‘শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়টি বাংলাদেশের ক্রিকেট ও নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করবে। আমাদের স্বপ্ন অনেক বড়। এ জয় স্বপ্নপূরণে সহায়ক হবে।’ শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথমবারের মতো টি-২০ সিরিজ জিতে কথাগুলো বলেন টাইগার অধিনায়ক লিটন দাস। লিটন সিরিজসেরা হয়েছেন ৩ ম্যাচে ১১৪ রান করে। কলম্বোর রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ঐতিহাসিক জয় দিয়ে শ্রীলঙ্কা সফর শেষ করে দেশে ফিরবে লিটন বাহিনী। ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের স্বপ্নপূরণের ম্যাচের নায়ক শেখ মেহেদি হাসান। ক্যারিয়ার-সেরা বোলিং করে ম্যাচ জিতিয়ে মেহেদি বলেন, ‘প্রেমাদাসার শেষ কয়েকটি ওয়ানডেতে দেখেছি উইকেটে বল স্পিন করে। আমি শুধু চেষ্টা করেছি একটি নির্দিষ্ট লাইন ও লেন্থ বজায় রেখে বোলিং করতে। উইকেটে নতুন বলেও স্পিন ধরছিল। সেজন্য আমি সঠিক জায়গায় বল ফেলেছি।’ ম্যাচ সেরা মেহেদির বোলিং স্পেল ৪-১-১১-৪।
পাল্লেকেলেতে প্রথম ম্যাচ জিতে শ্রীলঙ্কা। ডাম্বুলায় দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ। ৩ ম্যাচ টি-২০ সিরিজের সমীকরণের মারপ্যাঁচে প্রেমাদাসার ম্যাচটি রূপ নেয় অলিখিত ফাইনালে। যে দল জিতবে, তারাই জিতবে সিরিজ। এমন সমীকরণের ম্যাচটি হেসে খেলে জিতল বাংলাদেশ। মেহেদির স্পিন ভেলকি ও তানজিদের বিধ্বংসী অপরাজিত ৭৩ রানে ২১ বল আগে ৮ উইকেটের বড় জয়ে ইতিহাস লিখে লিটন বাহিনী। দ্বীপরাষ্ট্রের মাটিতে বাংলাদেশের ইতিহাস লেখার দলনায়ক লিটন। স্বপ্নের ম্যাচ জেতান অফ স্পিনার মেহেদি। দুরন্ত ব্যাটিংয়ে ম্যাচ জিতিয়ে সাজঘরে ফেরেন তানজিদ। স্বাগতিকদের দুমড়েমুচড়ে ম্যাচ জেতার পর টাইগার অধিনায়ক লিটন বলেন, ‘যেভাবে আমাদের দল খেলেছে, আমি অধিনায়ক হিসেবে খুবই খুশি। ছেলেরা তাদের চরিত্রের দৃঢ়তা দেখিয়েছে। যদিও টস জিতলে প্রথমে ব্যাটিং করতাম। কারণ, আমাদের বোলিং শক্তিশালি। মেহেদি দারুণ বোলিং করেছে। উইকেট তাকে সহায়ত করেছে। তবে এটা সত্য, মেহেদি হাসান মিরাজ কিন্তু বাজে ক্রিকেটার নন।’
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে সাজঘরে বসেছিলেন। কখনো দলের হারে বিষাদে পুড়েছেন। আবার কখনো দলের জয়ে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন। স্পিনার মেহেদি গতকাল সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে খেলেন ওয়ানডে অধিনায়ক মিরাজের বদলে। খেলেই বাজিমাত করেন মেহেদি। উইকেটের স্পিনকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে স্বাগতিকদের আপার অর্ডার গুঁড়িয়ে দেন। ৫৮ টি-২০ ক্যারিয়ারে সেরা বোলিংও করেন। ২৪ বলের স্পেলে ডট নেন ১৭টি। ১১ রানের খরচে নেন ৪ উইকেট। তার আগের সেরা বোলিং স্পেল ছিল ৪-০-১৩-৪; ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিংসটাউনে। মেহেদির সঙ্গে দুরন্ত বোলিং করেন রিশাদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শামীম হোসেন পাটোয়ারী। অবশ্য দুই পেসার শরিফুল ইসলাম ও তানজিম সাকিব ছিলেন খরুচে। শরিফুল ৪ ওভারে ৫০ ও তানজিম ২ ওভারে ২৩ রান দেন। স্বাগতিকদের ইনিংসের ১৩২ রানের মধ্যে দুজনেই দেন ৬ ওভারে ৭৩ রান।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশ খেলেছে একাদশে দুটি পরিবর্তন নিয়ে। শেখ মেহেদি ফেরেন মিরাজের জায়গায়। মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের জায়গায় খেলেন তানজিম সাকিব। দুই পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নেমে টাইগার অধিনায়ক লিটন ফের টস হারেন। শ্রীলঙ্কা সিরিজে এক ম্যাচেও টস জিতেননি তিনি। টসভাগ্য ভালো নয় টাইগার অধিনায়কের। উইকেটরক্ষক ব্যাটারের হাতে আগামী টি-২০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত নেতৃত্বের ব্যাটন তুলে দেয় বিসিবি। আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পাওয়ার পর টানা ৯ ম্যাচে টস হারেন লিটন। শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগে পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে সব ম্যাচে টস হেরেছিলেন তিনি।
প্রেমাদাসা বরাবরই বাংলাদেশের পয়মন্ত ভেন্যু কলম্বোর এই স্টেডিয়ামে ৪ ম্যাচ জিতেছে টাইগাররা। দুটি জয় আবার স্মরণীয়। ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফির এক ম্যাচে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ছক্কা মেরে অবিশ্বাস্য একটি ম্যাচ জিতিয়েছিলেন। ওই টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ রান তাড়া (২১৪) করে ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। যা সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা: ১৩২/৭, ২০ ওভার (নিসাঙ্কা ৪৬, কামিন্দু মেন্ডিস ২১, শানাকা ৩৫। শরিফুল ৪-০-৫০-১, মেহেদি ৪-১-১১-৪, মুস্তাফিজ ৪-০-১৭-১, তানজিম ২-০-২৩-০, শামীম ২-০-১০-১, রিশাদ ৪-০-২০-০)
বাংলাদেশ: ১৩৩/২, ১৬.৩ ওভার (পারভেজ ০, তানজিদ ৭৩*, লিটন ৩২, হৃদয় ২৭*; থুসারা ৩-০-২৫-১, বিনুরা ২-০-১১-০, থিকশানা ৩.৩-০-৩০-০, আসালাঙ্কা ১-০-১৬-০, ভ্যান্ডারসে ৪-০-২৯-০, কামিন্দু ৩-০-২১-১)
ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী