মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

রাজার সামনে তামিমরা কেবলই প্রজা!

এক ম্যাচ হাতে রেখে জিম্বাবুয়েকে সিরিজ জেতানোর নায়ক রাজা টানা সেঞ্চুরি করেন। ১১৬ ম্যাচের ক্যারিয়ারে রাজার সেঞ্চুরি ৫টি, যার দুটি বাংলাদেশের বিপক্ষে।

আসিফ ইকবাল

রাজার সামনে তামিমরা কেবলই প্রজা!

২০১৯ সালে ক্রিকেট যদি ছেড়ে দিতেন সিকান্দার রাজা, তাহলে কী হতো?

জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের ‘রাজা’ হয়ে ওঠা হতো না সিকান্দার রাজার। ব্যাট হাতে শাসন করে সিরিজে তামিম ইকবাল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিমদের প্রজা বানাতে পারতেন না!  

৩৬ বছর বয়স্ক রাজার জন্ম পাকিস্তানের শিয়ালকোটে। জন্ম পাকিস্তান। কিন্তু বিশ্বব্যাপী পরিচয় জিম্বাবুয়ের একজন ক্রিকেট অলরাউন্ডার। ২০১৯ সালে জিম্বাবুয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। বাছাইপর্বের ব্যারিয়ার টপকাতে পারেনি বলে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড ছাঁটাই করেছিল অধিনায়ক গ্রায়েম ক্রেমার, কোচ হিথ স্ট্রিকসহ টিম ম্যানেজমেন্টকে। তবে দেশকে বিশ্বকাপে সুযোগ করে দিতে একাই লড়েছিলেন রাজা। ব্যাট ও বল হাতে দুর্দান্ত পারফরমেন্সে টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছিলেন। তাতেও মন ভরেনি অলরাউন্ডারের। সান্ত্বনা দিতে পারেননি নিজেকে। বিশ্বকাপ খেলতে না পারার আফসোসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ান। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০ ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ের অন্যতম ভরসা হয়ে ওঠা রাজা দেশটির ক্রিকেট বোর্ডকে জানিয়ে দেন, তিনি আর দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবেন না।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রাজার না খেলার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানায়নি কেউ। ফেরার জন্য অনুরোধ করেন অনেকে। কিন্তু রাজা ভ্রƒক্ষেপ করেননি। জিম্বাবুয়ে ছেড়ে চলে যান ইংল্যান্ডে। সেখানে স্থানীয় একটি ক্লাবের হয়ে ক্রিকেট খেলেন। ক্রিকেট খেলেছেন ঠিকই, কিন্তু প্রাণ পাচ্ছিলেন না। তাই উড়াল দেন কানাডায়। সেখানে খেলেন গ্লোবাল টি-২০ টুর্নামেন্ট। সেখানে খেলতে খেলতেই কথা বলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার ও কোচ টম মুডির সঙ্গে। অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপ জেতানো ক্রিকেটার মুডির সঙ্গে দীর্ঘ সময় আলোচনার পর পুনরায় ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা ফিরে পান। ক্রিকেটের টানে, ক্রিকেটের প্রেমে রাজা পুনরায় ফিরে আসেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।

এরপর সব ইতিহাস। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের চালকের চাবিটি নিয়ে নেন নিজ হাতে। অক্টোবর-নভেম্বরে টি-২০ বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় জিম্বাবুয়ে। তার নায়ক রাজা। বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-২০ ও ওয়ানডেতে নতুন এক সিকান্দার রাজাকে দেখেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে ২৬ বলে ৭ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে জিম্বাবুয়েকে জয় উপহার দেন। দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম বলে ফিরে আসেন সাজঘরে। হেরে যান স্বাগতিকরা। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ফের তার ব্যাট জ্বলে ওঠে। ৫৩ বলে ৬২ রান করেন। দু-দুটি ম্যাচ জেতানো হাফসেঞ্চুরির ইনিংস খেলে সিরিজ সেরা হন। সেই ধারাবাহিকতা ওয়ানডে সিরিজেও চলমান। এক ম্যাচ হাতে রেখে জিম্বাবুয়েকে সিরিজ জেতানোর নায়ক রাজা টানা সেঞ্চুরি করেন। ১১৬ ম্যাচের ক্যারিয়ারে রাজার সেঞ্চুরি ৫টি, যার দুটি বাংলাদেশের বিপক্ষে। প্রথম ম্যাচে ৩০৪ রান টপকে ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতেছে জিম্বাবুয়ে। ১০ বল হাতে রেখে ম্যাচ জেতানোর নায়ক রাজা খেলেন ১৩৫ রানের অপরাজিত ইনিংস। ১০৯ বলে বিধ্বংসী ইনিংসে ছিল ৮টি চার ও ৬টি ছক্কা। দ্বিতীয় ম্যাচে ২৯১ রান টপকে যায় ৫ উইকেট হারিয়ে ১৫ বল হাতে রেখে। এবারও রাজার ব্যাট জ্বলে ওঠে এবং খেলেন ১১৭ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। দু-দুটি সেঞ্চুরিই সিরিজে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর