ঘড়ির কাটায় বিকাল ৫টা। সাভার পৌরসভার অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ তখন লোকে লোকারণ্য। মাঠে জার্সি গায়ে ২২ জন হিজড়া (তৃতীয় লিঙ্গ)। উৎসুক দর্শকের করতালিতে পুরো এলাকা মুখরিত। ভিক্ষাবৃত্তি ও চাঁদাবাজি ছেড়ে শনিবার বিকেলে প্রীতি ফুটবল উৎসবে অংশ নেয় অবহেলিত হিজড়াদের দুটি ফুটবল দল।
আশুলিয়া হিজড়া স্পোর্টিং ক্লাব ও রাজধানীর সদরঘাট হিজড়া স্পোর্টিং ক্লাব নামের দুটি হিজড়া ফুটবল দল এই উৎসবে অংশ নেয়। সমাজের মূলধারায় হিজড়াদের অংশগ্রহণ ও তাদের গ্রহনযোগ্য করে তুলতে এই প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করে পিপলস অর্গানাইজেশন অব ওআরবি ল্যান্ড (পুল) নামের একটি বেসরকারি সংস্থা।
বিকেল ৫ টায় অধর চন্দ্র বিদ্যালয় মাঠে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই ফুটবল উৎসবের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সাংসদ ডা. এনামুর রহমান। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধন শেষে সাংসদ এনামুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান সরকার সমাজের অবহেলিত ও ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে হিজড়াদের দেশের তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও লোক সমাজে হিজড়া সম্প্রদায় এখনো অবহেলিত। এজন্য সমাজের প্রতিটি মানুষের হিজরা সম্প্রদায়ের কল্যাণে এগিয়ে আসা উচিত।’
উৎসবের আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান পিপলস অর্গানাইজেশন অব ওআরবি ল্যান্ড (পুল)-এর নির্বাহী পরিচালক সুমনা সামাদ বলেন, 'বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে হিজড়া সম্প্রদায় সাধারণ মানুষের চেয়ে ভিন্ন নয়। কিন্তু তারপরও সমাজে তারা অবহেলিত। এই অবহেলা তাদেরকে ভিক্ষাবৃত্তি ও চাঁদাবাজিতে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যদি এ সম্প্রদায় জন্মের পর অবহেলার শিকার না হয়ে সাধারণ মানুষের মতো বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়, তাহলে তারাও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে পারবে। এই ফুটবল উৎসব হিজড়াদের প্রতি সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস।'
প্রীতি ম্যাচটি উপলক্ষে সাভার পৌর এলাকায় দিনভর মাইক দিয়ে প্রচারণা চালানো হয়। বিকেলে ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই মাঠের চারপাশে জায়গা করে নেন ফুটবলপ্রেমীরা। ম্যাচের পুরো সময় জুড়েই হিজরাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন দর্শকরা।
তবে পুরো ম্যাচে দুটি দলের একটিও কোনো গোলের দেখা পায়নি। তাই খেলা শেষে দুই দলের কাউকেই হতাশ হতে দেখা যায়নি। দুই দলের হাতেই পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি।
অনুভূতি জানতে চাইলে আশুলিয়া হিজড়া স্পোর্টিং ক্লাবের অধিনায়ক কনা হিজড়া বলেন, 'আজ দর্শকদের ভালোবাসা আমাদের মুগ্ধ করেছে। আমরা সমাজের অন্যদের মতোই বেঁচে থাকি, সেটা সবাই চায়। তবে আমাদের দিক নির্দেশনার অভাব রয়েছে। আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে হিজড়ায় রুপান্তরিত হইনি। চাঁদাবাজি ও ভিক্ষাবৃত্তি করার জন্যও হিজড়ার বেশ ধরিনি। হিজড়াদের সৃষ্টিকর্তাই সৃষ্টি করেছেন। আমরাও সাধারণ মানুষের মতো বেঁচে থাকতে চাই। সে জন্য সুযোগ চাই।'
বিডি-প্রতিদিন/২৯ মার্চ ২০১৫/ এস আহমেদ