‘দি গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ হিসেবেই অলিম্পিক গেমসের পরিচিতি। এই ক্রীড়া যজ্ঞে সব ইভেন্টই গুরুত্বপূর্ণ। তবে ১০০ মিটার স্প্রিন্টের দিকে আকর্ষণ থাকে সবচেয়ে বেশি। মাত্র ১০ সেকেন্ডের এই লড়াই নিয়ে কত আলোচনা হয়! বিভিন্ন মহামেদেশের সেরা তারকারা এখানে অংশ নেন। অন্য সব ইভেন্টের আলো কেড়ে নেয় মাত্র ১০ সেকেন্ডের এই লড়াই। রবিবার গভীর রাতে তাই হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের নোয়াহ লাইলস ও ফ্রেড কার্লি, জ্যামাইকার কিশেন থম্পসনসহ আট তারকার স্প্রিন্ট দেখতে স্টেডিয়ামে ছিলেন হাজার হাজার দর্শক। বিশ্ব জুড়ে টিভি সেটের সামনে চোখ রাখেন কোটি কোটি ক্রীড়াপ্রেমী। লড়াইটা শুরু হয়। শেষও হয়ে যায়। তবে সবার চোখেই প্রশ্ন। কে জিতলো? কে আগে পাড়ি দিল নির্ধারিত লাইন?
খোলা চোখে মনে হলো জ্যামাইকার কিশেন থম্পসনই সম্ভবত জয়ী। ডিজিটাল স্ক্রিনে ফলাফল উঠতেই জানা গেল, সেকেন্ডের সহ¯্রাংশের ব্যবধানে সোনার পদক জয় করেছেন নোয়াহ লাইলস। মুহূর্তেই উল্লাসে ফেটে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থকরা। অলিম্পিক স্প্রিন্টে ২০ বছরের আক্ষেপ ঘুচালো যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৪ সালে জাস্টিন গ্যাটলিন এথেন্স অলিম্পিকে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে যুক্তরাষ্ট্রকে সোনার পদক উপহার দেন। এরপর নোয়াহ লাইলসই প্রথম। তাও এমন এক লড়াই যার কোনো তুলনা অলিম্পিকের ১২৮ বছরের ইতিহাসে নেই। ২০০৪ সালেই সবচেয়ে আকর্ষণীয় লড়াই হয়েছিল। সেই লড়াইয়ে পর্তুগালের ফ্রান্সিস মাত্র ০.০১ সেকেন্ডের ব্যবধানে হেরেছিলেন গ্যাটলিনের কাছে। এবার নোয়াহ লাইলস মাত্র ০.০০৫ সেকেন্ডের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন জ্যামাইকার কিশেন থম্পসনকে।
দুর্দান্ত এক লড়াই দেখার পর বিশ্ব অ্যাথলেটিকসের প্রধান সেবাস্তিয়ান কো দাবি করেছেন, লাইলস বিশ্ব অ্যাথলেটিকসকে উসাইন বোল্ট যুগের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত উসাইন বোল্টে মোহিত ছিল ক্রীড়াপ্রেমীরা। তার ট্র্যাকে নামার অর্থই ছিল, দ্বিতীয় হওয়ার জন্য লড়াই করা। প্রথম স্থানটা বোল্টের জন্য নির্ধারিতই ছিল। সেই যুগটা কী সত্যিই ফিরিয়ে আনতে পারবেন নোয়াহ লাইলস! টোকিও অলিম্পিকে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন লাইলস। এছাড়াও ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ২০২৩ সালে ১০০ মিটারে সোনার পদক জেতেন তিনি। ২০১০ সালে ডায়মন্ড লিগেও ১০০ মিটারে সোনা জেতেন লাইলস। এবার অলিম্পিকেও জিতলেন। সোনার পদক জিতে লাইলস বললেন, ‘এটা এমন এক পদক যা আমি মনে প্রাণে জয় করতে চেয়েছিলাম। লড়াইটা ছিল খুবই কঠিন। প্রতিপক্ষ ছিলেন দুর্দান্ত।’ এবার নিজ দেশের অ্যাথলেটদের কাছ থেকে ধারাবাহিকতা দেখতে চান। তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে আরও অনেক মার্কিন অ্যাথলেট স্প্রিন্টে সোনা জয় করবেন। অলিম্পিকে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে যুক্তরাষ্ট্রেরই একক আধিপত্য। এক সময় ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে কেউ এই ইভেন্ট জয় করবে তা কল্পনাও করা যেতো না। ৩৩টি অলিম্পিকে ১৭বারই ১০০ মিটার স্প্রিন্ট জয় করল মার্কিন অ্যাথলেটরা। বাকি ১৬বার অন্যরা ভাগাভাগি করে নিয়েছে। ব্রিটেন চারবার, জ্যামাইকা তিনবার করে এই ইভেন্টে সোনার পদক জয় করেছে।