আইপিএলে স্পট ফিক্সিং কেলেংকারির হোতা শ্রীনিবাসন নিজ দেশের বোর্ড থেকে বিতর্কিত হয়ে এবার কলঙ্কের সাক্ষর রাখলেন আইসিসিতেও। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আইসিসি সভাপতি মুস্তফা কামালকে বাদ দিয়ে চ্যাম্পিয়নদের হাতে নিজে বিশ্বকাপ ট্রফি তুলে দিয়ে ফের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান নিলেন বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির চেয়ারম্যান শ্রীনি। বারবার যিনি নিজের গায়ে কলংকের দাগ মেখেছেন, তার সর্বশেষ নজির স্থাপন করলেন ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে। আর তার এ দাদাগিরির সমালোচনায় মুখর হয়েছে খোদ ভারতেরই বিভিন্ন গণমাধ্যম। তারা তাদের বিভিন্ন প্রতিবেদনে শ্রীনিবাসনকে শব্দধোলাই করেছে।
মেলবোর্ন গ্যালারিতে শ্রীনিবাসনকে দর্শকদের বিদ্রুপ আচরণও ফলাও করে প্রকাশ করেছে তারা। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের (এমসিজি) গ্যালারি থেকে নাকি শ্রীনিকে দেওয়া হয়েছে দুয়ো! এ প্রসঙ্গে ‘এবেলা’ লিখেছে, 'ক্রিকেট প্রশাসক শ্রীনিকে জনতার ধিক্কার হজম করতে হলো। আইপিএল স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারির পর বারবার বিতর্কে জড়িয়েছে তার নাম। রবিবার মেলবোর্নে তাকে দেখা মাত্রই গ্যালারি থেকে ভেসে এল তীব্র বিদ্রুপ।'
এ ঘটনাকে তুলনামূলক বেশি গুরুত্ব দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় পত্রিকা 'আনন্দবাজার পত্রিকা'। পত্রিকাটি 'ট্রফি দিতে না পেরে উত্তেজিত আইসিসি প্রেসিডেন্ট ঢাকা ফিরে মামলা করতে পারেন' শীর্ষক খবরে লিখেছে, 'নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন বিশ্বজয়ী অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের হাতে ওয়ার্ল্ড কাপ তুলে দেওয়ার সময় পর্যন্ত তিনি (কামাল) অবশ্য আর অপেক্ষা করেননি। অপমানে আগেই বেরিয়ে যান। জানা হলো না গোটা এমসিজি যখন শ্রীনিবাসনের নাম ঘোষণা হতেই বিদ্রুপে ফেটে পড়ল, তখন আইসিসি প্রেসিডেন্ট কোথায় ছিলেন? বাংলাদেশ ক্রিকেটমহল তাদের দেশের আইসিসি প্রেসিডেন্টকে পুরস্কার বিতরণ থেকে কার্যত সাসপেন্ড করায় অত্যন্ত উত্তেজিত। কারণ আইসিসির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিশ্বকাপ তুলে দেওয়ার কথা কামালের। আইসিসি প্রেসিডেন্টের।'
'আনন্দবাজার পত্রিকা' আরও লিখেছে, 'শনিবার রাতে আইসিসির জনা কয়েক সদস্যকে নিয়ে বৈঠক করেন শ্রীনিবাসন। সেখানেই কামালকে বলে দেন যে, আইসিসি’র কোড অব কন্ডাক্ট ভাঙার অভিযোগে আপনাকে আমরা ট্রফিটা দিতে দেব না। কামাল অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন, মিস্টার শ্রীনিবাসন, আজকের দিনে আইসিসি প্রেসিডেন্ট কে? শ্রীনি বলেন, আপনি। কালকে আইসিসি প্রেসিডেন্ট কে থাকবে? শ্রীনি বলেন, আপনি। তাই যদি হয় তাহলে আমি বিশ্বকাপ তুলে দেব না কেন? শ্রীনি তখন বলেন, উত্তরটা আপনাকে আগেই দেওয়া আছে।' পত্রিকাটি মুস্তফা কামালের পূর্ণাঙ্গ বক্তব্যও প্রকাশ করেছে। সেখানে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, 'ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করিনি, আইসিসির বিরুদ্ধে করেছিলাম।'
'এই সময়' পত্রিকা লিখেছে, 'ভারতীয় বোর্ডে তার একাধিপত্য ধাক্কা খেতে পারে, কিন্তু আইসিসিতে যে তিনিই সম্রাট, এমসিজিতে তা দেখিয়ে দিলেন আইসিসি চেয়ারম্যান শ্রীনিবাসন।'
এবিপি নিউজ লিখেছে, 'তার (কামালের) মন্তব্যের জেরেই প্রকাশ্যে আসে আইসিসির ভিতরে অন্তর্দ্বন্দ্ব। নজিরবিহীন এই ঘটনার পর ফের প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা, ভারতীয় বোর্ডের পর সবার অলক্ষ্যে এবার কি আইসিসির রিমোট কন্ট্রোলও পকেটে পুরে ফেললেন নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন?'
এদিকে এই পরিস্থিতিতে আগামী জুনে ভারত ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে আনন্দ বাজার পত্রিকা। রের কথা রয়েছে। পত্রিকাটি এক সংবাদে লিখেছে, 'ভারতের বাংলাদেশ সফর করার কথা আগামী জুনে। কিন্তু দু’দেশের ক্রিকেট প্রশাসনিক সম্পর্ক যেমন তিক্ততার স্তরে পৌঁছেছে, তাতে সফরটা হবে কি না এই মুহূর্তে ঘোরতর অনিশ্চিত।'
এছাড়া ইংরেজি টেলিগ্রাফ, এনডিটিভিসহ প্রায় অধিকাংশ ভারতীয় গণমাধ্যম বেশ গুরুত্ব দিয়ে সংবাদটি প্রচার করেছে। পুরস্কার বিতরণীতে ঘটে যাওয়া লজ্জাজনক ঘটনাটির পুঙ্খানুপুঙ্খ তুলে ধরেছে। একইসঙ্গে আইপিএল ফিক্সিংয়ে তাকে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের কাছে অভিযুক্ত করার বিষয়টি সবিস্তারে বর্ণনা করেছে প্রভাবশালী এ ইংরেজি দৈনিকটি।
এ প্রসঙ্গে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা আইসিসি প্রেসিডেন্টের বক্তব্য হলো- 'আমি আইসিসিতে থাকব কি থাকব না তা দেশে ফিরে ঠিক হবে। আমার আইনি লোকজনের সঙ্গে কথা বলে মামলা করব। এটা পরিষ্কারভাবে অবমাননা।' ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়ে মন্তব্য এবং শ্রীনি’র সঙ্গে এই ঝামেলার ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের ক্রিকেট সম্পর্কে ফাটল ধরবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'ভারতের যার কথা বলছি তিনি ভারতেই সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি। এমনিতেই ভারতের ক্রিকেটের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে।'
বিডি-প্রতিদিন/৩১ মার্চ ২০১৫/ এস আহমেদ