ক্রীড়াঙ্গনে আদম ব্যবসার অভিযোগ নতুন নয়। বিভিন্ন ফেডারেশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। মাঝে তা কমে গেলেও এখন আবার নতুন করে আদম ব্যবসার কথা শোনা যাচ্ছে। ভুয়া খেলোয়াড় সাজিয়ে বিদেশে ছোটখাটো টুর্নামেন্টে দলও নাকি পাঠানো হচ্ছে। খুব পরিচিত নয়, এমন ফেডারেশনগুলো ঘিরেই যত অভিযোগ। ক্রিকেট, ফুটবল বা অলিম্পিক সংস্থা ছাড়া বাকি ফেডারেশন নিয়ন্ত্রণ করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। দেশীয় ক্রীড়ার অভিভাবক সংস্থা তারাই। দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো ফেডারেশন গজিয়েছে। এতগুলো নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কষ্টের। তাই বেশ কিছু ফেডারেশন ফ্রি স্টাইলে তাদের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। চলছে অবৈধ কীর্তিকলাপ। অতীতে কুস্তি, ভারোত্তোলন, বক্সিং, জুডো ছাড়াও বেশ কিছু ফেডারেশনের বিরুদ্ধে আদম ব্যবসার অভিযোগ উঠেছিল। যার প্রমাণসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল। এখন আবার সুযোগ বুঝে অবৈধ অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন কর্মকর্তারা।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নির্বাচিত কমিটি ভেঙে দিয়ে অ্যাডহকের মাধ্যমে ফেডারেশনের নতুন কমিটি গঠন হয়। লক্ষ্য ছিল একটাই- দেশের খেলাধুলা যেন স্বচ্ছ ও দক্ষ লোকের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বাস্তবে কিছু ফেডারেশনে গতি ফিরলেও বাকিগুলোর অবস্থা যাচ্ছেতাই। এত খারাপ যে, অতীতকেও হার মানায়। তাই প্রশ্ন উঠেছে, ফেডারেশনের কমিটি ভেঙে লাভ হলো কী? লাভ যে একেবারে হয়নি তাও বলা যাবে না। কেউ কেউ তো চেয়ারে বসে পকেট ভারী করছেন। ঘরোয়া আসরের দিকে তাদের নজরই নেই। ঘরোয়া যেসব প্রতিযোগিতা হচ্ছে তা একেবারে দায়সারা। চোখ পড়ে আছে বিদেশের দিকে। নিজেরাই চিঠি পাঠিয়ে আনছেন আমন্ত্রণপত্র। বড় বা পরিচিত কোনো টুর্নামেন্টে নয়, বিদেশে পাড়ামহল্লার প্রতিযোগিতায় নাকি দল পাঠানোর হিড়িক পড়ে গেছে গোপনে। খেলোয়াড়, কোচ, ট্রেনার, ফিজিও বা ভুয়া কর্মকর্তা সাজিয়ে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে কোনো কোনো ফেডারেশন দলও পাঠাচ্ছে। কারা ফিরছে বা ফিরছে না তার কোনো খবর নেই।
অতীতে কয়েকজন পরিচিত খেলোয়াড়ের সঙ্গে ২-৩ জন করে আদম পাঠাত। এখন নাকি শুধুই আদমে ভরপুর। বিদেশে দল যাচ্ছে তা নাকি নির্বাহী কমিটির অনেকেই জানেন না। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক আর ২-৩ জন কর্মকর্তা মিলে এ কাজ করছেন। অভিযোগ আছে, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এমনকি ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের হাত করে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড চলছে।
এ ব্যাপারে ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে প্রসঙ্গটি হেসে উড়িয়ে দেন। বলেন, দূর এখন তো মানুষ অহরহ ইউরোপ-আমেরিকা যাচ্ছে। এখানে আবার ফেডারেশনের প্রয়োজন পড়বে কেন? কথাটি হয়তো ঠিক। কিন্তু জাল চ্যাম্পিয়ন বা জাতীয় দলের খেলোয়াড় বানিয়ে কেউ কি যাচ্ছেন না। যতই সংস্কার হোক ক্রীড়া পরিষদে এখন কি সুবিধাবাদী কর্মকর্তারা নেই। এ নিশ্চয়তা কি কেউ দিতে পারবেন? কিছুদিন আগে তায়কোয়ান্দো বর্তমান কমিটির ২-৩ জনের বিরুদ্ধে আদম পাচারের অভিযোগ তুলেছেন তাদেরই সাবেক কর্মকর্তারা। তা সত্য না মিথ্যা তা কি কেউ তদন্ত করেছেন। আদম পাচারের অভিযোগ ক্রীড়াঙ্গনের সবারই জানা। ক্রীড়া পরিষদ জানে না?