও যুক্ত করে দিলেন। অদ্ভুত একটা নাম দিলেন সেই অনুষ্ঠানের। ‘হ্যাপি মুডে মিলন’। আমার সঙ্গে দিলেন বিখ্যাত আরজে মার্শিয়াকে। সপ্তাহে একদিন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলতাম। কথার মাঝে মাঝে থাকত জনপ্রিয় সব গান। মনে আছে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে একদিন আমি এবং মার্শিয়া দুজনে অনেকক্ষণ কেঁদেছিলাম।

নঈম নিজাম আমার জীবনের অনেক কিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে আছেন। তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল ৩৫-৩৬ বছর আগে। টগবগে উচ্ছল তরুণ। সাংবাদিকতা করেন। চমৎকার লেখেন। এখন তো বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রতি রবিবার তিনি একটি কলাম লেখেন। আমি তাঁর কলামের একজন মুগ্ধ পাঠক।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদকীয় পাতাটিও বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এমন এমন সব ব্যক্তিত্বকে দিয়ে কলাম লেখান নঈম নিজাম, সেই সব কলামের প্রতিটি অভূতপূর্ব জনপ্রিয়। এও বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক বিশাল কৃতিত্ব যে, এমন সব কলাম লেখক পত্রিকাটি আবিষ্কার করেছে। আরেকটি পাতা আছে ‘রকমারি’ নামে। এ পাতাটিও একেবারেই অন্যরকম একটি বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রকাশিত হয়। এমন সব আকর্ষণীয় বিষয় নিয়ে পাতাটি তৈরি করা হয়, কোনো কোনো পাঠক শুধু ‘রকমারি’ পাতাটির জন্যই বাংলাদেশ প্রতিদিন কেনেন। খেলার পাতা ‘মাঠে ময়দানে’ও ব্যাপক জনপ্রিয়। কোনো নিউজ বাংলাদেশ প্রতিদিন মিস করে না। মাত্র ১২ পৃষ্ঠার একটি পত্রিকার ভিতরে এত এত বিষয় ধারণ করা যায়, বাংলাদেশ প্রতিদিনের আগে দেশের কোনো পত্রিকা মাত্র ১২ পৃষ্ঠার পরিসরে এত বিষয় সন্নিবেশিত করতে পারেনি।

একদিন নঈম নিজাম হঠাৎ করে আমাকে বললেন, প্রতি শুক্রবার ফার্স্ট পেজে লেখক-শিল্পীদের নিয়ে আপনি ছোট্ট একটা লেখা লিখবেন। যাঁদের সঙ্গে আপনার ঘনিষ্ঠতা ছিল, যাঁরা অনেকেই চলে গেছেন বা যাঁরা এখনো বেঁচে আছেন, লেখাটা লিখবেন তাঁদের নিয়ে। আপনার সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের জায়গাটি নিয়ে। বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের পরিচিতজনদের নিয়েই লিখবেন। আমার মতো নঈম নিজামও কবি রফিক আজাদের খুব ভক্ত। রফিক আজাদের কবিতার লাইন থেকে লেখার শিরোনামও নঈম দিয়ে দিলেন। ‘পিছনে ফেলে আসি।’

লিখতে শুরু করলাম। প্রতি শুক্রবার বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রথম পাতায় আমার ছবিসহ সেই লেখা প্রকাশিত হতে লাগল। প্রথম লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই দেখি দেশের আনাচকানাচ থেকে ফোন আসে। পাঠক উচ্ছ্বসিত হয়ে ফোন করেন। কেউ কেউ কোনো তথ্যও দেন। সব মিলিয়ে বেশ একটা বড় রকমের ব্যাপার। লেখক-শিল্পীদের নিয়ে পাঁচ সাতশো শব্দের স্মৃতিচারণামূলক একটি লেখাও যে মানুষের এভাবে নজর কাড়বে এ আমি কল্পনাও করিনি। বাংলাদেশ প্রতিদিনের শক্তিটা আসলে এই জায়গায়। বাংলাদেশের কোটি পাঠকের হৃদয় এই পত্রিকাটি স্পর্শ করতে পেরেছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন এবার ১২ বছরে পা রাখল। একযুগে পা রাখার এই শুভক্ষণে পত্রিকাটির জন্য আমার গভীর গভীরতর ভালোবাসা। নঈম নিজামের জন্য প্রার্থনা, পরম করুণাময় যেন তাঁকে দীর্ঘজীবী করেন। আরও অনেক অনেক বছর যেন তিনি তাঁর মেধা ও মনন দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে আরও বহুদূর এগিয়ে নেন। এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের জন্য আমার ভালোবাসা, প্রীতি ও শুভেচ্ছা। অভিনন্দন জানাই তাঁদের প্রত্যেককে।

 লেখক : কথাশিল্পী ও সম্পাদক, কালের কণ্ঠ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর