টি-২০ ক্রিকেট মানেই বিনোদন! ছক্কা-চারের ছড়াছড়ি থাকে। ক্রিকেটাররা আগ্রাসী মুডে থাকেন। ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং -তিন বিভাগেই খেলোয়াড়রা থাকে সুপার অ্যাকটিভ। সে কারণেই ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাটের প্রতি দর্শকের ঝোঁক তুলনামূলক বেশি। কিন্তু বাংলাদেশ দলের খেলা দেখে যেন মন ভরতো না দর্শকের।
কিন্তু এখন বদলে গেছে বাংলাদেশের খেলা। সাকিব আল হাসান নেতৃত্ব পাওয়ার পর বাংলাদেশের খেলার ধরণটাই যেন পাল্টে দিয়েছেন। এখন টি-২০তে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা আগ্রাসী। প্রথম বল থেকেই প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপর যেন ঝাপিয়ে পড়েন। ব্যাটসম্যানদের মতো বোলাররাও শুরু থেকেই আগ্রাসী মুডে থাকেন। ফিল্ডাররাও দুর্দান্ত। বাংলাদেশ দলের এই বদলে যাওয়া সম্পর্কে তারকা ওপেনার রনি তালুকদার মিডিয়াকে বলেন, ‘সাকিব ভাই কিংবদন্তি ক্রিকেটার। উনার সঙ্গে আবাহনীতে খেলেছি প্রায় ১২ বছর আগে। তখন একই ইনটেন্ট, একই মনমানসিকতা উনার ভেতরে ছিল। উনি সবসময় ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করেন, ডমিনেট করার চেষ্টা করেন। উনার যে ডমিনেটিং চিন্তাভাবনা, সেটা দলের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন যে, আমরা খেলব, বাঘের মতো খেলব। আমরা ডমিনেট করার চেষ্টা করব।’
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে তিন ম্যাচেই উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। আর ওই সিরিজেই প্রথম চোখে পড়ে টাইগারদের পরিবর্তন। প্রতিপক্ষকে তুলোধুনো করেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সেই একই ধাচে আইরিশদের বিরুদ্ধে খেলেছেন টাইগাররা।প্রথম দুই ম্যাচেই ব্যাটসম্যানরা দুইশ রান পার করেছেন। আর বোলাররা প্রতিপক্ষকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের ফিল্ডিং এমন এতই চমৎকার যে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করার পর ক্যাপ্টেন সাকিব ঘোষণা দিয়েছিলেন, ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ দল এশিয়ার সেরা।
আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে টানা দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত হয়ে গেছে বাংলাদেশের। আজ টাইগারদের সামনে বাংলাওয়াশের দারুন সুযোগ।
বাংলাদেশের খেলায় পরিবর্তনটা সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে ব্যাটিংয়ে। টপ অর্ডাররা দুর্দান্ত দাপট দেখাচ্ছেন। দুই ওপেনার লিটন দাস ও রনি তালুকদার দেখাচ্ছেন তাদের ক্যারিশমা। প্রথম ম্যাচে ৪৭ এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৮৭ রান করেছেন লিটন দাস। আরেক ওপেনার রনিও এক ম্যাচে ৬৭ এবং আরেক ম্যাচে ৪৪। পাওয়ার প্লেতে রান হয় না বলে একটা হতাশা ছিল এতদিন! সেই দূর করে দিয়েছেন দুই ওপেনার। আইরিশদের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে প্রথম ছয় ওভারে ৮১ এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৮৩ রান। আর প্রতি ম্যাচেই নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে।
দাপট দেখাচ্ছে পেসাররাও। পছন্দের পীচ পেয়ে পেসাররা যেন আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছেন। তিন পেসার তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ এবং মুস্তাফিজুর রহমান দারুন ছন্দে রয়েছেন। তবে পেস সহায়ক উইকেটে দ্বিতীয় ম্যাচে ক্যারিশমা দেখিয়েছেন ক্যাপ্টেন সাকিব ৫ উইকেট নিয়ে।
যে যখন সুযোগ পাচ্ছেন, নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সেটা বোলিং, ব্যাটিং কিংবা ফিল্ডিং হোক না কেন! এই বাংলাদেশ দল সম্পূর্ণ আলাদা। একের পর এক ক্যারিশম্যাটিক পারফরম্যান্স করার পরও তারা তৃপ্ত নন। যত ভালো খেলছেন তত বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠছেন। ক্রিকেটারদের পারফর্ম করার ক্ষুধা যেন দিন দিন বেড়েই চলছে।
ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষাতেও ব্যাপক পরিবর্তন। আত্মবিশ্বাসের ছাঁপ পরিষ্কার। ক্যাপ্টেন সাকিবই এই পরিবর্তনের নায়ক বলে দাবি রনি তালুকদারের। সঙ্গে রয়েছেন কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে। অধিনায়ক-কোচের ক্যারিশম্যাটিক পরিকল্পনাতেই আজকের এই আগ্রাসী বাংলাদেশ দল। রনি তালুকদার বলেন, ‘আমাদের ভয়ডর থাকবে না, আমরা সবসময় ইতিবাচক মানসিকতা নিয়েই মাঠে যাব। হতে পারে কখনও আমরা ব্যর্থ হব, আবার সফল হব। তবে যদি আমরা এই জিনিসটা ধরে রাখতে পারি, এটা ধারণ করে চললে আমাদের সাফল্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এটা কোচ-অধিনায়কের চিন্তাভাবনা একই।’