প্রায় ১৫ হাজার দর্শকদের পুরোটাই নিজেদের, চেনা পরিবেশ, চেনা মাঠ আর ম্যাচ জয়ী হলেই ৩০ লাখ টাকার হাতছানি। কিন্তু তবু সিলেটে হারের বৃত্ত থেকে বেরুতে পারেনি বাংলাদেশ। গত বছরের আগস্টে নেপালের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচে হারের পর গতকাল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে মালয়েশিয়ার কাছে ফের হেরেছে বাংলাদেশ। ৫১ মিনিটে মালয়েশিয়ান ফরোয়ার্ড মো. সেজওয়ানের করা একমাত্র গোলেই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে তারা। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বিমর্ষ চিত্তে মামুনুল-এমিলিদের কোচ ক্রুইফ ব্যর্থতার দায়ভার নিজের ঘাড়ে নিয়ে খেলোয়াড়দের মানসিক চাপের কাছে নতি স্বীকারের কথা বলে যান। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার কোচ রাজিপ ইসমাইল জয়ের কৃতিত্ব পুরোটাই দিলেন খেলোয়াড়দের।
সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে বিকাল ৫টায় ম্যাচ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই গ্যালারিতে আসতে থাকে দর্শক স্রোত। ৫টা বাজার অনেক আগেই পূর্ণ হয়ে যায় পুরো গ্যালারি। প্রায় ১৫ হাজার দর্শকের গগনবিদারী ‘বাংলাদেশ-বাংলাদেশ’ ধ্বনিতে বল গড়ায় মাঠে। ম্যাচের ৫ মিনিটে বাংলাদেশের হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাসের বাড়িয়ে দেওয়া পাসে মালয়েশিয়ার গোলপোস্টের সামনে হেড করতে ব্যর্থ হন সুহেল রানা। ৭ মিনিটের সময় পাল্টা আক্রমণ চালায় মালয়েশিয়া। তবে ডি বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শটটি বাংলাদেশের গোলপোস্টে লেগে ফিরে আসে। ১০ মিনিটের সময় আবারও সুযোগ পায় বাংলাদেশ। জাহিদ হোসেনের বাড়িয়ে দেওয়া বলে পায়ে লাগাতে ব্যর্থ হন জাহিদ হাসান এমেলি। ম্যাচের ১৬ মিনিটের সময় ডি বক্সের বাইরে অবৈধভাবে বাধা দিতে গিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন বাংলাদেশের আতিকুর রহমান মিশু। ফ্রি কিক পায় মালয়েশিয়া। তবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকায় এবারও বাংলাদেশের গোলপোস্টে লেগে বল ফিরে আসে। ম্যাচের ১৯ মিনিটে মালয়েশিয়ার শাহরুল আজওয়ারীকে অবৈধভাবে বাধা দিতে গিয়ে ফাউল করেন ডিফেন্ডার রায়হান হাসান। ফলে আরেকটি হলুদ কার্ড জুটে বাংলাদেশের কপালে। ম্যাচের ২২ মিনিটের সময় আবারও আক্রমণে উঠে বাংলাদেশ। ফরোয়ার্ড জাহিদ হোসেনের বাড়িয়ে দেওয়া বলে পা লাগাতে আবারও ব্যর্থ হন এমেলি। ২৫ মিনিটে মিস করার ‘হ্যাটট্রিক’ করেন এমিলি! ডি বক্সের মধ্যে জাহিদের বাড়িয়ে দেওয়া বল বারের উপর দিয়ে মারেন তিনি। ম্যাচের ৪৪ মিনিটে ফের বাংলাদেশের সুযোগ এলে এবার অফসাইডের কবলে পড়তে হয়। বিরতিতে যাওয়ার আগে এই ছিল বাংলাদেশের আক্রমণ। তবে দৈবপাকে প্রথমার্ধে মালয়েশিয়ার তিন তিনটি শট বাংলাদেশের গোলবারে লেগে ফিরে আসে। গোলশূন্যভাবে শেষ হওয়া প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হতে না হতেই আক্রমণে বাংলাদেশের রক্ষণভাগকে কাঁপিয়ে দেন মালয়েশিয়ান ফরোয়ার্ডরা। ফলও পেয়ে যান তারা। ম্যাচের ৫১ মিনিটে মো. সেজওয়ানের বাঁ পায়ের দুর্দান্ত এক শটে বল খুঁজে নেয় বাংলাদেশের জাল। গোল করা নয়, আক্রমণকে যদি সাফল্য হিসেবে ধরা হয়, তবে এরপরের সময়টুকু পুরোটাই ছিল বাংলাদেশের। মুহুর্মুহু আক্রমণে মালয়েশিয়ার ডিফেন্সকে ব্যতিব্যস্ত রাখলেও কাক্সিক্ষত সেই গোলের দেখা আর পায়নি বাংলাদেশ। মামুনুল-জাহিদরা পরপর ৩ বার আক্রমণে উঠেও ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতায় মালয়েশিয়ার জাল খুঁজে পায়নি বাংলাদেশ। গোলের জন্য ৬৫ মিনিটে সোহেল রানার বদলে ওয়াহেদ আহমদ এবং ৮০ মিনিটে ইয়ামিনের বদলে শাখাওয়াত রনিকে মাঠে নামিয়েও কাজ হয়নি। তবে ৮১ মিনিটে জাহিদের বাড়িয়ে দেওয়া বলে রনি পা ছোঁয়ালে গোলপোস্ট থেকে বল ফিরে আসে। ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে দু’দুটি কর্নার পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি মামুনুলরা। খেলার শেষের দিকে হলুদ কার্ড পান মালয়েশিয়ার আরিফ ফারহান।