শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

চাই কেবল একটি জয়!

সিলেটবাসীর আকাক্সক্ষা

মেজবাহ্-উল-হক, সিলেট থেকে

চাই কেবল একটি জয়!

অনুশীলনে সিলেট স্ট্রাইকার্স

শীতের ধুলাবালিমাখা সিলেটের রুক্ষ আবহাওয়ার মতো যেন খাঁখাঁ করছে স্থানীয় ক্রিকেটভক্তদের হৃদয়ও! চাতকের মতো তারা অপেক্ষমাণ ‘অন্তত একটি জয় আসুক’! কিন্তু ঘরের মাঠে কাক্সিক্ষত সে জয়টাই যেন পাচ্ছে না সিলেট স্ট্রাইকার্স।

হাজারো দর্শক বুকভরা আবেগ নিয়ে কনকনে শীত উপেক্ষা করে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে যায়, আর ফেরে একরাশ হতাশা সঙ্গী করে। এ আসরে এখন পর্যন্ত একটি জয়ও পায়নি সিলেট। ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাসি বলে খ্যাত মাশরাফি বিন মর্তুজাকে দায়িত্ব দিয়েও পাঁচ ম্যাচের সব কটিতে হার।

পরাজয় স্বীকার করে নেওয়া এ পাঁচ ম্যাচের মধ্যে তিনটিই সিলেটের মাটিতে। ঢাকার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে খেলা দুই ম্যাচে তবু কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল দলটি, কিন্তু ঘরের মাঠে এসে যেন রীতিমতো অসহায় আত্মসমর্পণ করছে। ঢাকায় দুই ম্যাচেই তবু হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছে, সিলেটে এসে যেন আর পাত্তাই পাচ্ছে না। প্রথম ম্যাচে তারা ১৭৭ রানের বিশাল স্কোর গড়েও বোলারদের ব্যর্থতায় হেরে যায় চট্টগ্রামের কাছে। দ্বিতীয় ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের বিরুদ্ধে ১২০ রানের বেশি করতেই পারেনি। আর ঘরের মাঠে এসে সিলেট স্ট্রাইকার্স যেন সুর-তাল-লয় হারিয়ে এলোমেলো ফিউশন। ব্যাটিং, বোলিং কিছুই কাজ করছে না। এ কারণেই একের পর এক হেরেই চলেছে।

আজ ঘরের মাঠে সিলেট তাদের আরেকটি ম্যাচ খেলতে নামছে। প্রতিপক্ষ দুর্দান্ত ঢাকা। এ আসরে ঢাকার অবস্থাও অনেকটা সিলেটের মতোই। চার ম্যাচে তাদের জয় মাত্র একটি। অথচ এ দলটির শুরুটা কি দুর্দান্তই না হয়েছিল। উদ্বোধনী ম্যাচেই তারকা চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারায়। এরপর টানা তিন ম্যাচে হার।

প্লে-অফের আশা টিকিয়ে রাখতে দুই দলের কাছে আজকের ম্যাচটি ‘ডু অর ডাই’! তবে সিলেটবাসী অতশত বোঝে না, বুঝতেও চায় না। তাদের একটাই কথা- ‘সিলেটের মাটিতে চাই কেবল একটি জয়’!

গতকাল স্টেডিয়ামের গেটে দেখা হয় সিলেটের এক ক্রিকেটভক্তের সঙ্গে। সিলেট স্ট্রাইকার্সের জার্সি পরিহিত কাউসার আলী অনেকটা ক্ষিপ্ত হয়েই বলেন, ‘তারা আমাদের সঙ্গে তামাশা করতে পারে না। আমাদের সিলেটে খেলা, আমরা এ শীতের মধ্যেও কষ্ট করে মাঠে এসে সমর্থন দিচ্ছি আর সিলেট একের এক ম্যাচ হেরেই যাচ্ছে! এটা মেনে নিতে পারছি না। বারবার হার দেখতে কার ভালো লাগে বলেন! চাই কালকের (আজ) ম্যাচটা জিতুক।’

দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স মুখোমুখি হবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের। হাইভোল্টেজ ম্যাচ। এখন পর্যন্ত মাত্র একটি ম্যাচে হেরেছে চট্টগ্রাম। প্রতিটি ম্যাচেই তারা প্রতিপক্ষের জন্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে হাজির হচ্ছে। বন্দরনগরীর দলটি দারুণ ছন্দে আছে। তারা কেবল ঢাকায় খুলনা টাইগার্সের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচ হেরেছে। এ ছাড়া প্রতিটি ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে যেন দুমড়েমুচড়ে দিচ্ছে। দলে দারুণ সব পারফরমার। যখন যে সুযোগ পাচ্ছেন নিজের স্কিল শো করছেন। টিম কম্বিনেশনটা দুর্দান্ত। শুভাগত হোমের নেতৃত্বে দলটি দিন দিন আরও শক্তিশালী হচ্ছে।

চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার কথা তো আলাদা করে বলার কিছু নেই। দলের প্রাণ কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীন। বিপিএলের সবচেয়ে সফল কোচ। যদিও চার ম্যাচ খেলে দুটিতে হেরেছে দলটি। তবে কুমিল্লা এমন একদল যে কোনো সময়ই মাঠে ক্যারিশমাটিক পারফরম্যান্স দেখিয়ে শক্ত প্রতিপক্ষকেও উড়িয়ে দিতে পারে।

দলের সেরা ব্যাটসম্যান ক্যাপ্টেন লিটন দাস ফর্মে না থাকায় ব্যাটিংয়ে শুরুটা আগ্রাসি হচ্ছেন না। তবে অন্যরা বেশ ভালোই করছেন। ভিক্টোরিয়ান্সের স্থানীয় ও বিদেশি সবাই তারকা। যে কোনো দলকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার শক্তি তাদের আছে। তাই আজ চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে বড় জয় পেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

তবে বিপিএলের আজকের দুই ম্যাচের মধ্যে প্রথমটির (সিলেট-ঢাকা) দিকে আকর্ষণ থাকবে বেশি। সিলেটবাসী বুকভরা আশা নিয়ে বসে আছে তাদের দল ঘরের মাঠে কাক্সিক্ষত জয়টি পায় কি না!

সর্বশেষ খবর