বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ১০০ টেস্ট খেলার বিরল ক্লাবের সদস্য। শততম টেস্ট খেলেই থেমে থাকেননি, সেঞ্চুরি করেছেন। হাফ সেঞ্চুরিও করেছেন দ্বিতীয় ইনিংসে। শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করা ক্রিকেটারের সংখ্যা মাত্র ১১। সেই বিরল একাদশের একজন মুশফিক। শততম টেস্ট এবং সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরির জন্য মিরপুরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টটিকে মুশফিকের টেস্ট বললে বাড়তি কিছু বলা হবে না। সেই টেস্টটি আবার বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামেরও মাইলস্টোন টেস্ট। আইরিশদের দ্বিতীয় ইনিংসে গতকাল ৩ উইকেট নিয়ে নতুন একটি রেকর্ড গড়েছেন বাঁ হাতি স্পিনার। একই সঙ্গে আরও একটি রেকর্ডের দ্বারপ্রান্তে এখন। তিন উইকেট নিয়ে সাকিব আল হাসানকে পেছনে ফেলে তাইজুল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। টেস্টের আজ পঞ্চম ও শেষ দিন। একটি উইকেট পেলেই ২৫০ উইকেটের ক্লাবের সদস্য হবেন। সাকিবের উইকেট ৭১ টেস্টে ২৪৬টি। তাইজুলের উইকেট ৫৭ টেস্টে ২৪৯টি।
২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিংসটাউনে তাইজুলের অভিষেক। সেই শুরু। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি। যদিও সাকিবের ছায়াসঙ্গী হিসেবেই খেলেছেন অধিকাংশ সময়। গত দেড়-দুই বছর ধরে তাইজুল এখন টাইগারদের মূল স্পিনার। যদিও দলে মেহেদি হাসান মিরাজের মতো আরও একজন ম্যাচ জেতানো স্পিনার রয়েছেন। তারপরও দলের সেরা স্পিনার তাইজুল। তার পারফরম্যান্সই স্পষ্ট। এবার সিরিজ শুরু করেছিলেন ৫৫ টেস্টে ২৩৭ উইকেট নিয়ে। সাকিবকে টপকাতে দরকার ছিল ১০ উইকেট। সিলেটে ইনিংস ও ৪৭ রানে জয়ী টেস্টে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। মিরপুরে প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে স্পর্শ করেন সাকিবকে। গতকাল আইরিশদের ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে অ্যান্ডি বালবার্নিকে বোল্ড করে টপকে যান সাকিবকে। দিন শেষ করেন পল স্টার্লিং ও স্টিফেন দেহানিকে আউট করে। এখন তাইজুলের উইকেট ২৪৯টি। বাংলাদেশের প্রথম স্পিনার হিসেবে ২৫০ উইকেট ক্লাবের সদস্য হতে তাইজুলের দরকার মাত্র এক উইকেট। আজ এক উইকেট নিলেই ইতিহাস। মুশফিকের শততম টেস্টে দেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ও ২৫০ উইকেটের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থেকেও আলোচনায় নেই তাইজুল। এটাকে দুর্ভাগ্যজনক বলেন বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ মোহাম্মদ আশরাফুল, ‘হ্যাঁ, এটা দুর্ভাগ্যজনক। ক্রিকেটটা ব্যাটসম্যানদেরই আসলে বেশি ফেভার করে। তাইজুলের দুর্ভাগ্য। ও যেভাবে আসলে পারফর্ম করে যাচ্ছে, তাতে বাড়তি আলোচনায় থাকা উচিত ছিল। ওর প্রত্যেকটা টেস্ট আপনি যদি খেয়াল করেন, দেখবেন যে, সাকিব থাকাকালীন সে পারফর্ম করেছে। সাকিব চলে যাওয়ার পর এখন সে লিডিং রোলে আছে। অবশ্যই আমাদের একটা মিটিং হয়। প্রত্যেক খেলার শেষে এরকম অ্যাচিভমেন্ট, যেমন মাহামুদুল জয় ১০০০ রান করেছেন টেস্টে। অবশ্যই এমন কিছু একটা থাকবেই। এটা ঠিক বোলারদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’ ফোকাস কম পেলেও সাকিবকে টপকে দেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হওয়ার পর মুশফিক কোলে তুলে অভিনন্দন জানান তাইজুলকে।
সাকিবকে টপকে যাওয়ায় তাইজুল এখন দেশের এক নম্বর বোলার। দলের ব্যাটিং কোচ হলেও বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুলকে অভিনন্দন জানাতে কার্পণ্য করেননি, ‘অভিনন্দন তাইজুলকে। তার ২৪৯ উইকেট হয়েছে। সাকিবের ২৪৬ ছিল। তৃতীয় বোলার হিসেবে মিরাজ রয়েছে, তার উইকেট ২০৯টি। এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তাইজুল ও মিরাজের মধ্যে। ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আরও ১৮টি টেস্ট খেলবে। আশা করছি তারা ভালো করবে। এশিয়ায় টেস্ট হলে তাইজুলের গুরুত্ব বেড়ে যায়।’ মোহাম্মদ রফিক ও সাকিবের সঙ্গে তাইজুলের তুলনায় আশরাফুল বলেন, ‘তিনজনই ভালো স্পিনার। রফিক ভাইয়ের সময় সে সেরা ছিল। সাকিবের সময় সাকিব। এখন তাইজুল সেরা। তবে সাকিবের তুলনায় রফিক ভাই ও তাইজুল বেশি পরিশ্রমী। সেজন্য আমার কাছে রফিক ভাইয়ের সঙ্গে তাইজুলের মিল খুঁজে পাই।’
তাইজুল শুধুই টেস্ট খেলছেন। বাংলাদেশের মূল স্পিনার। এ বছর ৬ টেস্টে তার উইকেট সংখ্যা ৩২টি। অস্ট্র্রেলিয়ান স্পিনার নাথান লিওনের উইকেট ৩০টি। একসময় বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে খেলেছেন তাইজুল। হ্যাটট্রিকও রয়েছে। টি-২০ খেলেছেন। এখন খেলছেন টেস্ট স্পেশালিস্ট বোলার হিসেবে।