বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে বাংলাদেশের অভিষেক হয় ১৯৮৫ সালে। আমি ভাগ্যবান যে, ওই দলে নিয়মিত খেলেছি। ঢাকায় ভারতের বিপক্ষে গোলও করেছি। যা বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে বাংলাদেশের প্রথম গোল। সেবার ঢাকায় এই আসরে ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছি। প্রথম গোলটা কায়সার হামিদের হলেও বিজয়সূচক গোলটি এসেছে আমার পা থেকে। ১৯৮৫ সালটা ছিল আমার ক্যারিয়ারের শেষের দিক। অথচ বাছাই পর্বে পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে দেশবাসীর বাহবা পেয়েছি। বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব ঘিরে কত স্মৃতি তা ভোলবার নয়। নিজে খেলছি না। অথচ বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব এলে সেই হারানো স্মৃতি আমি খুঁজে পাই।
আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ বাছাই পর্বে দ্বিতীয় লেগের মিশন শুরু করছে। কাতারের দোহায় রাত ৮টায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে লড়বে। তাজিকিস্তানে প্রথম লেগে ভালো খেলেও ১-০ গোলে হেরে যায়। ম্যাচটি আমি টিভিতে দেখেছি। বল দখলের লড়াইয়ে জামালরাই এগিয়ে ছিল। হঠাৎ করেই রক্ষণভাগের অমনোযোগিতায় গোল খেয়ে বসে। সমানতালেই খেলছিল, তারপরও ফুটবলারদের নার্ভাস মনে হচ্ছিল। এই চাপটাই ফুটবলে বড় ফ্যাক্টর।
দেখেন র্যাঙ্কিং বা পরিসংখ্যান যাই বলি না কেন আফগানিস্তান কিন্তু খুব একটা এগিয়ে নেই। তারপরও স্বীকার করতে হবে দল হিসেবে বাংলাদেশের চেয়ে শক্তিশালী। ফিজিক্যাল ফিটনেস ও গতিতে তারা দুর্দান্ত। একে অপরের মধ্যে সমন্বয় করে খেলতে পারে। সবচেয়ে বড় দিকটা হচ্ছে বড় কোনো ক্লাব না হলেও আফগানিস্তানের জাতীয় দলের ফুটবলাররা ইউরোপে খেলে থাকে। এ জন্য তাদের টেকনিকে কিছুটা হলেও ইউরোপের ছোঁয়া আছে।
একে তো শক্তিশালী। তারপর আবার সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে আজ আফগানরা নামবে। দুই প্রস্তুতি ম্যাচে ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে জয় ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে তারা ড্র করেছে। ভালোমতো ঝালাই করে মূল লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে। আফগানরা তো সব দিক দিয়ে এগিয়ে। তাহলে কি বাংলাদেশের হারটা সময়ের ব্যাপার? না কোনোভাবেই না। আমি বাংলাদেশের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তবে শতভাগ উজাড় করে খেলতে হবে। রক্ষণ, মধ্যমাঠ, আক্রমণ ভাগ সব পজিশনেই উজ্জীবিত ফুটবল খেলতে হবে। আবারও বলছি আজকের ম্যাচে আফগানিস্তান ফেবারিট। তারপরও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে না। তাদেরও হারানো যাবে। জেমি ডে ও তার শিষ্যরা নিশ্চয় আফগানিস্তানের প্রস্তুতি ম্যাচের ভিডিও ফুটেজ দেখেছেন। প্রতিপক্ষের শক্তি ও দুর্বলতা চিহ্নিত করেই দল সাজানো হবে। নির্ভার হয়ে খেলতে পারলে বিজয়ের নিশান উড়ানো সম্ভব।
শেখ জামাল ধানমন্ডির বিপক্ষে জাতীয় দল যে প্রীতি ম্যাচটি লড়ল তাতে আমি জাতীয় দলের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট নই। কেন জানি জামালদের খাপছাড়া মনে হয়েছে। হতে পারে বাংলাদেশের ক’জন ইনজুরিতে আক্রান্ত। আরে ভাই এটা তো খেলারই অংশ। এ নিয়ে বিচলিত থাকলে চলবে না। ৭ ম্যাচে আফগানিস্তান ২ এবং বাংলাদেশের ১টি জয় ও চার ম্যাচ ড্র হয়েছে। এই হিসাব মেলালে তো আফগানিস্তানকে অপ্রতিরোধ্য বলা যাবে না। অনূর্ধ্ব-২৩ হলেও আফগানিস্তানকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে এসএ গেমসে বাংলাদেশের সোনা জয়ের রেকর্ড রয়েছে। ২০১৪ এশিয়ান গেমসেও জয় পেয়েছি। তাহলে আর ভয় কেন। মনোবল শক্ত থাকলেই জয় সম্ভব। ম্যাচের আগেই হারা- এ মনোভাব মন থেকে মুছে ফেলতে হবে। ফুটবলারদের মনে রাখতে হবে ফুটবল জাগাতে বাংলাদেশের জয় খুবই জরুরি।