সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

চলে গেলেন হকির সোনা মিঞা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

চলে গেলেন হকির সোনা মিঞা

সোনা মিঞার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাদেক ও অন্য কর্মকর্তারা। ইনসেটে সোনা মিঞা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

চলে গেলেন হকির খ্যাতনামা খেলোয়াড় আবদুর রাজ্জাক। ক্রীড়াঙ্গনে যিনি সোনা মিঞা বলেই পরিচিত ছিলেন। গতকাল তিনি সকালে লালবাগে নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সোনা মিঞা দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। ২ ছেলে, ৩ মেয়েসহ বহু আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। দেশের সুপরিচিত ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে ক্রীড়াঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

গতকাল বাদ জোহর মরহুমের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় মওলানা ভাসানী জাতীয় স্টেডিয়ামে। হকি স্টেডিয়ামে সোনা মিঞার লাশ এসে পৌঁছানোর পর হূদয়বিদায়ক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। অশ্রুভরা চোখে হকির এই কিংবদন্তিকে বিদায় জানানো হয়। এরপর চকবাজার শাহী মসজিদে মরহুমের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

সোনা মিঞার পরিবারকে হকির পরিবারই বলা হয়। বড় ছেলে রাসেল মাহমুদ জিমি এ মুহূর্তে দেশের হকির সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলোয়াড়। বর্তমানে জিমি জাতীয় দলের অধিনায়ক। ছোট ছেলে রাজিন অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের খেলোয়াড়। হকিতে বাপ-বেটার জাতীয় দলে খেলাটা বিরলই ঘটনা।

সোনা মিঞার ক্যারিয়ার শুরু পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী দল কম্বাইন্ড স্পোর্টিং থেকে। পিডব্লিউডি ও দেশের জনপ্রিয় দল ঢাকা আবাহনীতে দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে খেলেছেন। খেলেছেন পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ জাতীয় দলে। আক্রমণভাগে তার স্ট্রিকওয়ার্ক ছিল চোখে পড়ার মতো। হকিতে যখন বিশ্বে পাকিস্তানের দুর্দান্ত দাপট তখন সোনা মিঞা ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম জনপ্রিয় খেলোয়াড়। কত অসাধারণ গোল যে করেছেন তার হিসাব মেলানো মুশকিল।

সোনা মিঞার সঙ্গে দীর্ঘদিন এক সঙ্গে খেলেছেন দেশের হকির সাড়া জাগানো খেলোয়াড় হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাদেক। বন্ধুর স্মৃতিচারণ করার সময় সাদেক আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন। ‘আমি আর সোনা মিঞা এক সঙ্গে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী আরমানীটোলা স্কুলে পড়াশোনা করেছি। ও ছিল আমার তিন ক্লাস জুনিয়র। বলতে পারেন একসঙ্গেই স্কুলজীবন থেকেই আমরা খেলা শুরু করি। দীর্ঘদিন কম্বাইন্ড স্পোর্টিংয়ে খেলেছি। হকির স্বর্ণযুগে দুজনা একসঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান দলে খেলেছি। ১৯৭২ সালে আমার অফারে সোনা মিঞা আবাহনীতে যোগ দেন।’

শোকে সাদেক ঠিকমতো কথাও বলতে পারছিলেন। বললেন, ‘ওর সঙ্গে কত না স্মৃতি জড়িত আছে। খেলোয়াড়ি জীবনে ইতি টানার পর হকির মায়া ছাড়তে পারেনি সোনা মিঞা। বিভিন্ন ক্লাব ও জাতীয় দলে প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন। দেখেন হকি তার রক্তের সঙ্গে এমনভাবে মিশে যায় যে দুই ছেলেকে খেলোয়াড় হিসেবে তৈরি করেন। জিমিতো এখন জাতীয় দলের অধিনায়ক। অসংখ্য প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড় তার হাত ধরে বের হয়েছেন। বলতে পারেন সোনা মিঞা ছিলেন হকির কারিগর। ও চলে গেছে না ফেরার দেশে। কোনোদিন আর পাব না। তবে হকিতে সোনা মিঞার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’ সোনা মিঞার মৃত্যুতে হকি ফেডারেশন, বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট কমিউনিটি, বাংলাদেশ ক্রীড়া সাংবাদিক সংস্থা ও ক্রীড়া লেখক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন শোক প্রকাশ করেছেন।

 

সর্বশেষ খবর