সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সাবিনা সালমায় সেরা অর্জন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সাবিনা সালমায় সেরা অর্জন

বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো খেলায় বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। অলিম্পিক গেমসে পদকও জেতা সম্ভব হয়নি। এশিয়ান গেমস ও সাফ গেমসে সোনার পদক জিতেছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে তা বড় প্রাপ্তি নয়। ১৯৯০ সালে কমনওয়েলথ গেমসের মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্রথম সোনা উপহার দেন আতিক ও নিনি। প্রথম সোনা তা অবশ্য গৌরবের। কিন্তু সেরা প্রাপ্তি নয়। পুরুষ ফুটবলে বাংলাদেশ একবার সাফ ও দুবার সাউথ এশিয়ান গেমসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। পুরুষ ক্রিকেটে বাংলাদেশের অনেক অগ্রগতি ঘটেছে। বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা ছাড়া বিশ্বের এমন কোনো দেশ নেই বাংলাদেশের কাছে ওয়ানডে হারেনি। এশিয়ান গেমসের ইতিহাসে বাংলাদেশ প্রথম সোনা পুরুষ ক্রিকেটারদের মাধ্যমে। এশিয়া কাপে তিনবার ফাইনাল খেলেছে। কোনোটাই সেরা অর্জনের মধ্যে পড়ে না।

জনপ্রিয় দুই খেলা ফুটবল ও ক্রিকেটের সেরা প্রাপ্তিটা এসেছে নারী খেলোয়াড়দের নৈপুণ্যে। পুরুষ ক্রিকেটাররা যত দক্ষতার স্বাক্ষর রাখুক বা ব্যক্তিগত যত খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ুক এখন পর্যন্ত দেশকে কোনো চ্যাম্পিয়নের ট্রফি উপহার দিতে পারেনি।

১৯৯৭ সালে আকরাম খানের নেতৃত্বে আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হলেও তা ছিল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে। আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ক্রিকেটে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করার পর দেশ আনন্দে ভাসলেও কেনিয়া নেদারল্যান্ড ও আরব আমিরাত বাংলাদেশের আগে বিশ্বকাপ খেলায় ক্রিকেটাঙ্গন সমালোচিত হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলাদেশ প্রথমবার ফাইনাল খেলে। সার্ক ক্রিকেটে ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ হয় আকরাম বাহিনী।

ক্রিকেটে আসল বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছে নারী ক্রিকেটাররা। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাকে পেছনে ফেলে বাংলার মেয়েরা এশিয়া কাপ জিতবে তা ছিল স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন সালমা খাতুনের নেতৃত্ব দেওয়া দলটি। ২০১৮ সালে ক্রিকেটে সেরা উপহার দিয়েছেন তারাই। তাও আবার ফাইনালে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে। ২০১৮ সালে ১০ জুন মালয়েশিয়াতে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ভারতকে ৩ উইকেট হারিয়ে ইতিহাস লিখে ফেলেন বাংলার ক্রিকেটাররা। একমাত্র শ্রীলঙ্কার কাছে হার ছাড়া আসরের প্রতিটি ম্যাচই জিতে বাংলাদেশ। এ এক অসাধারণ সাফল্য। পুরুষরা যা পারেনি সেখানে মেয়েরাই সেরা সাফল্য এনে দিল। মেয়েদের এ শিরোপায় দেশ আনন্দে ভেসেছিল।

এক খাতুনের হাত ধরে ক্রিকেটে সেরা সাফল্য আসে। আবার আরেক খাতুনের ম্যাজিকে ফুটবলে বিজয় নিশানা উড়ায় বাংলাদেশ।

প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপেই ফুটবলে প্রথম শিরোপার মুখ দেখে বাংলাদেশ। মিয়ানমারে চ্যালেঞ্জ কাপ, এস এ গেমসে দুবার সোনা জিতলেও ফুটবলে সেরা সাফল্য হিসেবে বিবেচিত ছিল ঢাকায় ২০০৩ সালে সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন। এ যেন বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জয়ের মতো। কিন্তু সাফল্য আড়ালে পড়ে গেল এবার সাবিনা খাতুনের নেতৃত্বে সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়নে।

২০০৩ সালে পুরুষ জাতীয় দল সাফ জিতলেও মেয়েদের মতো ম্যাজিক প্রদর্শন করতে পারেনি। যে নেপালের সঙ্গে জেতা হয়নি। সেখানে ফাইনালে তাদেরই মাটিতে ৩-১ গোলের জয় অবশ্যই গৌরবের। ভাবা যায় পাঁচ খেলায় ২৩ গোলে আর হজম মাত্র ১ গোল। কোনো পয়েন্ট না হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন। অধিনায়ক দুই হ্যাট্রিকসহ সর্বোচ্চ ৮ গোল। এ যেন রূপ কথাকেও হার মানায়। ফাইনালে কেনিয়াকে হারিয়ে আইসিসি ট্রফি জেতার পর দেশ জুড়ে সে কি আনন্দ। অনেকের মতে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বরের পর জাতি এমন উল্লাসে মাতল।

আকরামদের সেই উৎসবকেও হার মানিয়েছে সাবিনাদের জয়। খেলাধুলার ইতিহাসে বাংলাদেশে এমন বাঁধভাঙা উৎসব আর কখনো দেখা যায়নি।

সালমা ও সাবিনাদের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ পেয়েছে সেরা সাফল্য। নারীদের এ অর্জন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ২০১৮ সালের ১০ জুন ও ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সেরা দিন হয়ে থাকবে।

সর্বশেষ খবর