শিরোনাম
সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্বাচকরা কতটা স্বাধীন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নির্বাচকরা কতটা স্বাধীন

চট্টগ্রাম টেস্টের মহানায়ক মুমিনুল হক ব্যর্থ ছিলেন মিরপুরে। তার ব্যর্থতার ছাপ পড়েছিল গোটা দলের ওপর। বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানকে আউট করার পর কতটা নির্ভার ছিলেন লঙ্কান ক্রিকেটাররা হেরাথকে ঘিরে সতীর্থদের উচ্ছ্বাসই বলে দেয় তা —ফাইল ফটো

টাইগারদের নতুন বছর শুরু জয় দিয়ে। বছর শেষ হতে বাকি এখনো বহু সময়। খেলা বাকি অনেক। তারপরও শুরু হয়ে গেছে টাইগারদের ক্রিকেট ভবিষ্যতের ব্যবচ্ছেদ। এলোমেলো হয়ে পড়েছে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের ভাবনার জগত।  আড়াই দিনে মিরপুর টেস্ট হেরে যেতেই সব গেল, সব গেল বলে সুর তুলেছেন সমালোচকরা। খুঁজে বের করছেন, পুরনো দিনের ছবি। 

বছরের ভালো-মন্দের হিসাব এখন অনেক দূরের বিষয়। তার আগে আলোচনার কেন্দ্রে নির্বাচক প্যানেল। তাদের নির্বাচন পলিসি কতটা স্বাধীন, তারা কি দল গঠনে পূর্ণ স্বাধীনতা পাচ্ছেন? ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের সঙ্গে এ নিয়েই এখন যত আলোচনা। ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট, টেস্ট ও টি-২০ সিরিজের স্কোয়াড গঠনে মনে হয়নি, সত্যিকারের স্বাধীনতা পেয়েছেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নু গং। চট্টগ্রাম টেস্ট স্কোয়াডের দিকে তাকালেই বিষয়টি পরিষ্কার পাঠকের কাছে। ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে ফিল্ডিংয়ে বাঁ আঙ্গুলে চোট পান সাকিব আল হাসান। ছিটকে পড়েন দল থেকে। তার শূন্যস্থান পূরণে নির্বাচকরা দুই ধাপে দলভুক্ত করেন তিন ক্রিকেটার। অবাক করেছে আব্দুুর রাজ্জাকের দলভুক্তি। দল যেদিন চট্টগ্রাম উড়ে যায়, তার আগের রাতে টেস্ট স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্তির কথা জানতে পারেন রাজ্জাক। হঠাৎ সুযোগ পাওয়ায় বিস্মিত বলে মিডিয়ার মুখোমুখিতে স্পষ্টভাবে জানান দেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫০০ উইকেট নেওয়া রাজ্জাক। শুধু রাজ্জাক নন, লেগ স্পিনার অলরাউন্ডার তানভীর হায়দার এবং অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নাইম হাসানের অন্তর্ভুক্তিও বিস্ময়ের জন্ম দেয়। রাজ্জাকের দলভুক্তি কি নির্বাচকদের হাত দিয়ে হয়েছে? বিসিবির ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, না। নির্বাচকরাও জানতেন না রাজ্জাককে নেওয়ার বিষয়। বিসিবির সর্বোচ্চ মহল থেকেই নির্দেশনা দেওয়া হয় রাজ্জাককে নিতে। এ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য ছিল না নির্বাচকদের। এমন হস্তক্ষেপ যখন, তখন উল্টো পথেই হাঁটবে ক্রিকেট—এমন বক্তব্য গুণীজনের। রাজ্জাকের দলভুক্তি নিয়ে কোনো বক্তব্য ছিল না নির্বাচকদের। চট্টগ্রাম টেস্টে দারুণ পারফরম্যান্সের পরও মিরপুর টেস্টে পরিবর্তন। চট্টগ্রামে খেলা দুই ক্রিকেটার সানজামুল ইসলাম ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে বাদ দিয়ে ছোট করা হয় স্কোয়াড এবং ফিরিয়ে আনা হয় সাব্বির রহমানকে। এখানেও কি নির্বাচকরা স্বাধীনতা পেয়েছেন?  

 তো গেল টেস্ট স্কোয়াড গঠন। দুই ম্যাচ টি-২০ সিরিজের জন্য যে স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বিসিবি, তাতে কি নির্বাচকদের মত প্রাধান্য পেয়েছে? এবারও দল গঠন নিয়ে নানা প্রশ্ন। ১৫ সদস্যের যে স্কোয়াড ঘোষণা করেছে, তাতে নতুন মুখ ৫টি। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এমনটি দেখা যায়নি গত এক দশকেও। পাঁচ পাঁচটি পরিবর্তন, অদ্ভুতুরে নীতি দল গঠনে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচকরা দল গঠনে আদিষ্ট হন কি না। বাজারে বেশ জোর আলোচনা, দল গঠনে নির্বাচকদের কোনো ভূমিকা নেই। বিসিবির সর্বোচ্চ মহল নির্ধারণ করে দেন, কারা খেলবেন, কারা খেলবেন না। বিসিবির অঙ্গুলীতেই স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়। সমালোচকরা বলেন, নির্বাচকরা আসলে হাতের পুতুল! উপরের নির্দেশনা মেনেই দল গঠন করা হয়। বিসিবি পরিচালকরা একেগুঞ্জন বলেই উড়িয়ে দিচ্ছেন।

শুধু এবার নয়, দল গঠনে বিসিবির হস্তক্ষেপ বহু পুরনো। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর চেয়ে ভালো জানেন না অন্য ক্রিকেটাররা। ২০০০ সালে অভিষেক টেস্টে নান্নুর খেলা হয়নি শুধুমাত্র তৎকালীন বোর্ড সভাপতির অনাগ্রহে। দল নির্বাচনের নির্বাচকদের পাশাপাশি কোচ ও অধিনায়কের একটি মতামত থাকে। কিন্তু কোনো সময় সেটা বাস্তবায়িত হয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন এখনো ক্রিকেট পাড়ায় আলোচনা হয় বেশ জোরেশোরে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তিন বাঁ হাতি স্পিনারের অন্তর্ভুক্তি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি তৎকালীন কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে। তাই দেশে ফিরে বিসিবি সভাপতির কাছে নির্বাচন পলিসিতে তার মতামতের ক্ষমতা চেয়েছিলেন। বিসিবি সে ক্ষমতা দিয়েছিল ঠিকই, আড়ালে কিন্তু সুতোটা নিজেদের কাছেই রেখে দিয়েছিল বিসিবি। সেই ধারা নাকি এখনো রয়েছে। রয়েছে বলেই অনেক সময় উল্টো পথে হাঁটতে থাকে দেশের ক্রিকেট।

 

সর্বশেষ খবর